ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

মাহেগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি: ইতিহাসের পাতায় বিলীন এক জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র!

মোঃ সুজা উদ্দিন,কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার,রংপুর

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ২১ জুন ২০২৫

মাহেগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি: ইতিহাসের পাতায় বিলীন এক জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র!

একসময় ছিল এলাকার জ্ঞানপিপাসু মানুষের মিলন কেন্দ্র, যেখানে বইয়ের পাতায় পাতায় চলতো জ্ঞানের অন্বেষণ। বলছিলাম রংপুরের ঐতিহ্যবাহী মাহেগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরির কথা। ১৮৮০ সালে তাজহাটের রাজা গোপাল লাল রায় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই লাইব্রেরিটি ছিল ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন, যা প্রায় দুই একর জমির ওপর দাঁড়িয়ে ছিল স্বমহিমায়। কিন্তু কালের বিবর্তনে, অবহেলা আর অযত্নে সেই ঐতিহ্যবাহী জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

এক ঝলকে মাহেগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি
মাহেগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি শুধু একটি ভবন ছিল না, ছিল একটি জীবন্ত প্রতিষ্ঠান যা এলাকার সাংস্কৃতিক ও জ্ঞানভিত্তিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এখানে বসে পাঠক বই পড়তেন, আলোচনা করতেন, আর নিজেদের জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতেন। এর সমৃদ্ধ সংগ্রহশালায় ছিল দুর্লভ বই ও পাণ্ডুলিপি, যা গবেষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল এক অমূল্য সম্পদ।

অবহেলা আর ধ্বংসের চালচিত্র
দুঃখজনক হলেও সত্যি, সেই গৌরবময় অতীত আজ শুধুই স্মৃতি। বর্তমানে লাইব্রেরিটি সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে জরাজীর্ণ দশায় পৌঁছেছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় রাজাকাররা এটিকে তাদের ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে এবং অসংখ্য মূল্যবান বইপত্র নষ্ট করে ফেলে। এরপর থেকে এর অবস্থা আরও খারাপের দিকে যেতে থাকে। লাইব্রেরির সুবিশাল মাঠটি এখন গোচারণভূমিতে পরিণত হয়েছে এবং মূল ভবনটিও ধসে পড়ার উপক্রম। ইট, বালি, সুরকি খসে পড়ছে প্রতিনিয়ত, আর মূল্যবান বইপত্র উইপোকার দখলে।

আইনি জটিলতা এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
স্থানীয়দের মতে, লাইব্রেরির জায়গা নিয়ে মামলা সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে, যা এর সংস্কারের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই আইনি মারপ্যাঁচে আটকে আছে একটি ঐতিহাসিক স্থাপনার ভবিষ্যৎ। 

এই ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটি যদি সংরক্ষণ ও সংস্কার করা যেত, তাহলে দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকদের আকর্ষণ করা যেত এবং এটি আবারও জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রে পরিণত হতে পারতো।"

বর্তমানে মাহেগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি কেবল স্মৃতির পাতায় স্থান করে নিয়েছে। এটি এখন শুধুই একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত কাঠামো, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় অবহেলা আর অযত্নের কারণে কীভাবে একটি ঐতিহাসিক সম্পদ বিলীন হয়ে যেতে পারে। প্রশ্ন হলো, এই ঐতিহ্যকে বাঁচানোর জন্য কি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে, নাকি এটি এভাবেই ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যাবে?

Mily

×