
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মানেই শুধু পাঠ্যপুস্তক আর পরীক্ষার চাপ নয়, বরং এর প্রতিটি পরতে পরতে লুকিয়ে থাকে বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, ছোটখাটো আনন্দ, কিছু চিরন্তন স্মৃতি। আর এইসব অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দুতে যে স্থানটি সবচেয়ে বেশি জীবন্ত হয়ে ওঠে, তা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন। কখনো এক কাপ চায়ে ক্লান্তি ভেজে, আবার কখনো হাসির রোল তোলে সিঙ্গারার ভাগাভাগি। কারো জন্য এটি নিরব দর্শক, কারো জন্য আবার স্মৃতির আশ্রয়। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তৃষ্ণা তৃষা, মাহমুদুল হাসান মুন্না এবং মোঃ সিদরাতুল মুনতাহা রাকিন এই তিনজন শিক্ষার্থীর চোখে দেখা সেই ক্যান্টিনের গল্পগুলো নিয়েই এই নিবন্ধ, যেখানে প্রতিটি শব্দে মিশে আছে বন্ধুত্বের বন্ধন, কিছু হাসি-কান্না, আর সময়ের অমূল্য অনুভব।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী “তৃষ্ণা তৃষা” বলেন,
প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনে একটি বিশ্ববিদ্যালয় শুধু শিক্ষার কেন্দ্র নয়, বরং তা হয়ে ওঠে স্মৃতি, অনুভূতি, সম্পর্ক ও পরিচয়ের অন্যতম মাধ্যম। আমার জন্য, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ ) তেমনই এক জায়গা যেখানে আমি প্রতিদিন শেখার পাশাপাশি আবিষ্কার করি নিজেকে। আর এই আবিষ্কারের সঙ্গী হয় যে জায়গাটি, সেটি হল আমাদের প্রিয় ক্যান্টিন। বিশ্ববিদ্যালয় এবং ক্যান্টিন এই দুটি জায়গা মিলেই আমার ছাত্র জীবনের গল্প রচনা করেছে প্রতিদিন ।
ডিআইইউতে তে ভর্তি হওয়ার পর আমার জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। আধুনিক সুযোগ সুবিধা, গঠনমূলক শিক্ষা পদ্ধতি, আন্তরিক শিক্ষকবৃন্দ এবং প্রাণবন্ত ক্যাম্পাস বিশ্ববিদ্যালয় কে আমার কাছে ঘরের মতো করে তুলেছে। এখানে প্রতিদিন ক্লাসে গিয়ে শুধু পড়ালেখা নয়, বরং জীবনের নানা দিক সম্পর্কে শিখেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি সহ শিক্ষা কার্যক্রম সেমিনার ওয়ার্কশপ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো আমাকে তৈরি করেছে একটি সচেতন নাগরিক হিসেবে কিন্তু এইসব কিছুর মাঝখানে যে জায়গাটি আমাকে একটু স্বস্তি দেয় যেখানে আমি হাত ছেড়ে বাঁচি মনের কথা খুলে বলি সেটা হল আমাদের ক্যান্টিন ।
আমাদের ক্যান্টিনেটি হয়তো বড় কোন জায়গা নয়, কিন্তু এখানে জমে উঠে জীবনের সবচেয়ে বড় গল্পগুলো। ক্লাস শেষে বা ক্লাসের ফাঁকে এখানে আমরা সবাই মিলে বসি, কেউ আনে কৌতুক, কেউ অনেক সামরিক রাজনীতি, কেউ বা ব্যক্তিগত অনুভূতি ।
চায়ের কাপ হাতে কখনো আমরা হাসি, কখনো বিষন্ন হই, আবার কখনো তর্কে জড়িয়ে পড়ি। কিন্তু এইসব আড্ডা শেষ হয় হাসিমুখেই ।প্রতিটি আড্ডায় তৈরি হয় বন্ধুত্ব, অনুভূতি ও বোঝাপড়ার বন্ধন ।
আমার প্রিয় মুহূর্ত গুলোর মধ্য একটা ছিল যখন আমরা সবাই মিলে একটি বন্ধুর জন্মদিন ক্যান্টিনেই উদযাপন করেছিলাম কেক গান আর অফুরন্ত হাসিতে, সেদিন ক্যান্টিন যেন রঙে রঙিন হয়ে উঠেছিল।
আমার মতে, ক্যান্টিনে আড্ডা কেবল বিনোদনের নয় এটি শিক্ষা একটি বিকল্প ক্ষেত্র। এখানে সিনিয়ররা অনেক সময় পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে আলোচনা করে, কেউ কেউ কৌশল শেখায় কিভাবে প্রেজেন্টেশন ভালো করতে। হয় আমি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও পরামর্শ পেয়েছি এই আড্ডার মাধ্যমে, শুধু শ্রেণিকক্ষে পাওয়া সম্ভব ছিল না।
ডিআইইউ এর আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে ভিন্ন পটভূমির মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়। এখানে শুধু আমার বিভাগের বন্ধুরা নয়, অন্য বিভাগ বা ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও আলাপ হয়েছে, যেটা আমার চিন্তার জগতে আরো বিস্তৃত করেছে।
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আমার শিক্ষা, গঠনের স্থান আমার ক্যাম্পাস ক্যান্টিনের আড্ডা আমার অনুভূতির আশ্রয়। এই দুইয়ের মিলনেই আমার ছাত্র জীবন হয়ে উঠেছে পূর্ণাঙ্গ ও অর্থবহ। হয়তো একদিন বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে অন্য পথে হাঁটতে হবে কিন্তু ডিআইইউ এর ক্লাস রুম যেমন থাকবে স্মৃতির পাতায়, তেমনি ক্যান্টিনে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত থাকবে অমলিনভাবে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী “মাহমুদুল হাসান মুন্না” বলেন,
In our canteen, we do not count calories, we count memories. ভার্সিটির ক্যান্টিন মানে শুধু কিছু জলখাবার খাওয়ার স্থান নয়। এটি এক টুকরো আপন ভুবন, যেখানে প্রতিদিন জমে ওঠে ছোট-বড় গল্পের আসর, হাসির রোল, আর অনন্ত স্মৃতির অক্ষয় ভাণ্ডার।
পুরনো সাদা ভবনের নিচতলায় অবস্থিত আমাদের ক্যান্টিনটির বিশেষত্ব এর চারপাশের খোলামেলা পরিবেশ। চারদিকের মুক্ত বাতাস আর ক্যান্টিন ঘেঁষে থাকা ফুলবাগান যেন ক্যান্টিনের নরম সুরে এক সজীব ছোঁয়া যোগ করেছে। বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে এই ক্যান্টিনে বসে এক কাপ চা আর বন্ধুদের সাথে বৃষ্টি বিলাসের যে মায়াবী মেলবন্ধন গড়ে ওঠে, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আর ক্যান্টিনের গরম সিঙ্গারার টান—সে তো এক অনন্য স্বাদ ও আনন্দ! একসাথে ভাগাভাগি করে খাওয়া সিঙ্গারার মতো সহজ-সরল আনন্দগুলোই ক্যান্টিনের আড্ডাকে আরও মধুর করে তোলে।
এখানে সহপাঠীদের সাথে রাজনীতি, রাষ্ট্র, সমাজ ও সাম্প্রতিক নানা বিষয় নিয়ে চলে প্রাণবন্ত আলোচনা। বিশেষ করে পরীক্ষা বা ক্লাসের টপিকগুলো নিয়ে আমরা দলবেঁধে আলোচনা করি, একে অপরকে বুঝিয়ে দিই—যেন পড়াশোনার চাপটাও একধরনের আনন্দে রূপ নেয়। অনেক সময় ক্যান্টিনের একপাশে বসে চলে আমাদের ক্লাবের জরুরি মিটিং, নতুন কোনো আয়োজনের পরিকল্পনা, কিংবা কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়নের আলোচনা। ক্যান্টিনের এই পরিবেশ আমাদের মিলনস্থল, যেখানে স্বপ্ন, দায়িত্ব আর বন্ধুত্বের সুতোয় গাঁথা থাকে প্রতিটি মুহূর্ত।
প্রখ্যাত লেখক খলিল জেব্রানের কথায় বলা যায়, “Friendship is always a sweet responsibility, never an opportunity.” আমাদের ক্যান্টিনের আড্ডা সেই বন্ধুত্বেরই মিষ্টি দায়িত্ব, এটি কেবল সময় কাটানোর উপলক্ষ নয়। এটি আমাদের দিনশেষের আশ্রয়, ক্লান্তির অবলম্বন। প্রতিটি টেবিল-চেয়ার সাক্ষী থাকে আমাদের না বলা কথাগুলোর, আর প্রতিটি চায়ের কাপ বয়ে নিয়ে যায় নতুন কোনো গল্পের শুরু। এ কারণেই হয়তো ক্যান্টিনের আড্ডা একসময় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে মধুর অধ্যায় হয়ে থেকে যায় স্মৃতির মণিকোঠায়।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী “মোঃ সিদরাতুল মুনতাহা রাকিন” বলেন,
সেমিস্টার ফাইনাল শেষ। ১৫ দিনের অধিক সময় ধরে বাসায় দিন কাটাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনের আড্ডার কথা খুব মনে পড়ছে। তাই ভাবলাম কিছু কথা লিখে ফেলা যাক ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে অথচ ক্যান্টিনে আড্ডা দেয় নাই এরকম মানুষ বোধ হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না! যদি পাওয়া যায় তবে বিষয়টা অনেকটা এরকম হয়ে দাঁড়াবে যে "আমি বেঁচে আছি কিন্তু অক্সিজেন নিতে পারছি না,অথচ আমি মানুষ ! "
এই ক্যান্টিনের আড্ডাকে বর্ণনা করতে গেলে বোধ হয় কলমের কালিও ফুরিয়ে যাবে! সকল ক্লাস, ক্লাস টেস্ট, বা পরীক্ষা শেষ হয়ে যখন ক্যান্টিনে আড্ডা দিতে বসা যায় তখন মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদপিণ্ড বোধহয় এখানেই বিদ্যমান !
দেখা যায় হয়তোবা বন্ধু-বন্ধুরা আড্ডা দিচ্ছে বা বান্ধবী-বান্ধবী আড্ডা দিচ্ছে বা বন্ধু-বান্ধবীরা উভয় আড্ডা দিচ্ছে । যারা যেভাবে আড্ডা দিতে ভালোবাসে । অথবা দেখা যায় কোন এক কোণে প্রেমিক প্রেমিকারা আড্ডা দিচ্ছে! কখনো কখনো দেখা যায় হয়তোবা এরা সকলে মিলেই আড্ডা দিচ্ছে । কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে আড্ডাটা সবচেয়ে কম পাওয়া যায় তা হল যখন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক শিক্ষিকাগন এবং সকল বন্ধু-বান্ধরীরা এবং বড় ভাইয়াওআপুরা মিলে একসাথে আড্ডা দেওয়ার যে বিষয়টা । আড্ডা বা তার প্রতিশব্দ হিসেবে "কথোপকথন" শব্দটি ব্যবহার করলে খারাপ হয় না ! তখনকার সেই মুহূর্তটা মনে হয় এলবামে বন্দী করে রাখার মতো মুহূর্ত!
যেই মুহূর্তের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই । মনে হয় এই আড্ডার মুহূর্ত যেন অনন্তকাল সমুদ্রের ঢেউ এর মতো থেকে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনকে যা মনোমুগ্ধকর করে দিয়েছে তা হল এই ক্যান্টিনের আড্ডা ! আর তখন যদি ক্যান্টিনের আড্ডায় "তোমার বাড়ির রঙের মেলায় দেখেছিলাম বায়োস্কোপ, বায়োস্কোপের নেশায় আমায় ছাড়ে না ! এমন গান বাজানো যায় তবে তো আর কোন কথাই নেই । রবীন্দ্র সংগীত হলেও খুব একটা খারাপ হয় না । এইতো সেদিনই আমি লক্ষ্য করলাম কয়েকজন বড় হইয়া গিটার নিয়ে কত সুন্দর ভাবে গান গেয়ে চললেন । আমি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম অসম্ভব সুন্দর গান করেন তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের সবচেয়ে বেশি আবেগ অনুভূতি জড়ো করে এই ক্যান্টিনের আড্ডা! বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে আড্ডা ব্যতীত জীবন যেন হৃদয় ছাড়া মানব ! দুইটা সিঙ্গারা আর হাতে এক কাপ চায়ে ক্যান্টিনের আড্ডার জীবন সুন্দর ।
কিন্তু এরপরেও কিছু মানুষের সময়ের অভাব এবং কিছু অজুহাত থেকেই যায় এই ক্যান্টিনে আড্ডার জন্য । বুঝে উঠতে পারি না কেন! যদিও বা মাঝে মাঝে খুব কষ্ট হয় তাদের অনুপস্থিতি দেখে কিন্তু বলতে ইচ্ছা হয় না । এই তাদের টিউশনি এই তাদের প্রেমিক ফোন দিয়েছে, এই তাদের প্রেমিকা ফোন দিয়েছে, এই তাদের বাসা দূরে ! কত অজুহাত কতো মানুষের । কত কিছুই বুঝি কিন্তু তাদের বুঝতে দেই না । না বুঝতে দেয়া যাবে না ।
সব কষ্ট যদি সবাই বুঝে ফেলে তাহলে তো সমস্যা ! এই যে যেই সময়টা চলে যাচ্ছে তা আর কখনো ফেরত আসবে না ! তবুও সমরেশ মজুমদার স্যারের ভাষায় বলতে ইচ্ছে হয় "
আমি টাকা জমাচ্ছি। যেদিন অনেক টাকা হবে, সময় কেনার মতো টাকা, সেদিন কিছু সময় কিনে নেবো।
যারা প্রতি দিন, প্রতি মাস, প্রতি বছরে বলে যায়--'খুব ব্যস্ত একদম সময় পাইনা কাজের চাপে মনে থাকেনা'--তাদের সে কেনা সময় ধার দেব। সময় কেনা হয়ে গেলে, আমি আবার টাকা জমাবো।
এরপর কিনবো 'অজুহাত'।
পৃথিবীর সমস্ত অজুহাত কিনে জমা করবো।
সময়ের অভাবে, অজুহাতের কারণে, কেউ যেন আর প্রিয় মানুষদের ভুলে না যায় --তাই অফুরন্ত সময় আর শূন্য অজুহাতের এক পৃথিবী বানাবো ! "
ইংরেজিতে একটা কথা বলা হয় "The fact is you never realize what you have , until it's gone!"
রাকিন আরো বলেন, এইতো কিছুদিন আগে শেষ পরীক্ষার দিন আমি দেখি ক্যান্টিনের এক কোনায় এক অপরিচিত বড় ভাইয়া চা খাচ্ছেন এবং চোখে কিঞ্চিৎ পরিমাণ পানি! আনুমানিক চার-পাঁচ মিনিট ধরে আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে ছিলাম । ভাবছি যে, ক্যাম্পাসে এরকম দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না । কোন একজন ক্যান্টিনের কোনায় বসে চোখে জল নিয়ে চা খাচ্ছে ! ভাবলাম এত সুন্দর একটা মুহূর্ত ভাইয়াকে যে একটু বিরক্ত করি । আমার আবার মানুষকে বিরক্ত করতে খুব ভালো লাগে । আর তা যদি অপরিচিত মানুষ হয় তাহলে তার কোন কথাই নেই ।
ভাইয়ার সামনে গিয়েই সালাম দিয়ে বললাম ভাইয়া বসতে পারি? তিনি উত্তরে বললেন হ্যাঁ বসো অবশ্যই । কিছু বলবে? আমি উত্তরে বলেছিলাম "বেয়াদবি না নিলে একটা প্রশ্ন করতাম!" তিনি মুচকি হেসে বললেন "হ্যাঁ বলো । " "আমি বেশ কিছুক্ষণ ধরে দেখছিলাম আপনি চুপচাপ এক কোনায় বসে চা খাচ্ছেন এবং চোখে জল ছিল এখন কিভাবে যেন গায়েব হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না। একটু যদি এই বিষয়টা ব্যাখ্যা করতেন!"
তিনি মুচকি হেসে উত্তরে বললেন,
"আমি দশ বছর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছি! এখন চাকরি করছি। আজ একটি কাজে বিশ্ববিদ্যালয় এসেছিলাম। ভাবলাম এক কাপ চা খেয়ে যাই। তাই ক্যান্টিনের এক কোনায় বসে সবকিছু উপলব্ধি করছিলাম যে কত শিক্ষার্থী, কত বন্ধু ও বন্ধুত্ব একসাথে চলাফেরা করছে । আমরাও একসময় তোমাদের মত ছিলাম। আমাদেরও পাশে বন্ধু ছিল। কিন্তু আজ দেখো, সময়ের তাগিদে আমরা কিভাবে যেন হারিয়ে গেলাম । এখন যার যেভাবে যতটুকু সময় হয় ততটুকু সময়তেই দেখা হয় , কথা হয় । কিন্তু ক্যান্টিনে বসে আর একসাথে আড্ডা দেয়া হয় না । একথা গুলোই মনে করছিলাম । "
এ কথাগুলো বলে তিনি উঠে চলে গেলেন ! আমি বিস্ময়কর ভাবে তাঁর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তিনি আর তাঁর সম্পূর্ণ পরিচয় দিলেন না । আমি মনে মনে ভাবছিলাম ভাইয়ার আবেগ এখনো কাটে নি। যদিও বা কখনো কাটবেও না। আমার জুনিয়রের উদ্দেশ্যে বলবো,
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যতটুকু সময় পাবেন দয়া করে ক্যান্টিনে আড্ডা দিয়েন ! ক্যান্টিনে কাটানো মুহূর্তগুলো কখনোই ভুলতে পারবেন না ! সময় নিজ গতিতে এগিয়ে চলবে। এখন তো তথ্যপ্রযুক্তির যুগ অজস্র ছবি রাখিয়েন ফোনে । যখন ফোনে ওয়াইফাই বা ইন্টারনেট থাকবে না ,তখন গ্যালারির এই ছবিগুলো দেখবেন ।অসম্ভব সুন্দর ভূমিকা পালন করবে ! বিশ্বাস করেন !নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি ।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন মাত্র চার বছরের কিংবা পাঁচ বছরের কিন্তু এ কয়েক বছরে যে সকল সম্পর্ক গড়ে ওঠে তা সারাজীবনের । আমি তো এ কথাতেই বিশ্বাসী ! আপনাদের সকলের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ক্যান্টিনের আড্ডা মনোমুগ্ধকর হোক এ দোয়াই করি ! আপনারা যারা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হতে যাচ্ছেন, এবং ভর্তি হয়েছেন আপনাদের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা ।
আঁখি