
ছবি: সংগৃহীত।
২০০০ সালের পরে জন্ম নেওয়া তরুণ প্রজন্ম এমন এক দুনিয়ায় বাস করছে, যেখানে মানুষের কণ্ঠ, মুখাবয়ব এমনকি চিন্তাও কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যায়। আপনি হয়তো জানেন না—আজকের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) এতটাই শক্তিশালী যে, কেউ যদি আপনার কণ্ঠস্বর নকল করে কিছু বলে, তা আপনার বাবাও চিনে উঠতে পারবেন না।
এই প্রযুক্তির যুগেই যদি দাজ্জাল আসে—যে হক আর বাতিলের সীমা ঘোলাটে করে দেয়, তাহলে কি আমরা চিনতে পারবো কে সত্য আর কে ভ্রান্ত?
❖ দাজ্জাল কি প্রযুক্তিরই রূপ?
বর্তমানে কেউ কেউ মনে করেন, দাজ্জাল কোন মানুষ নয় বরং উন্নত প্রযুক্তিই হতে পারে দাজ্জাল। তবে সহিহ হাদিস অনুযায়ী, দাজ্জাল হবেন একজন মানুষ, অতি চতুর, অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে এক মহা পরীক্ষা।
রাসূল (সা.) বলেছেন, দাজ্জালের এক চোখ অন্ধ হবে এবং সে এমন কাজ করবে যা মানুষকে তাকে “ঈশ্বর” বলে মেনে নিতে বাধ্য করবে।
❖ এআই কি দাজ্জালের হাতিয়ার?
এআই এখন মানুষের মুখ নকল করে ভিডিও বানাতে পারে—ডিপফেইক প্রযুক্তির মাধ্যমে।
ভাষা নকল করে কথা বলাতে পারে—ভয়েস ক্লোনিং এর মাধ্যমে।
রোবট এখন অনুভব করতে পারে এবং GPT-এর মতো এআই মডেল মানুষের চিন্তাভাবনা পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।
ধরুন, দাজ্জাল এমন একটি এআই সাম্রাজ্য গড়ে তুলল, যেখানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির চশমা পরে মানুষ ‘জান্নাত’ দেখছে। কিন্তু বাস্তবে তা এক ধ্বংসস্তুপ।
এ কারণেই রাসূল (সা.) বলেছেন, “দাজ্জালের এক হাতে থাকবে জান্নাত, আরেক হাতে থাকবে জাহান্নাম। কিন্তু প্রকৃত অবস্থাটি হবে বিপরীত।”
❖ মস্তিষ্কে অনুভূতির ‘ইলিউশন’
বিজ্ঞানীরা বলছেন—নিউরোসিমুলেশন, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ও ইলেকট্রিক সিগনালের মাধ্যমে এমন এক প্যারাডাইস সিমুলেশন তৈরি সম্ভব, যেখানে মানুষ সুখ, শান্তি ও আনন্দ অনুভব করবে—বাস্তব ছোঁয়া ছাড়াই।
আর যারা তার বিরোধিতা করবে তাদের জন্য তৈরি থাকবে ভয়ংকর ভার্চুয়াল শাস্তি—একটি বিভ্রম, কিন্তু খুবই বাস্তব অনুভবযোগ্য।
❖ দাজ্জালের গতির রহস্য
নবী (সা.) বলেছেন: “দাজ্জালের গতি হবে এমন, যেমন বাতাস বৃষ্টিকে নিয়ে দ্রুত চলে যায়।”
আজকের হাইপারলুপ ট্রেন, ড্রোন, VTOL এয়ারক্রাফট ও AI কন্ট্রোলড টেলিপ্রেজেন্স প্রযুক্তি—এসব হয়তো দাজ্জালের সেই গতি ও উপস্থিতিকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে।
সে হয়তো এক জায়গায় না থেকেও বহু জায়গায় ‘উপস্থিত’ দেখাবে—হলোগ্রাফিক বিভ্রম সৃষ্টি করে।
হাদিসে এসেছে: “দাজ্জাল মানুষকে বলবে, আমি যদি তোমার মৃত পিতা-মাতাকে জীবিত করে দেখাই, তাহলে কি আমাকে প্রভু হিসেবে মানবে?”
সে এমন রোবট ও ডিপফেইক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে, যাতে মৃত ব্যক্তি জীবন্ত মনে হয়—চেহারা, কণ্ঠস্বর এমনকি স্মৃতিও।
ফলে সন্তান বলবে: “হ্যাঁ, সে-ই তো আমার বাবা-মা!”
❖ জড় ও জীবের নিয়ন্ত্রণ
আজকের IoT (Internet of Things) এর মাধ্যমে দরজা, আলো, ফ্রিজ, গাড়ি—সব কিছু নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে এআই দিয়ে।
নিউরাল কন্ট্রোল ও ব্রেইন সিগনালের মাধ্যমে পশুর আচরণ নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব।
ভবিষ্যতে দাজ্জাল একটি বিশাল এআই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে জড় ও জীব উভয়কেই নিজের আদেশে চালাতে পারবে।
❖ মানুষের ঈমান নেবে বিনিময়ে!
সূরা নিসা, আয়াত ১২০: "শয়তান তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয়, প্রলোভন দেখায়। অথচ তার প্রতিশ্রুতি শুধুই ধোঁকা।"
এই আয়াতের প্রতিশ্রুতি আজকের দিনে হয়ে দাঁড়াতে পারে ডিজিটাল ইউটোপিয়া—যেখানে দাজ্জাল মানুষকে দেখাবে, কেউ গরিব নয়, কেউ অসুস্থ নয়—শুধু আনন্দ আর সুখ।
শর্ত একটাই: তাকে প্রভু হিসেবে স্বীকার করতে হবে।
❖ রাসূলের (সা.) হুঁশিয়ারি ও করণীয়
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: “তোমাদের ক্ষেত্রে দাজ্জাল ছাড়া অন্য কিছুতে এত ভয় আমাকে দেখানো হয়নি।”
প্রযুক্তি কোনো পাপ নয়। কিন্তু যখন তা কোনো শয়তানি উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তখন তা হয়ে ওঠে ঈমান ধ্বংসের অস্ত্র।
আমাদের দায়িত্ব হলো প্রযুক্তিকে বুঝে ব্যবহার করা, এবং সত্য ও বাতিলের মাঝে সুস্পষ্ট পার্থক্য বজায় রাখা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে দাজ্জালের ভয়াবহ ফিতনা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
নুসরাত