ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখবে এই ৮টি ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপায়

প্রকাশিত: ০১:১৯, ২২ জুন ২০২৫

রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখবে এই ৮টি ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপায়

ডায়াবেটিস বা প্রি-ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি। যদিও সঠিক চিকিৎসা ও ওষুধপ্রয়োগের গুরুত্ব অপরিসীম, তবে দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের সঙ্গে কিছু প্রাকৃতিক পদ্ধতি অনুসরণ করলেও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এমন কিছু ঘরোয়া উপায় আছে, যেগুলো আমাদের রান্নাঘরে থাকা সাধারণ উপাদান দিয়ে সহজেই অনুসরণ করা যায়। Healthline–এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে এমন ৮টি প্রাকৃতিক পদ্ধতির কথা, যা রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক হতে পারে।

১. সারা দিন শরীরকে সচল রাখুন

দিনভর নিয়মিতভাবে চলাফেরা করলে শরীরে ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বাড়ে এবং পেশিগুলো গ্লুকোজ গ্রহণে সক্ষম হয়। এটি রক্তে অতিরিক্ত শর্করার স্তরকে কমাতে সাহায্য করে। শুধু জিমে যাওয়াই নয়, বরং হাঁটাচলা, সিঁড়ি ভাঙা, হালকা কাজকর্ম এসব ছোট ছোট শারীরিক ক্রিয়াকলাপও গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

২. কার্বোহাইড্রেট গ্রহণে নিয়ন্ত্রণ আনুন

খাবারে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করলে রক্তে গ্লুকোজ দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। তাই শর্করা জাতীয় খাবার পরিমিত গ্রহণ করলে তা ধীরে হজম হয় এবং শরীরে শক্তি সুষমভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এই অভ্যাস রক্তে শর্করার ওঠানামা কমায় এবং সার্বিক স্বাস্থ্য উন্নত করে।

৩. খাদ্যে আঁশের পরিমাণ বাড়ান

আঁশ বা ফাইবার হজম প্রক্রিয়া ধীর করে, ফলে খাবার খাওয়ার পর রক্তে গ্লুকোজ দ্রুত বেড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। পাশাপাশি এটি হজমে সহায়তা করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও কার্যকর। শাকসবজি, ডাল, ফলমূল ও পূর্ণশস্যে রয়েছে উচ্চমাত্রার আঁশ।

৪. খাবারের পরিমাণে সংযম আনুন

একসঙ্গে বেশি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। তাই খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। ছোট ছোট ভাগে, সময় নিয়ে খেলে তা ধীরে হজম হয় এবং গ্লুকোজের শোষণও নিয়ন্ত্রিত হয়। এই অভ্যাস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি ওজন হ্রাসেও সাহায্য করে।

৫. কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার বেছে নিন

যেসব খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, সেগুলো ধীরে হজম হয় এবং ধীরে ধীরে গ্লুকোজ নিঃসরণ করে। ফলে হঠাৎ করে রক্তে শর্করা বাড়ে না। মসুর ডাল, ওটস, মিষ্টি আলু, ছোলা ইত্যাদি এই শ্রেণির মধ্যে পড়ে।

৬. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন

চাপ বা স্ট্রেস থাকলে শরীর কর্টিসল নামক হরমোন নিঃসরণ করে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ধ্যান, যোগব্যায়াম, গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস বা হালকা ব্যায়াম স্ট্রেস কমাতে কার্যকর। ফলে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে।

৭. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন

নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করলে আপনি বুঝতে পারবেন কোন খাবার, ব্যায়াম বা অভ্যাস কীভাবে আপনার রক্তে শর্করাকে প্রভাবিত করছে। এতে আপনি আপনার খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা অনুযায়ী সময়মতো পরিবর্তন আনতে পারবেন।

৮. ক্রোমিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান

ক্রোমিয়াম ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ম্যাগনেশিয়াম কার্বোহাইড্রেট বিপাকের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বাদাম, পালংশাক, ডাল ও পূর্ণশস্যে এই দুটি খনিজ পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়, যা রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।


রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ শুধু ওষুধে নয়, খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা ও মানসিক সুস্থতার সঠিক সমন্বয়েই সম্ভব। প্রতিদিনের সহজ কিছু ঘরোয়া অভ্যাসই আপনাকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। তবে যেকোনো পরিবর্তনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সর্বোত্তম।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/mrxfzem2

আফরোজা

×