
সংগৃহীত
অনেকেই দিনে দিনে এমন অনুভব করেন, শরীর ক্লান্ত, কাজ করতে ইচ্ছা করে না, বারবার শুয়ে পড়তে ইচ্ছা হয়, অথচ ঘুম বা খাওয়া অনিয়মিত নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কেবল পুষ্টির ঘাটতির কারণে নয়; বরং হরমোন, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা এবং মানসিক অবস্থার পরিবর্তনের ফলে এমন হতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে আত্মবিশ্বাস হারানো, কাজের গতি কমে যাওয়া এবং দৈনন্দিন জীবনের ওপর প্রভাব পড়া স্বাভাবিক। তাই দ্রুত চিহ্নিত করা ও পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
হঠাৎ দুর্বলতার সম্ভাব্য কারণগুলি বিশ্লেষণে:
১. হাইপোথাইরয়েডিজম বা থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি
থাইরয়েড হরমোন শরীরের শক্তি উৎপাদন ও বিপাকক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে। এর মাত্রা কমে গেলে ক্লান্তিভাব, ওজন বৃদ্ধি, মন্থর ভাব ও গ্লানি দেখা দিতে পারে।
২. রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া (Hypoglycemia)
যখন শরীর পর্যাপ্ত গ্লুকোজ পায় না, তখন শক্তি উৎপাদন ব্যাহত হয়। খালি পেটে থাকা, দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা, ইনসুলিনের অতিরিক্ত ব্যবহার ইত্যাদি কারণে এমনটি হতে পারে।
লক্ষণ: মাথা ঘোরা, হাত কাঁপা, হঠাৎ অবসাদ।
৩. আয়রনের ঘাটতি (রক্তশূন্যতা)
বিশ্বজুড়ে নারী ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আয়রন ঘাটতির কারণে দুর্বলতা ও মাথা ঘোরার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।রক্তের হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করে তা চিহ্নিত করা সম্ভব।
৪. মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা ও বিষণ্নতা
চাপ, উদ্বেগ বা ডিপ্রেশন সরাসরি শরীরের ক্লান্তির অনুভূতির সঙ্গে জড়িত। দীর্ঘদিনের মানসিক অবসাদ ফিজিক্যাল এনার্জি হ্রাস করে।
৫. ঘুমজনিত ব্যাধি বা পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া
ঘুমের গুণগতমান বা পরিমাণ কমে গেলে শরীর পর্যাপ্তভাবে পুনরুজ্জীবিত হয় না। এতে সকালের পর থেকেই ক্লান্তিভাব শুরু হয়।
করণীয় (চিকিৎসা ও সচেতনতা) পরীক্ষা :
- T3, T4, TSH (থাইরয়েড ফাংশন)
- Fasting Blood Sugar (রক্তে চিনির পরিমাণ)
- CBC ও Hemoglobin (রক্তশূন্যতা নির্ণয়ে)
- Vitamin D ও B12 (শক্তি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা)
খাদ্যাভ্যাস:
- আয়রনযুক্ত খাবার: পালং শাক, ডাল, কলিজা
- প্রোটিন: ডিম, মাছ, ছোলা
- কম কার্বোহাইড্রেট ও সঠিক সময়ের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যগ্রহণ
ঘুমের রুটিন ঠিক রাখা
- প্রতি রাত ৭–৮ ঘণ্টা টানা ঘুম নিশ্চিত করা এবং ঘুমের সময়ের আগে মোবাইল স্ক্রিন এড়িয়ে চলা উচিত।
হালকা ব্যায়াম ও ধ্যান
- দৈনিক হালকা হাঁটা, স্ট্রেচিং ও সপ্তাহে ৪–৫ দিন কমপক্ষে ২০ মিনিট ব্যায়াম শরীরে এন্ডরফিন নিঃসরণ করে, যা দুর্বলতা দূর করতে সহায়ক।
মনোযোগ বাড়ানোর উপায়
- সারাদিনে পর্যাপ্ত পানি পান, চোখের বিশ্রাম ও মানসিক চাপ কমানোর উপায় হিসেবে দৈনন্দিন শিডিউলে ছোট ছোট বিরতি রাখা প্রয়োজন।
কবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি?
- দুর্বলতা যদি সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়
- একসঙ্গে মাথাঘোরা, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়
- হঠাৎ করে আচরণগত পরিবর্তন বা বিষণ্নতা অনুভব করলে
- খাওয়া-দাওয়া ঠিক থাকলেও বারবার দুর্বল লাগে
দুর্বলতা কখনোই ‘সাধারণ’ সমস্যা নয়,এটি শরীরের গভীর সংকেত। উপসর্গকে অবহেলা না করে নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও সঠিক জীবনশৈলী মেনে চললেই সমাধান সম্ভব। দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণই সুস্থ থাকার মূল চাবিকাঠি।উপরের কোনও উপসর্গ দেখা দিলে নিজ দায়িত্বে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যাবশ্যক।
হ্যাপী