
ছবিঃ জনকণ্ঠ
নাম শুনেই চমকে উঠতে হয়। বেকায়দা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট! ঠাকুরগাঁও সদরের ব্যারিস্টার বাজারে হঠাৎ চোখে পড়ে এমন একটি দোকান, যার নাম যেমন অদ্ভুত, পরিবেশ তেমনই আকর্ষণীয়। প্রথমবার নাম শুনে হাসি পেলেও, একবার ঢুকে পড়লে বোঝা যায়, এখানকার খাবার, পরিবেশ ও মানুষের আন্তরিকতায় সত্যিই একধরনের ‘বেকায়দা’ ভালোবাসা মিশে আছে।
সকাল থেকে রাত, হোটেলটি সর্বদা ব্যস্ত। সকালে পাওয়া যায় পরোটা ডাল, সবজি আর চা। দুপুরে গরম ভাত, ডিম, ডাল আর আলুভর্তা। সন্ধ্যায় ‘মশিউর ভাইয়ের বেকায়দা চা’ যা খেয়ে অনেকে বলে থাকেন, “এটা চা না, মনের ওষুধ!”
দোকানের খাবার গুলোর মজার মজার নাম, অচিন তরকারি’, ‘মাফ চাওয়া মরিচ ভার্তা’, ‘চুপচাপ চা’। এসব দেখে বোঝাই যায়, এখানে শুধু খাবার নয়, হাসিও পরিবেশনের অংশ।
হোটেলটির কর্ণধার মশিউর রহমান, জীবিকার টানে হোটেল ব্যবসা শুরু করলেও চেয়েছিলেন কিছু ভিন্ন করতে।
তিনি বলেন, “নামটা একটু আলাদা রাখলাম যাতে মানুষ একবার তাকায়। তারপর খাবারের স্বাদ আর পরিবেশে যেন ফিরে ফিরে আসে। এখানে যারা আসে, তারা শুধু খেতে নয়, একটু হেসে নিতে চায়। আমি সেই সুযোগটা দিতে চেয়েছি।”
মশিউর রহমানের মতে, তার হোটেল ‘সাধারণ মানুষের বিশ্রামের জায়গা’। এখানে ঢুকে কেউ রাজনীতি নিয়ে তর্ক করে, কেউ মোবাইলে সিনেমা দেখে, আবার কেউ নিঃশব্দে বসে চা খায়।
স্থানীয় সাবেক স্কুলশিক্ষক আবদুল জামিল বলেন, “সন্ধ্যায় এখানে না এলে দিনটাই অসম্পূর্ণ লাগে। চা খাই, পাশের টেবিলের আলাপ শুনি, মাঝেমাঝে নিজের কথাও বলি। এটা শুধু হোটেল না, ছোটখাটো চায়ের আড্ডার বিশ্ববিদ্যালয়!”
ব্যারিস্টার বাজারের দোকানদার বিশাল বলেন, “এক কাপ চায়ের সঙ্গে মশিউর ভাইয়ের ঠাট্টা-মশকরা না পেলে মন ভালো হয় না। ওনার এই সহজ আন্তরিকতাই সবাইকে টানে।”
‘বেকায়দা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট’ এখন ব্যারিস্টার বাজারের পরিচিত নাম। নাম যতই ব্যতিক্রম হোক না কেন, এখানকার সেবা, স্বাদ ও স্বাগতবোধ একেবারেই মন ছুঁয়ে যায়।
মশিউর রহমানের মতো মানুষই প্রমাণ করেন, একটা ছোট দোকানও হতে পারে বৃহৎ মানবিক সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু। যেখানে পেট তো ভরেই, সঙ্গে সঙ্গে ভরে ওঠে মন, মনে জমে ওঠে গল্প।
আলীম