
শহুরে পরিবেশ থেকে বহুদূরে, বিচ্ছিন্ন, অবকাঠামো-বঞ্চিত এলাকা বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের বঙ্গলতলী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সিমান্তবর্তী গ্রাম জারুলছড়ি। জায়গাটি ঠিক সাজেক উপত্যকার পাদদেশে। শিক্ষার হার কম হওয়ায় এলাকার শিশু-কিশোরদের পড়ালেখায় উদ্বুদ্ধ করতে সেখানে একটি বৌদ্ধ বিহারকে ঘিরে গ্রামবাসী ও এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর আন্তরিক প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছে একটি পাঠাগার।
সেখানে পৌঁছে দেখলাম, জারুলছড়ি বন বিহারের মাটির মেঝেতে বসে কিছু শিশু-কিশোর নীরবে বই পড়ছে। কেউ বা আঁকছে মেঘের ছবি। অনেকে ব্যস্ত নিজেদের মধ্যে খোশ গল্পে। নেই কোনো উচ্চ কোলাহল, নেই প্রযুক্তির ঝলক। চারপাশে সবুজ বন, আর এক পাহাড়ি সমাজ। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে।
সেই বিহারে প্রধান রত্নবোধি ভান্তের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, প্রথমে তিনি মূলত নিজে পড়ার জন্য কিছু বই সংগ্রহ করতেন। পরে চিন্তা করলেন, পাশাপাশি এলাকার শিশু-কিশোরদের এ সুযোগ করে দিতে পারলে আরও ভালো হতো। যেহেতু আশপাশে সেরকম কোনো লাইব্রেরি নেই। সেই ভাবনা থেকেই নিজের জমানো কিছু অর্থ ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় বিহারের দেশনাঘরকে রূপ দেন ‘জ্ঞান বারেঙ’ নামে পাঠাগারে। যেখানে প্রতি শুক্রবারে বসে পাঠকদের পাঠচক্র। তিনি আরও বলেন, প্রথমদিকে শিশুরা পাঠাগারে তেমন আসত না, বই পড়া তো দূরের কথা। কিন্তু গ্রামবাসীদের আন্তরিক সহযোগিতায় আজ তারা নিয়মিত আসে, পড়ে, ভাগাভাগি করে এবং অন্যদেরও পড়তে শেখায়।
পাঠচক্রের একজন সদস্য রুমা চাকমা। তার সঙ্গে সাথে আলাপচারিতার সময় বলেন, ‘জ্ঞান বারেঙ’ নামের এই পাঠাগারটি সত্যি তাদের জ্ঞানের দুয়ার খুলে দিয়েছে। যেখানে তারা প্রতিনিয়ত শিখছে বিভিন্ন নতুন নতুন বিষয়। যা পাঠচক্রের প্রতিটি সদস্যকে দেখাচ্ছে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন। বর্তমানে ‘জ্ঞান বারেঙ’ পাঠাগারে রয়েছে ১৫০টিরও বেশি বই, যেখানে বাংলা, চাকমা ভাষা, ইতিহাস, বিজ্ঞান, ধর্ম, ও শিশুতোষ গল্পে পরিপূর্ণ। ভান্তে বলেন, প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৪০-৫০ জন শিশু-কিশোর অংশ নেয় পাঠচক্রে।
প্যানেল