
ছবি: জনকণ্ঠ
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে অবস্থিত আন্তর্জাতিক গুরুত্বসম্পন্ন জলাভূমি ‘টাঙ্গুয়ার হাওর’ রক্ষায় ২১জুন শনিবার সকালে নতুন করে নির্দেশনা জারি করেছে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন।
প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে ভ্রমণকারীদের জন্য এই নির্দেশনাগুলো ‘করণীয় ও বর্জনীয়’ (Dos and Don’ts) আকারে নির্ধারণ করা হয়েছে।
১২,৬৫৫.১৪ হেক্টরজুড়ে বিস্তৃত এই হাওর ১০৯টি বিল, হিজল-করচের বন এবং ২০৮ প্রজাতির পাখিসহ বিশাল প্রাণবৈচিত্র্যের আবাসস্থল। ইউনেস্কো ২০০০ সালে একে ‘রামসার সাইট’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। বর্ষা ও শীত—দুই মৌসুমেই ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায় মুখর থাকে এই এলাকা।
তবে পরিকল্পনাহীন ও অসচেতন পর্যটনের কারণে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ায় জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
নির্দেশনায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, উচ্চ শব্দে গান-বাজনা করা ও শুনা যাবে না। হাওরের পানিতে অজৈব বা প্লাস্টিকজাতীয় পণ্য/বর্জ্য ফেলা যাবেনা। মাছ ধরা, শিকার বা পাখির ডিম সংগ্রহ করা যাবে না। পাখিদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে কোন ধরনের বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। ডিটারজেন্ট, শ্যাম্পু বা রাসায়নিক ব্যবহার করা যাবে না। গাছ কাটা, গাছের ঢাল ভাঙা বা বনজ সম্পদ সংগ্রহ করা যাবে না। কোর জোন বা সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করা যাবেনা। মনুষ্য সৃষ্ট জৈব বর্জ্য হাওরে ফেলা যাবেনা।
অন্যদিকে, পর্যটকদের করণীয় হিসেবে বলা হয়েছে—জেলা প্রশাসন নির্ধারিত নৌপথ ব্যবহার, লাইফ জ্যাকেট পরিধান, প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার হতে বিরত থাকা, স্থানীয় গাইডের সহায়তা গ্রহণ, দূর থেকে জীববৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ এবং ক্যাম্পফায়ার বা আলো জ্বালানো থেকে বিরত থাকা বাধ্যতামূলক।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পর্যটকদের সচেতন করতে লিফলেট, ব্যানার ও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার জোরদার করা হয়েছে। নির্দেশনার বাস্তবায়নে ট্যুর অপারেটর, নৌযান মালিক, হাউসবোট ব্যবস্থাপক ও স্থানীয় গাইডদেরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, এ উদ্যোগ পরিবেশবান্ধব পর্যটনের একটি নতুন ধারা তৈরি করবে এবং দীর্ঘমেয়াদে হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
টাঙ্গুয়ার হাওরের বিপুল সম্পদ—১৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২০৮ প্রজাতির পাখি, ১৪ প্রজাতির দেশি মাছ, ২১ প্রজাতির সাপসহ অনেক প্রাণির আবাসস্থল—এই ধরণের সুরক্ষা উদ্যোগ ছাড়া টিকে থাকা কঠিন।
এ ছাড়া, যেকোনো অপরাধ বা দুর্ঘটনার আলামত দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। পর্যটকদের স্থানীয় জনগণের প্রতি সম্মান ও সহনশীল আচরণ বজায় রাখারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
সাধারণ পর্যটকদের পাশাপাশি যারা হাওর ঘিরে ব্যবসায়িক সেবা দিচ্ছেন—তাদেরকেও দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন অনুরোধ জানিয়েছে।
সাব্বির