ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

গাইবান্ধা হাসপাতালে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, রোগীর আর্তনাদ

শামসুর রহমান হৃদয়, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, গাইবান্ধা

প্রকাশিত: ১৮:৪৬, ২১ জুন ২০২৫

গাইবান্ধা হাসপাতালে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, রোগীর আর্তনাদ

ছবি: জনকণ্ঠ

গাইবান্ধা সদর আধুনিক হাসপাতালে ওষুধ সংকট, চিকিৎসক ও জনবল ঘাটতি এবং চরম অব্যবস্থাপনার কারণে রোগীরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। হাসপাতালের অভ্যন্তরে প্রভাবশালী একটি দালাল চক্রের সিন্ডিকেটের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে স্বাস্থ্যসেবা কার্যত ভেঙে পড়েছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ওষুধ ক্রয়ে কিছুটা সমস্যা রয়েছে, তবে অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হবে।

চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগ, সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ওষুধ রোগীদের মধ্যে বিতরণ না করে হাসপাতালের একটি চক্র তা বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় জরুরি ও সাধারণ চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। হাতে গোনা কয়েকজন চিকিৎসক থাকলেও তারা সময়মতো হাসপাতালে আসেন না বা রোগীদের সেবা না দিয়ে প্রাইভেট চেম্বারে ব্যস্ত থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নানা সমস্যার কারণে রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে, যা অনেকের পক্ষে আর্থিকভাবে বহন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগও রয়েছে। ভর্তি, পরীক্ষা-নিরীক্ষা কিংবা অ্যাম্বুলেন্স সেবা—সবক্ষেত্রেই অফিসিয়াল নয় এমন ফি আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালে ‘বিছানা পেতেও দিতে হচ্ছে ২০০ টাকা, স্যালাইন লাগাতে ৫০ টাকা। সরকারি হাসপাতালে এসব কীভাবে হয়?’

হাসপাতালের পরিবেশও অত্যন্ত নাজুক। টয়লেটগুলো অস্বাস্থ্যকর, রোগী ও স্বজনদের জন্য বসার জায়গার সংকট, এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় চরম অব্যবস্থা বিরাজ করছে। রাতে নিরাপত্তার অভাবেও রোগীরা উদ্বিগ্ন।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা হাসেমবাজার এলাকার রওশন সরকার বলেন, ‘দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করলেও নিয়মিত চিকিৎসক না আসায় সেবা না পেয়ে দিন শেষে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়। ডাক্তার যে প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন, তাতে পাঁচটি ওষুধ লেখা থাকলেও হাসপাতাল থেকে একটি ওষুধও পাইনি। সবই বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়েছে।’

অন্যদিকে, দীর্ঘ পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে এক্স-রেসহ বিভিন্ন পরীক্ষা বন্ধ থাকায় রোগীরা ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। রোগীর স্বজনরা জানান, ‘ভোরে এসে সিরিয়াল ধরেছি, ডাক্তার এসেছেন দুপুর ১২টার পর। এর আগেই অনেক রোগী ফিরে গেছেন।’

গাইবান্ধা আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আসিফ দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে জটিলতার কারণে ওষুধের সংকট রয়েছে।’

এই হাসপাতালসহ দেশের অন্যান্য হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ ছাড়া এ অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শহীদ

×