ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

প্রাণ হারানো পর্যটকদের ৮ জনই শিক্ষার্থী

সীতাকুণ্ডে এক বছরে ১০ পর্যটকের প্রাণহানি

লিটন কুমার চৌধুরী, সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ০০:৫০, ২২ জুন ২০২৫

সীতাকুণ্ডে এক বছরে ১০ পর্যটকের প্রাণহানি

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের রূপসী ঝরনা

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের প্র্রাকৃতিক ঝরনা ও নয়নাভিরাম সমুদ্র  সৈকত দর্শনে এসে গত এক বছরে প্রাণ হারিয়েছেন ১০ পর্যটক। মূলত অসতর্কতার কারণেই এটি ঘটছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু একের পর এক প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও এখনো পর্যটকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন। বেশিরভাগ ঝরনা ও সমুদ্র সৈকতের সামনে রাখা হয়নি সচেতনতামূলক নির্দেশনা।  সৈকতগুলোতে নেই লাইফ গার্ড কিংবা বিপদ-পরবর্তী উদ্ধারের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।
নৌ-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে সীতাকুণ্ডে সমুদ্র ও প্রাকৃতিক সৃষ্ট ঝরনা দেখতে এসে অসতর্কতায় প্রাণ হারিয়েছেন ১০ পর্যটক। এর মধ্যে ঝরনা দেখতে এসে প্রাণ হারিয়েছেন ৬ জন পর্যটক। অন্যদিকে, গোসলে নেমে সমুদ্রের পানিতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছেন ৪ জন পর্যটক। প্রাণ হারানো ১০ পর্যটকের মধ্যেই ৮ জন শিক্ষার্থী ও ২ জন চাকরিজীবী। সর্বশেষ গত শনিবার বারৈয়াঢালা সহ¯্রধারা ঝরনা দেখতে এসে লেকে ডুবে মারা গেছে এক শিক্ষার্থী।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সমুদ্র সৈকত ঘিরে প্রশাসনের সঠিক নজরদারির অভাব, প্রয়োজনীয় উদ্ধার সরঞ্জামের সংকট এবং পর্যটকদের অসতর্কতার কারণে ঘটছে প্রাণহানি। সৈকতে আসা পর্যটকদের মৃত্যুঝুঁকি এড়াতে বৈরী আবহাওয়া ও ভাটার সময় পানিতে নানামতে সতর্ক চিহ্ন সংবলিত দিকনির্দেশনা সৈকতের প্রবেশদ্বারগুলোতে দেওয়া প্রয়োজন। তা দেখে পর্যটকেরা সতর্ক হলে কমে যেত প্রাণহানির ঘটনা। এ ছাড়া পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সৈকতের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে নেট বা জাল দেওয়ার পাশাপাশি ঝুঁকিমুক্ত গোসলের স্থান নির্ধারণের দাবি জানান তাঁরা।
ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে দুর্ঘটনায় পর্যটকদের হতাহতের পাঁচটি কারণ জানা গেছে। এর মধ্যে পর্যটকদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস, পর্যটন স্পটে নিরাপত্তার অভাব, অভিভাবকদের উদাসীনতা, নিষেধাজ্ঞা  অমান্য করা ও পর্যটন স্পটে মাদক গ্রহণ।
গত শনিবার বারৈয়াঢালা সহস্রধারা ঝরনার লেকে ডুবে তাহসিন আনোয়ার (১৭) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। সে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। তাহসিন জীবন বীমা করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (উপসচিব) লুৎফুন নাহারের একমাত্র ছেলে ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিকভাবে সাগর প্রতিনিয়ত তার আচরণ পাল্টায়। জোয়ারের সময় সাগরের যেই স্থানে সমতল থাকে,  ভাটার সময় সেই স্থানে খাদের সৃষ্টি হয়, যার ফলে ঘূর্ণিপাকের সৃষ্টি হয়ে সেখানে চোরাবালির সৃষ্টি হয়। তাই সৈকতে গোসল করতে নামতে হবে নিরাপদ জায়গায়। নয়তো যে কোনো সময় প্রাণহানি ঘটতে পারে। 
সীতাকু- ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মচিন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, অতি উৎসাহ ও অসতর্কতার কারণেই সীতাকু-ের প্রাকৃতিক ঝরনা ও সমুদ্র দর্শনে এসে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণ হারাচ্ছেন পর্যটকরা। ঝরনা ও সমুদ্রে প্রাণ হারানো পর্যটকের মধ্যে বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
বন বিভাগের বারইয়াঢালা রেঞ্জ কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, পর্যটকরা ঝরনায় গিয়ে কা-জ্ঞানহীন আচরণ করেন। ফলে দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছেনা। ঝরনার সামনে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড না থাকার বিষয়টিও স্বীকার করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সীতাকুণ্ডের ঝরনা ও সমুদ্রসৈকতে প্রতিনিয়ত দূর-দূরান্তের হাজার হাজার পর্যটক ও দর্শনার্থী ঘুরতে আসেন। কিন্তু তাদের অসতর্কতার কারণে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ বিষাদে পরিণত হচ্ছে, যেটা আমাদের কারও কাম্য নয়। এখানে আগত পর্যটকদের সতর্কতা অবলম্বনে ঝরনা ও সৈকতের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা সংবলিত সাইনবোর্ড  দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। পর্যটকরা সতর্কতার সঙ্গে বা নিয়ম মেনে গোসলে নামলে সহজেই এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।

×