
ছবি: সংগৃহীত
পুষ্টিগুণে ভরপুর, সহজলভ্য ও স্বল্পমূল্যের একটি খাবার—ডিম। রান্নার জগতে এটি যেমন বহুমুখী ব্যবহারযোগ্য, তেমনি পুষ্টির দিক থেকেও একটি পরিপূর্ণ খাবার। প্রতিদিন ডিম খাওয়ার অভ্যাস শুধু প্রোটিনের জোগানই নয়, শরীরের আরও অনেক উপকারে আসে—যা বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত।
চলুন, জেনে নিই প্রতিদিন ডিম খাওয়ার ১০টি অসাধারণ উপকারিতা—
১. পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ একটি খাবার
একটি বড় সেদ্ধ ডিমে থাকে মাত্র ৭৮ ক্যালোরি, ৬ গ্রাম প্রোটিন ও ৫ গ্রাম স্বাস্থ্যকর চর্বি। পাশাপাশি এতে থাকে—
-
ভিটামিন এ – দৈনিক চাহিদার ৮%
-
ভিটামিন বি১২ – ২৩%
-
ভিটামিন বি৫ – ১৪%
-
রাইবোফ্লাভিন (ভিটামিন বি২) – ২০%
-
ফলেট – ৬%
-
ফসফরাস – ৭%
-
সেলেনিয়াম – ২৮%
এছাড়াও ডিমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভিটামিন ডি, ই, বি৬, ক্যালসিয়াম ও জিঙ্কও থাকে।
২. হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়
একসময় মনে করা হতো ডিম খাওয়া হৃদ্রোগ বাড়ায়। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, পরিমিত ডিম খেলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ে না বরং কমে। এতে থাকা “হাই ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন” বা এইচডিএল (ভালো কোলেস্টেরল) রক্তনালিতে জমে থাকা খারাপ কোলেস্টেরল পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
৩. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়
ডিমে থাকা ‘কোলিন’ নামক পুষ্টি উপাদান স্মৃতিশক্তি, মনোভাব ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ঠিক রাখতে সহায়ক। একটি ডিমে থাকে প্রায় ১৪৭ মি.গ্রা. কোলিন, যা মানসিক দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং বার্ধক্যে স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি কমায়।
৪. চোখের যত্নে উপকারী
ডিমে থাকে লুটেইন ও জিয়াজ্যানথিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা চোখের রেটিনাকে রক্ষা করে। নিয়মিত ডিম খেলে বয়সজনিত ছানি ও দৃষ্টিক্ষীণতার ঝুঁকি কমে যায়।
৫. হাড় মজবুত করে
ডিম প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি-এর উৎস, যা শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। ফলে হাড় শক্ত থাকে এবং অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি কমে।
৬. চুল ও ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়
ডিমে থাকা বায়োটিন এবং বি-ভিটামিনসমূহ চুল, ত্বক ও নখকে সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে সহায়ক। বায়োটিনের ঘাটতি হলে চুল পড়া বা নখ দুর্বল হওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা ডিম খেয়ে সহজেই পূরণ করা সম্ভব।
৭. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
ডিম প্রোটিনে ভরপুর এবং ক্যালোরিতে কম। এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে, ফলে বারবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য ডিম একটি চমৎকার খাবার।
৮. মাংসপেশি গঠনে সাহায্য করে
ডিমে রয়েছে উচ্চমানের প্রোটিন, যা শরীরের কোষ ও মাংসপেশি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যারা শরীরচর্চা করেন বা শক্তিশালী দেহ গঠনের চেষ্টা করছেন, তাদের জন্য ডিম একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর উৎস।
৯. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
ডিমে থাকা সেলেনিয়াম ও জিঙ্ক শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে। এই উপাদানগুলো শরীরকে ইনফেকশন থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
১০. ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ায়
ডিম খাওয়ার ফলে শরীরে ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএল-এর মাত্রা বাড়ে, যা খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে রক্তনালিকে পরিষ্কার রাখে। এটি হৃদ্রোগ, স্ট্রোক ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের জটিলতা কমাতে সহায়ক।
সেদ্ধ, পোচ বা ঝাঁঝালো ঝাল ডিম—আপনার পছন্দ যাই হোক না কেন, প্রতিদিন একটি করে ডিম খেলে শরীর পাবে প্রয়োজনীয় পুষ্টির শক্তিশালী জোগান। স্বাস্থ্যবান জীবনযাপনের পথে ডিম হতে পারে আপনার সহজ ও কার্যকর সহচর। তবে যাদের বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যা আছে, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডিম খাওয়ার পরিমাণ ঠিক করা উচিত।
আবির