ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

শরীর পূর্বাভাস জানায় আগেই: হার্ট অ্যাটাকের আগে দেখা দেয় যে লক্ষণগুলো!

প্রকাশিত: ১৫:৪১, ২১ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৫:৪২, ২১ জুন ২০২৫

শরীর পূর্বাভাস জানায় আগেই: হার্ট অ্যাটাকের আগে দেখা দেয় যে লক্ষণগুলো!

ছবি: সংগৃহীত

হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক হঠাৎ করেই ঘটে যায়—এমনটাই সাধারণ মানুষের ধারণা। তবে চিকিৎসকদের মতে, শরীর আগেভাগেই নানা সংকেত দেয়, যেগুলো বুঝে উঠতে পারলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব। এসব লক্ষণ কখনো স্পষ্ট, আবার কখনো নিঃশব্দে শরীরে ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করে। সচেতন না হলে অনেকেই এগুলো গ্যাস্ট্রিক, ঘুমের ঘাটতি বা সাধারণ দুর্বলতা ভেবে ভুল করেন। অথচ এগুলোর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে প্রাণঘাতী হৃদরোগের ইঙ্গিত।

হঠাৎ করে ক্লান্ত লাগা, কোনো কাজ না করেও শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়া—এ ধরনের অনুভূতি অনেকেই উপেক্ষা করেন। অথচ বারবার এই ক্লান্তি দেখা দিলে তা হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচলের ঘাটতির লক্ষণ হতে পারে। অনিয়মিত হার্টবিট, বুক ধড়ফড় করা বা কানে শব্দ শোনা—এগুলোও হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।

বিনা কারণে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা মাথা ঘোরাও চিন্তার বিষয়। হৃদস্পন্দন হঠাৎ কমে গেলে মস্তিষ্কে রক্ত না পৌঁছানোর কারণে এমনটা হতে পারে। আবার বুক বা শরীরের উপরের অংশে অস্পষ্ট ব্যথা, হাতের পাতায় অস্বস্তি, এমনকি পিঠ বা চোয়ালে ব্যথাও হৃদরোগের সম্ভাবনার ইঙ্গিত হতে পারে।

অনেকের ক্ষেত্রে রাতে ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ দেখা দেয়, আবার কেউ কেউ অতিরিক্ত ঘামেন বা ঠাণ্ডা ঘাম হয়ে যায়। শরীরে হঠাৎ করে ওজন বেড়ে যাওয়া কিংবা পায়ে পানি ধরে ফুলে যাওয়াও হতে পারে হৃদযন্ত্র দুর্বল হওয়ার কারণ। এমনকি মুখে বমিভাব, খিদে না লাগা, গ্যাসের সমস্যা বলেও যে লক্ষণগুলোকে ধরা হয়—তা কখনো কখনো হতে পারে হার্ট ফেলিওরের উপসর্গ।

শ্বাসকষ্ট বা হাঁটাচলায় অস্বস্তি, রাতে ঘুমে ব্যাঘাত, হঠাৎ বুক চেপে ধরা অনুভূতি, তীব্র মাথাব্যথা বা চোখে ঝাপসা দেখা—সব মিলিয়ে এগুলোকে ছোটোখাটো অসুস্থতা মনে করলেও এসব হতে পারে সম্ভাব্য হার্ট অ্যাটাকের পূর্বাভাস।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, দাঁতের সমস্যা, মাড়ির ফোলা বা রক্ত পড়ার ঘটনাও হৃদরোগের সঙ্গে জড়িত হতে পারে। মুখগহ্বরে জীবাণু রক্তনালীর মাধ্যমে হৃদযন্ত্রে পৌঁছে ক্লট তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি, যাঁরা বেশি নাক ডাকেন বা ঘুমের মধ্যে বারবার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, তাঁদের মধ্যে স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি থেকে যায়, যা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।

এমনকি যৌন অক্ষমতা বা মনঃসংযোগে সমস্যা, স্মৃতিভ্রংশ—এই মানসিক দিকগুলিও অনেক সময় হার্টের কার্যক্ষমতার অবনতি নির্দেশ করে। শরীরের যেকোনো অস্বাভাবিকতা, যা আগে কখনো ছিল না, হঠাৎ দেখা দিলে তা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণ নেওয়াই উচিত।

চিকিৎসকরা বলছেন, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় হৃদরোগের হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। জীবনযাপন পদ্ধতি, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও মানসিক চাপ এর জন্য দায়ী। তবে এসব লক্ষণ আগেভাগে চিনে ফেলতে পারলে ও নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করালে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করা সম্ভব।

অতএব, আপনার শরীরকে ভালোবাসুন, তার পাঠানো সংকেতগুলো বুঝে নিন। সময়মতো পদক্ষেপ নিলে শুধু নিজের জীবনই নয়, কাছের মানুষদের জীবনও বাঁচাতে পারবেন।

 

সূত্র: https://tinyurl.com/3nepmza2

রাকিব

×