
ছবি: জনকণ্ঠ
একদিকে পদ্মা নদীর ভাঙন ঠেকাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ করছে সরকার, অন্যদিকে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাঁচিকাটা এলাকায় পদ্মা নদীতে বালুমহাল ঘোষণা করে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
সম্প্রতি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায় পদ্মা নদীর ভাঙন পরিদর্শনে এসে নদী থেকে বালু উত্তোলন না করার বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সেতু উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির।
তিনি উল্লেখ করেন, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করা হলে নদীর রূপ ও গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দিতে পারে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান বলেন, “আমরা বলেছি, এখানে কিছু নিয়মকানুন আছে। আমরা একেবারে ক্লিয়ারেন্স দিইনি। বালু উত্তোলনের আগে হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে উত্তোলন করতে হবে, না হলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হতে পারে।”
জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর মার্চ মাসে ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাঁচিকাটা ইউনিয়নের বাঘাইয়া মৌজায় ১৫ একর এলাকায় বালুমহাল ঘোষণা করে ইজারা দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে স্থানীয়রা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা এবং স্থানীয় প্রতিবাদের মুখে জেলা প্রশাসন ইজারা বাতিল করতে বাধ্য হয়।
এক বছর পর আবারও একই ইউনিয়নের ৭৭নং কাঁচিকাটা মৌজায় ২২.৬৩ একর নদীতে বালুমহাল ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন গত ২৭ মার্চ এ বিষয়ে তালিকাভুক্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন এবং একই দিন বিভাগীয় কমিশনারের কাছে অনুমতির চিঠি প্রেরণ করেন।
এই ঘোষণায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও নদী ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে পদ্মার তীরবর্তী কাঁচিকাটা এলাকায় শত শত মানুষ মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা দাদন মিয়া, মাঈনুদ্দিন আহম্মেদ, জান শরিফ, মোকলেছ, মিজান বকাউল, আছিয়া বেগম বলেন, “আমাদের চর রক্ষা করতে সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ করছে। অথচ পাশেই বালুমহাল ঘোষণা করলে সেই বাঁধও নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে তিন-চারবার দোকান সরিয়েছি। এবার বালু কাটা শুরু হলে দোকানপাট রক্ষা করা যাবে না।”
তারা অভিযোগ করেন, “ইজারায় যদি বৈধভাবে ১০টি বোট অনুমোদন পায়, বাস্তবে ১০০টি বোট বালু কাটবে। তাই আমরা সরকারের কাছে বালুমহাল বাতিলের জোর দাবি জানাই।”
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, পদ্মা নদী জাজিরা উপজেলার নাওডোবা হয়ে ভেদরগঞ্জের চরসেনসাস দিয়ে প্রবাহিত। দুই তীরে জেলার ৩ উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন অবস্থিত। গত ১০ বছরে নদী ভাঙনে অন্তত ৩০ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে গত পাঁচ বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে পাউবো।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, “বিভিন্ন দপ্তরের (পাউবো, পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য বিভাগ) প্রতিবেদন নিয়েই বালুমহাল প্রস্তাব করা হয়েছে। সবগুলো দপ্তর ইতিবাচক মতামত দিয়েছে। সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।”
শহীদ