ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

৫টি প্রমাণ থাকলেই আপনি জমির মালিক, দলিল না থাকলেও চলবে!

প্রকাশিত: ২০:১৮, ২১ জুন ২০২৫

৫টি প্রমাণ থাকলেই আপনি জমির মালিক, দলিল না থাকলেও চলবে!

ছবি: সংগৃহীত।

দলিল না থাকলেও আপনি জমির মালিক হতে পারেন—শুনে অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ, বাংলাদেশে জমির মালিকানা প্রমাণের জন্য দলিল ছাড়াও পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র বা প্রমাণ থাকলেই আইনি স্বীকৃতি পাওয়া সম্ভব। সুপ্রিম কোর্টের রায় ও বিদ্যমান ভূমি ব্যবস্থাপনার আলোকে এই সুযোগ এখন বাস্তব।

দলিল হারিয়ে গেলেও ভয় নেই
অনেক সময় দেখা যায় জমির দলিল হারিয়ে যায়, পুড়ে যায় বা শত্রুতাবশত নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি কখনো তা করা হয় পারিবারিক বিরোধের জের ধরে। এই অবস্থায় চিন্তার কিছু নেই—যদি আপনি নিচের ৫টি মূল প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেন, তাহলে আপনি আইনত জমির প্রকৃত মালিক বলে বিবেচিত হবেন।

✅ জমির মালিকানা দাবি করার জন্য ৫টি মূল প্রমাণ
১. খতিয়ান (CS, SA, RS, BS ইত্যাদি)
খতিয়ান হলো সরকার কর্তৃক পরিচালিত ভূমি জরিপের একটি নথি, যেখানে মালিকের নাম, জমির পরিমাণ, দাগ নম্বর, সীমানা, অবস্থান, খাজনার পরিমাণ প্রভৃতি তথ্য থাকে। এটি আপনার জমির ঐতিহাসিক মালিকানার প্রাথমিক প্রমাণ।

২. নামজারি/খারিজ (Mutation Record)
আপনি যদি ক্রয়সূত্রে বা উত্তরাধিকারসূত্রে জমি পান, তবে আপনাকে অবশ্যই জমি নিজের নামে নামজারি করতে হবে। এটি সরকারী খতিয়ানে আপনার নাম অন্তর্ভুক্ত করে। খতিয়ানের একাধিক মালিক থাকলে জমা খারিজের মাধ্যমে আলাদা আলাদা খতিয়ান তৈরি করা হয়।

৩. ভোগদখল প্রমাণ
আপনি কত বছর ধরে জমি ব্যবহার করছেন, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার বা আপনার পূর্বপুরুষের দখলে থাকা জমি আপনি নিয়মিত চাষ করছেন বা ঘরবাড়ি বানিয়ে বসবাস করছেন—এমন তথ্যই "ভোগদখল" হিসেবে গণ্য হয়। আইনে তিন ধরনের দখল বৈধ: প্রকৃত, গঠনমূলক এবং যৌথ দখল।

৪. খাজনা রশিদ (Tax Receipt)
আপনি নিয়মিত জমির খাজনা পরিশোধ করছেন কি না, তা একটি বড় প্রশ্ন। বর্তমানে অনলাইনেও খাজনা পরিশোধ সম্ভব এবং সেই রশিদ জমির ব্যবহারের প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।

৫. ডিসিআর (Duplicate Carbon Receipt)
এটি হলো দলিলভিত্তিক রেকর্ড পরিবর্তনের প্রমাণপত্র, যেখানে সরকার প্রদত্ত ফি দিয়ে আপনার নাম সরকারী খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়ার সাক্ষ্যপত্র থাকে। দলিল না থাকলেও নামজারির মাধ্যমে আপনি ডিসিআর পাবেন, যা আইনি মালিকানার বড় দলিল।

নাম না থাকলেও বাটোয়ারায় অধিকার থাকবে
জমি যদি বংশানুক্রমে ভোগ দখলে থাকে এবং পরিবারে কোনো বাটোয়ারা না হয়ে থাকে, তবে কারো একক নামে রেকর্ড থাকলেও সবাই উত্তরাধিকার অনুযায়ী ভাগ পাবেন। যেমন, মামারা বোনদের নাম বাদ দিয়ে নিজেদের নামে জমি রেকর্ড করালে সেটি একক মালিকানা প্রমাণ করে না—বাটোয়ারা মামলা করলেই সবাই আইন অনুযায়ী প্রাপ্য অংশ পাবেন।

অতিরিক্ত দলিল ও হলফনামা যেগুলো দরকার হতে পারে

  • জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন, পাসপোর্ট
  • নাম সংশোধনের হলফনামা
  • ধর্ম পরিবর্তনের হলফনামা
  • বিবাহ/তালাক সম্পর্কিত হলফনামা
  • কোড ম্যারেজ বা যৌথ বিবাহের হলফনামা
  • এছাড়া যেকোনো হলফনামা বা এফিডেভিট নিতে যোগাযোগ করতে পারেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা আইনজীবীর সঙ্গে।

আপনার কাছে দলিল না থাকলেও যদি এই পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও প্রমাণ থাকে—খতিয়ান, নামজারি, ভোগদখল, খাজনা রশিদ ও ডিসিআর—তাহলে আইন অনুযায়ী আপনি জমির বৈধ মালিক হিসেবে বিবেচিত হবেন।

তবে সব সময়ই মনে রাখতে হবে—ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে সঠিক আইনগত পরামর্শ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দলিল ছাড়াও জমির মালিকানা সংক্রান্ত বিষয়ে বিভ্রান্তি থাকলে ভূমি অফিস, আইনজীবী কিংবা স্থানীয় ভূমি সহকারী কমিশনারের (এসিএল) সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

নুসরাত

×