
ছবি: সংগৃহীত।
জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) ভুল থাকলে তা সংশোধন করা এখন অনেক সহজ হয়েছে। বিশেষ করে যাদের শিক্ষাগত সনদ নেই, তারাও মাত্র একটি প্রমাণপত্র দিয়েই সংশোধনের আবেদন করতে পারবেন।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র যেমন এসএসসি বা এইচএসসি সার্টিফিকেট প্রধান প্রমাণ হিসেবে চাওয়া হয়। কিন্তু সবাই তো পড়াশোনা করেননি বা সনদ হাতে পাননি। তাহলে কি তারা ভুল সংশোধন করতে পারবেন না? অবশ্যই পারবেন। এজন্য রয়েছে বিকল্প উপায়।
আমাদের অনেকেরই জানা নেই যে, শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াও কোর্ট এফিডেভিট বা হলফনামা দিয়েও ভুল সংশোধন সম্ভব। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে, বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মো. ইউনূসের নেতৃত্বে এনআইডি সংশোধন প্রক্রিয়া বেশ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। অনেকেই ইতিমধ্যে হলফনামা জমা দিয়ে সফলভাবে সংশোধন করিয়েছেন।
ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, "ড. ইউনূস একের পর এক ম্যাজিক দেখাচ্ছেন। বর্তমানে যে হারে ভুল সংশোধন হচ্ছে, তাতে বোঝা যায় সিস্টেমে পরিবর্তন এসেছে।"
এনআইডিতে ভুল যেন এখন এক স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারও নাম ভুল, বয়স ভুল, পিতা-মাতার নাম ভুল, এমনকি বিবাহিত অবিবাহিত অবস্থা পর্যন্ত ভুলভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এর পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। নতুন ভোটার তালিকায় অদক্ষ ও অর্ধশিক্ষিত কর্মী নিয়োগে ভুলের পরিমাণ বেড়েছে।
এই ভুল সংশোধনে শিক্ষাগত সনদ না থাকলেও মাত্র চারটি বিকল্প ডকুমেন্টস জমা দিয়েই অনলাইনে আবেদন করে সহজেই এনআইডি সংশোধন করা সম্ভব। এই চারটি ডকুমেন্টস হলো:
১. হলফনামা বা এফিডেভিট (Affidavit):
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের একজন আইনজীবীর মাধ্যমে ভুল সংশোধনের বিষয়ে একটি হলফনামা তৈরি করতে হবে। এতে বর্তমান ভুল ও সংশোধনযোগ্য তথ্য উল্লেখ থাকবে। এটি প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে নোটারিভুক্ত করলে সবচেয়ে ভালো হয়।
২. চারিত্রিক সনদ বা নাগরিক সনদপত্র:
স্থানীয় কমিশনার বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে আপনার বর্তমান ঠিকানা ও নাম উল্লেখ করে একটি চারিত্রিক সনদপত্র নিতে হবে।
৩. প্রত্যয়নপত্র (Certification):
কমিশনার বা চেয়ারম্যানের লেটারহেডে একটি প্রত্যয়নপত্র দিতে হবে, যেখানে ভুল নাম বা তথ্য এবং সঠিক তথ্য পাশাপাশি উল্লেখ থাকবে।
৪. ওয়ারিশান/পারিবারিক সনদ:
যাদের পিতা বা অভিভাবক মৃত, তারা স্থানীয় সরকার প্রতিনিধির মাধ্যমে ওয়ারিশান সনদ নিতে পারবেন। এই সনদটি এনআইডির তথ্য সংশোধনে সহায়ক।
এই চারটি ডকুমেন্টস স্ক্যান করে অনলাইনে আবেদন জমা দিতে হবে। নির্বাচনী অফিস যাচাই-বাছাই করে আপনার মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেবে সংশোধনের অগ্রগতি।
তবে সতর্ক থাকতে হবে—হলফনামা বা অন্যান্য ডকুমেন্টস যেন কোনোভাবেই ফুটপাতের দোকান বা দালালের মাধ্যমে তৈরি না করা হয়। কারণ জাল ডকুমেন্টস ব্যবহার করলে আপনি নিজেই আইনি ঝামেলায় পড়বেন, এমনকি জেল বা জরিমানাও হতে পারে।
অতএব, ভোটার আইডি সংশোধনে শিক্ষাগত সনদ না থাকলেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সঠিক পথে, সঠিক ডকুমেন্টস দিয়ে আবেদন করলেই মিলবে সমাধান।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
কারও যদি এফিডেভিট সংক্রান্ত সহযোগিতা প্রয়োজন হয়, তবে আপনি বাংলাদেশের স্বীকৃত আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
নুসরাত