
করোনা মহামারিতে দেশে লকডাউনের ফলে রাতুল ও শাওনের বাবার ব্যবসায় ক্ষতি হওয়ায় কিছুদিন পরেই তাদের বাবার ব্রেইন স্ট্রোক হয়। যার ফলে কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়ে যায় পরিবার। তখন দুই ভাই সিদ্ধান্ত নেয় পরিবারের উপার্জনে অবদান রাখতে নতুন কিছু শুরু করার। শৈশব থেকেই দুজনের শিল্পের প্রতি বিশেষ ভালোবাসা ছিল। তবে প্রচলিত চিত্রকলা খুব সাধারণ এবং বিক্রি করাও বেশ কঠিন। অনেক গবেষণা করার পর তারা পিক্সেল আর্ট সম্পর্কে জানতে পারে। এই শিল্পকর্ম সাধারণত কাঠের ব্লক ব্যবহার করে তৈরি করা হয়, যা দিয়ে যেকোনো দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা সম্ভব।
২০২১ সালের জুন মাসের দিকে রাতুল ও তার ভাই মাত্র দশ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। প্রথম দিকে তারা একটি ডিজাইন নিয়ে কাজ করে। ধীরে ধীরে তারা অর্ডার পেতে শুরু করে এবং সেখান থেকে অর্জিত অর্থ পুনরায় ব্যবসায় বিনিয়োগ করে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকলেও পড়াশোনার কারণে এই কাজটি অধিক সময় করতে পারতো না তারা। পরীক্ষা চলাকালীন তাদের কাজ বন্ধ থাকতো, যার ফলে বিরক্ত হতেন গ্রাহকরা। শুরুর দিকে তারা নিজেদের বেডরুমে কাজ করতো। কিন্তু পরে উপলব্ধি করে, ব্যবসা বড় করতে হলে কর্মী নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।
এরপর তারা একটি ছোট কারখানা চালু করে এবং সেখানে কয়েকজন মহিলা কর্মী নিয়োগ করে। শুরুতে কর্মীরা কাজ বুঝতে না পারায় কিছু সমস্যার সম্মুখীন হলেও কয়েক মাস পর তারা দক্ষ হয়ে ওঠে এবং নিখুঁতভাবে কাজ করতে শুরু করে। বর্তমানে তাদের শিল্পকর্ম বাংলাদেশ মিলিটারি মিউজিয়াম, ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্ট, ব্রুভানা গ্রুপসহ দেশের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংগ্রহে জায়গা করে নিয়েছে।
রাতুল তার ব্যবসার ধরণ ও প্রণালি উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, আমার ব্যবসাটি মূলত একটি আর্ট অ্যান্ড ক্রাফট ব্যবসা। প্রথমে আমরা থ্রি-ডি মডেল তৈরি করি। তারপর স’মিল থেকে সে অনুযায়ী কাঠের অতিরিক্ত টুকরোগুলো কেটে আনি। এরপর সেগুলো রং করি এবং প্লাইউডের ওপর বিভিন্ন ধরনের আকৃতি বসাই। এই আর্টগুলো দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা হয় যা দেখতে অনেকটা পেইন্টিংয়ের মতো। একে থ্রি-ডি ওয়াল আর্টও বলে। আমাদের ব্যবসার নাম হলো পিক্সেল স্টুডিও। এর কারণ হলো আমরা ছোট ছোট ব্লক দিয়ে যেকোনো দৃশ্য তুলে ধরি- ঠিক যেমনটি আসল পিক্সেল করে। আমাদের সাউন্ড ডিফিউজার নামে আরেকটি সেক্টর রয়েছে যেটি সাউন্ড ইকোকে এলিমিনেট করতে কাজ করে। ইউরোপে এই শিল্পধারা বেশি জনপ্রিয়। কিন্তু বাংলাদেশে শুধু আমরাই এটি তৈরি করি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ব্যাপারে রাতুল জানান, আমরা পিক্সেল স্টুডিওকে আরো বিস্তৃত করতে চাই এবং সেই সঙ্গে বাংলাদেশে এই ধরনের পিক্সেল আর্টের জনপ্রিয়তা বাড়াতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের তৈরি এই পিক্সেল আর্ট বাংলাদেশের প্রতিটি শিল্পপ্রেমীর দেওয়ালে শোভা পাবে। আমি চাই, আমাদের তৈরি এই শিল্পকর্ম প্রতিটি বাসা এবং অফিসের অঙ্গনকে সাজাক। এছাড়া নতুন কর্মী নিয়োগ, প্রযুক্তির সাহায্যে উৎপাদন প্রক্রিয়া আরও উন্নত করা এবং বহু দেশের বাজারে আমাদের পিক্সেল আর্ট পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া অনলাইন প্লাটফর্মে বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য একটি ওয়েবসাইট অথবা অ্যাপ তৈরির পরিকল্পনা করছি- যাতে আমাদের পণ্য সারা দেশে সহজেই পৌঁছাতে পারে।
প্যানেল