
ছবি: সংগৃহীত
দ্বীপজেলা ভোলায় দুগ্ধ শিল্পে সূচিত হয়েছে এক নতুন অধ্যায়। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নৌযানে কুলিং ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে দুর্গম চরাঞ্চল থেকে দুধ সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এতে করে এ অঞ্চলের খামারিদের দীর্ঘদিনের লোকসান ও হতাশার বৃত্ত ভাঙার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন খামারিরা খুশি, কারণ দুধ পরিবহন সহজ, স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ হয়েছে।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর আর্থিক ও কৌশলগত সহায়তায় ‘রুরাল মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ ট্রান্সফরমেশন প্রজেক্ট (আরএমটিপি)’র আওতায় গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা (জিজেইউএস) এই যুগান্তকারী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে।
ভোলার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের খামারিদের জন্য দুধ বাজারজাতকরণ ছিল দীর্ঘদিনের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নদীপথের দীর্ঘতা, প্রতিকূল আবহাওয়া এবং সময়সাপেক্ষ যাত্রার কারণে বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে দুধ নষ্ট হওয়াটা ছিল নৈমিত্তিক ঘটনা। মাঝের চরের দুধ বিক্রেতা মো. নিজাম বলেন, “আগে দুধ শহরে আনতে অর্ধেক দিন লেগে যেত। গরমে দুধ ফেটে যেত বা নষ্ট হতো। তখন লোকসান ছাড়া উপায় ছিল না।” একই এলাকার খামারি মো. শরিফ বলেন, “ন্যায্য দাম পাওয়ার কথা ভুলে যান, দুধ বিক্রিই ছিল কঠিন। এখন কুলিং ট্যাঙ্কার আসায় আমরা চিন্তামুক্ত।”
এই নৌযানে ব্যবহৃত কুলিং ট্যাঙ্কারটি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত, স্টেইনলেস স্টিল ও সৌরশক্তি চালিত। এটি একসঙ্গে ৭০০ লিটার দুধ বহনে সক্ষম এবং দুধের গুণগত মান অক্ষুণ্ণ রেখে প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে পারে। উদ্যোক্তা অলিউর রহমানের নেতৃত্বে বর্তমানে ৪-৫টি চর থেকে শতাধিক খামারির কাছ থেকে নিয়মিতভাবে দুধ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার উপ-পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু দুধ সংগ্রহ নয়, বরং খামারিদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করে তাদের জীবনমানে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা। এই নৌ-ট্যাঙ্কার ভোলার চরাঞ্চলের সরবরাহ ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে।”
জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রফিকুল ইসলাম খান এই উদ্যোগকে ভোলার ডেইরি শিল্পের জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, “এটি খামারিদের দুধ উৎপাদনে উৎসাহিত করবে এবং নিরাপদ ও মানসম্মত দুধ সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।”
এই পরিবর্তনের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজারেও। দুধ ব্যবসায়ী মো. অলিউর রহমান বলেন, “আগে চরের দুধ নিয়ে সংশয় ছিল। এখন সরাসরি ঠান্ডা ও বিশুদ্ধ দুধ পাচ্ছি। এতে আমাদের ব্যবসার ঝুঁকি কমেছে, আর ভোক্তাদের আস্থাও বেড়েছে।”
রিফাত