
ছবিঃ জনকণ্ঠ
সকাল ৭টার অ্যালার্ম। ঘুম থেকে উঠেই ৮টার ক্লাস ধরার তড়িঘড়ি চেষ্টা সপ্তাহে ৫ দিনের নিয়মিত রুটিন। ক্যাম্পাসের ক্লাস-ল্যাব, বন্ধুদের সাথে প্রাসঙ্গিক-অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের আড্ডা, ক্যান্টিনের হালকা নাস্তা শেষে হলে বা বাসায় ফিরতে ফিরতে বিকাল প্রায় ৪টার ঘনাঘন। খানিক বিশ্রামের পর আবার টিউশনের জন্য দৌড়। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরদের নিত্যদিনের রুটিন বলা চলে এই কাজগুলো।
বাঁধাধরা এই রুটিনের মাঝে নতুনত্ব নিয়ে ভাবার সময় নেই বললেই চলে। পড়াশোনার পাশাপাশি অভিনব প্রযুক্তি নিয়ে ভাবনা, আবিষ্কার, উদ্ভাবন এই বিষয়গুলো এখন শুধু পত্রিকার ফিচার পাতা বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ক্রলের বিষয়। বিশ্ববিদ্যলয়ের থাকা অবস্থায় খুব কম শিক্ষার্থী এসব বিষয় নিয়ে মাতামাতি করে।
তবে সব ক্ষেত্রে সেটা নাও হতে পারে। আজ কথা বলব বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যলয়ের (বুটেক্স) ৪ শিক্ষার্থী অন্বয় দেবনাথ, অর্ণব হালদার, ফারদীন বিন মনির ও তাশফিক হোসাইনকে নিয়ে। তারা কচুরিপানা দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে জুতার ভেতরের ও বাইরের সোল এবং ফেলে দেওয়া ডেনিমের সমন্বয়ে পরিবেশবান্ধব এসব অনুষঙ্গ তৈরি করেছেন। এই জুতার বিশেষত্ব হচ্ছে ব্যবহারের পরে সোল ৩ থেকে ৪ মাস ও ডেনিম অংশ ১০ থেকে ১২ মাসের মধ্যে মাটিতে মিশে যাবে।
বুটেক্সের ৪৭তম ব্যাচের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী তারা। পুরো কাজটি তাঁরা বুটেক্সের ল্যাব কোর্সের অংশ হিসেবে প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ল্যাবে তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করেছেন। তাদের এই পুরো কাজ তত্ত্বাবধান করেছেন বিশ্ববিদ্যলয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মার্জিয়া দুলাল।
কেনো কচুরিপানা এবং ফেলে দেওয়া ডেমিন তারা এই কাজের জন্য ব্যবহার করেছেন এই প্রশ্নের জবাবে অন্বয় বলেন, ‘ কচুরিপানা খাল–বিলের পানির চলাচল ব্যাহত করে। একই সঙ্গে এটি দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। কাজের শুরুর দিকে এই বিষয় আমাদের মাথায় ছিল। একই সঙ্গে আধুনিক ফ্যাশনশিল্পে ডেনিম উৎপাদনে বিপুল পরিমাণ পানির ব্যবহার ও পরিবেশের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে আমরা ক্লাসে পড়েছি। এই দুটি সমস্যার মধ্যে একটি যোগসূত্র খুঁজে বের করার পাশাপাশি বর্জ্য থেকে কার্যকরী ও টেকসই পণ্য তৈরির জন্য কাজ শুরু করি আমরা।’
কচুরিপানা সংগ্রহের ব্যাপারে এই প্রকল্পের আরেক সদস্য অর্ণব হালদার বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানের কচুরিপানা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করি। তবে এসবের আকার ছোট হওয়ায় জুতা তৈরির জন্য উপযুক্ত ছিল না। পরবর্তীতে পটুয়াখালীতে প্রায় দুই হাত লম্বা কচুরিপানার খোঁজ পাই আমরা। পটুয়াখালীতেই আমার বাসা হওয়ায়, সেখান থেকেই প্রয়োজনীয় কচুরিপানা সংগ্রহ করি। বাসার ছাদে কচুরিপানা শুকানোর পর চার থেকে পাঁচ কেজি কচুরিপানা ঢাকায় নিয়ে এসে ল্যাবে জুতা তৈরির কাজ শুরু করি।
একসাথে টিমে কাজ করার প্রসঙ্গে দলের আরেক সদস্য তাশফিক হোসাইন জানান, একসঙ্গে কাজ করার জন্য আমাদের ভৌগোলিক দূরত্ব একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ কেউ থাকতো মিরপুর আবার কেউ ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ডে। সব মিলিয়ে টানা তিন মাসের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অবশেষে দারুণ একটি পণ্য উদ্ভাবন করতে পেরে আমরা আনন্দিত।
এই পণ্যের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দলের আরেক সদস্য ফারদীন বিন মনির বলেন, টেকসই পণ্য তৈরির লক্ষ্যে আমরা এই কাজ করেছি। ভবিষ্যতে এই কাজ আরও সামনে নিয়ে যেতে চাই আমরা।
আলীম