
ছবি: সংগৃহীত
আকাশে আধিপত্য কায়েম করতে শুধু স্টেলথ বা সেন্সর নয়, অতিমানবীয় গতিই অনেক সময় হয়ে ওঠে চূড়ান্ত অস্ত্র। বিশ্বের বহু যুদ্ধবিমান তাদের চমকপ্রদ গতি দিয়ে শত্রুকে মুহূর্তেই ঘায়েল করতে সক্ষম। নিচে ২০২৫ সালের সবচেয়ে দ্রুতগতির যুদ্ধবিমানগুলোর তালিকা ও বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো:
১.মিগ-২৫ ফক্সব্যাট
সর্বোচ্চ গতি: Mach 2.83 (প্রায় ৩,০০০ কিমি/ঘণ্টা)
১৯৬০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন তৈরি করেছিল এই অসাধারণ গতি সম্পন্ন যুদ্ধবিমানটি। মূল লক্ষ্য ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্রুতগামী রিকনেসেন্স (গোয়েন্দা) ও বোমারু বিমানকে থামানো। এর অবিশ্বাস্য গতি পশ্চিমাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছিল। তবে এই গতি অর্জনের জন্য এতে কিছু দুর্বলতাও ছিল— যেমন নিচু উচ্চতায় দুর্বল পারফরম্যান্স ও সীমিত ঘুরপাক খাওয়ার ক্ষমতা। তবুও, এটি ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুত অপারেশনাল যুদ্ধবিমান হিসেবে রয়ে গেছে।
২.মিগ-৩১ ফক্সহাউন্ড
সর্বোচ্চ গতি: Mach 2.83 (প্রায় ৩,০০০ কিমি/ঘণ্টা)
মিগ-২৫-এর উত্তরসূরি হিসেবে তৈরি এই বিমানটি আরও উন্নত। এটি শুধু ইন্টারসেপ্টর না, reconnaissance (তথ্য সংগ্রহ), long-range radar ও এমনকি গ্রাউন্ড অ্যাটাকের ক্ষমতাও রাখে। এর ককপিটের কাচ গলে যাওয়ার ঝুঁকি থাকায় বাস্তবে একে Mach ১.৫-এর বেশি গতি দেওয়া হয় না। তবুও এর কাঠামো অনুযায়ী এটি বিশ্বের দ্বিতীয় দ্রুততম যুদ্ধবিমান।
৩.এফ-১৫ ঈগল
সর্বোচ্চ গতি: Mach 2.5 (প্রায় ২,৬৫৫ কিমি/ঘণ্টা)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি F-15 Eagle হলো আধুনিক যুগের অন্যতম সফল যুদ্ধবিমান। এটি শুধুমাত্র দ্রুত নয়, একইসঙ্গে অসাধারণভাবে ঘুরপাক খেতে সক্ষম। এটি মূলত তৈরি করা হয়েছিল মিগ-২৫-এর মোকাবেলার জন্য। এটি এখনও ব্যবহৃত হচ্ছে এবং নতুন সংস্করণ F-15EX-এর এখনও উৎপাদন চলছে। কিছু বিশেষজ্ঞ দাবি করেন, এটি Mach 2.9 পর্যন্ত গতি অর্জন করতে পারে, তবে বাস্তবে সাধারণত ২.৫ এর আশেপাশেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়।
৪. সুখোই SU-27
সর্বোচ্চ গতি: Mach 2.35 (প্রায় ২,৫০০ কিমি/ঘণ্টা)
সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি এই বহুমুখী যুদ্ধবিমানটি শুধু দ্রুতগতির নয়, এটি দীর্ঘ পাল্লার যুদ্ধে বেশ কার্যকর। এটি থেকে আরও উন্নত SU-30, SU-35 এবং চীনের J-11, J-16 তৈরি হয়েছে। এর পারফরম্যান্স একটু কমে যায় যখন এটি অস্ত্র বহন করে, কিন্তু তখনও এটি অসাধারণ গতিতে উড়তে সক্ষম। এটি মূলত আকাশে আধিপত্য বজায় রাখার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল।
৫. মিগ-২৩ ফ্লগার (MiG-23 Flogger)
সর্বোচ্চ গতি: Mach 2.35 (প্রায় ২,৪৯৯ কিমি/ঘণ্টা)
সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি এই যুদ্ধবিমানটি ছিল একধরনের স্বিং-উইং (ভারি আর হালকা কোণে ডানা ভাঁজ করা যায়) ইন্টারসেপ্টর। এর ডানার নকশা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন টেকঅফ ও ল্যান্ডিংয়ের সময় সামনে এবং উচ্চগতিতে পেছনে ভাঁজ করে নেওয়া যায়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল বোমারু বিমান থামানো, তাই এটি নিচু উচ্চতায় দুর্বল হলেও উচ্চ গতিতে অসাধারণ কার্যক্ষম। তবে নতুন প্রজন্মের বিমানের তুলনায় এর ঘুরপাক খাওয়ার ক্ষমতা সীমিত।
৬. এফ-১৪ টমক্যাট
সর্বোচ্চ গতি: Mach 2.3 (মানে প্রায় ২,৪৮৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা)
এই যুদ্ধবিমানটি একসময় মার্কিন নৌবাহিনীর গর্ব ছিল। বর্তমানে এটি শুধুমাত্র ইরান পরিচালনা করে। এর বৈশিষ্ট্য হলো— সম্পূর্ণ অস্ত্র ও জ্বালানিতে পূর্ণ থাকলেও এটি Mach 2.3 গতিতে উড়তে পারে। এটি এমন এক গতি যেখানে শব্দের চেয়েও দ্বিগুণ বেশি স্পিডে বিমানটি চলে!
৭. মিগ-২৯
সর্বোচ্চ গতি: Mach 2.3 (প্রায় ২,৪৫০ কিমি/ঘণ্টা)
সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি এই যুদ্ধবিমানটি দ্রুত প্রতিক্রিয়ার জন্য বিখ্যাত। এর লক্ষ্যবস্তু— আকাশে আসা শত্রু বিমানকে সেকেন্ডের মধ্যে ধ্বংস করা। বিশাল আকৃতির দুইটি ইঞ্জিনের মাধ্যমে এটি Mach 2.3 অর্থাৎ শব্দের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ গতিতে ছুটে যেতে পারে।
৮. আইএআই কফির
সর্বোচ্চ গতি: Mach 2.3 (প্রায় ২,৪৪০ কিমি/ঘণ্টা)
ইসরায়েলি প্রযুক্তির এই উন্নত যুদ্ধবিমানটি ফরাসি মিরাজ ৫ এর উন্নত সংস্করণ। এতে ব্যবহার করা হয়েছে General Electric J79 ইঞ্জিন যা এই গতি অর্জনে ভূমিকা রাখে। বর্তমানে কলম্বিয়া ও কিছু প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এই বিমানটি ব্যবহার করে।
৯.লকহিড মার্টিন এফ-২২ র্যাপ্টর
সর্বোচ্চ গতি: Mach 2.25 (প্রায় ২,৪১৪ কিমি/ঘণ্টা)
এটি বিশ্বের প্রথম ৫ম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এ বিমানটি শুধু দ্রুত নয়, একইসঙ্গে আধুনিক সেন্সর, সুপারক্রুজ ক্ষমতা (afterburner ছাড়াই supersonic গতি) এবং নজিরবিহীন রাডার এভয়ডেন্স প্রযুক্তি সম্বলিত। এটি Mach ১.২ গতি ধরে রাখতে পারে সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি অবস্থানেও। খুব অল্প সংখ্যক এফ-২২ তৈরি হয়েছে, এবং শুধুমাত্র মার্কিন বিমান বাহিনীর হাতে এটি ব্যবহৃত হয়।
১০. এফ-৪ ফ্যান্টম II
সর্বোচ্চ গতি: Mach 2.23 (প্রায় ২,৩৭০ কিমি/ঘণ্টা)
এই যুদ্ধবিমানটি ১৯৬০-৭০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর অন্যতম প্রধান প্ল্যাটফর্ম ছিল। এখনো এটি ইরান, তুরস্ক ও গ্রিসের মতো কিছু দেশের হাতে সীমিত সংখ্যায় সক্রিয় রয়েছে। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো— এটি টুইন ইঞ্জিন-যুক্ত এবং এর পেছনের উইংগুলো উঁচু দিকে বাঁকানো। এতে ছিল না অভ্যন্তরীণ গান, কারণ তখনকার দিনে ভাবা হতো মিসাইলই যথেষ্ট। পরে ভিয়েতনাম যুদ্ধে বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বাইরে বন্দুক লাগানোর ব্যবস্থাও রাখা হয়।
মুমু ২