ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

ইরান সংঘাতের মধ্যেই হিজবুল্লাহকে টার্গেট: কী বার্তা দিচ্ছে ইসরায়েল?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:০৬, ২১ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৪:১২, ২১ জুন ২০২৫

ইরান সংঘাতের মধ্যেই হিজবুল্লাহকে টার্গেট: কী বার্তা দিচ্ছে ইসরায়েল?

ছবিঃ সংগৃহীত

ইরানের সঙ্গে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান আরও জোরদার করেছে। শুক্রবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিশ্চিত করে জানায়, তারা দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর এক শীর্ষ কমান্ডার মোহাম্মদ খদর আল-হুসেইনিকে হত্যা করেছে। ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (IDF) জানায়, তার মৃত্যু উত্তর সীমান্তে আসন্ন হুমকি দূর করার এক জরুরি পদক্ষেপ।

IDF-র ভাষ্যমতে, আল-হুসেইনি হিজবুল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন পরিচালনায় জড়িত ছিলেন। তিনি নাহারিয়া ও হাইফাসহ একাধিক ইসরায়েলি শহরে হামলার পরিকল্পনায় অংশ নেন এবং সম্প্রতি সংগঠনটির দুর্বল হয়ে পড়া গোলাবারুদ ইউনিট পুনর্গঠনের দায়িত্ব পান।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, "তার কর্মকাণ্ড ইসরায়েল-লেবানন সমঝোতার সরাসরি লঙ্ঘন। ইসরায়েল যেকোনো হুমকি অপসারণে তার অভিযান অব্যাহত রাখবে।"

এই হামলাটি ছিল ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর পরিচালিত কয়েকটি নির্ভুল অভিযানের একটি অংশ। এর আগে বুধবার রাতে নাবাতিয়াহ অঞ্চলে চালানো পৃথক এক হামলায় হিজবুল্লাহর আরও দুই কমান্ডার নিহত হন। এদের একজন মোহাম্মদ আহমাদ খরাইস ছিলেন শিবা অঞ্চলের অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল ইউনিটের প্রধান এবং ২৬ এপ্রিল মাউন্ট ডভে ইসরায়েলি সামরিক কনট্রাক্টর শরিফ সুয়াদের মৃত্যুর ঘটনার জন্য সরাসরি দায়ী ছিলেন।

হিজবুল্লাহর হুঁশিয়ারি

এই হামলার আগে হিজবুল্লাহর বর্তমান মহাসচিব শেখ নাইম কাসেম ইরানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান এবং ইসরায়েল-আমেরিকার "নৃশংস আগ্রাসনের" বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপের ঘোষণা দেন। তার এই মন্তব্যের কঠোর প্রতিক্রিয়া জানান ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাতজ।

কাতজ বলেন, “হিজবুল্লাহ নেতারা তাদের পূর্বসূরিদের কাছ থেকে কিছুই শিখেনি।” তিনি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হিজবুল্লাহর সাবেক প্রধান হাসান নাসরাল্লাহর দিকে ইঙ্গিত করেন। তিনি আরও বলেন, “সন্ত্রাসবাদ থাকলে হিজবুল্লাহ থাকবে না।”

তেল আবিবে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে কাতজ হুঁশিয়ারি দেন, “লেবাননের এই প্রক্সি গোষ্ঠী যেন সাবধান থাকে। ইসরায়েল এখন আর ধৈর্য ধরবে না।”

প্রক্সি নেটওয়ার্কে চাপ

ইসরায়েলের হিজবুল্লাহবিরোধী অভিযান বৃদ্ধির পেছনে ইরানের আঞ্চলিক প্রক্সি নেটওয়ার্ক সক্রিয় করতে না পারার প্রশ্নটি উঠে আসছে। ইরানের তথাকথিত “প্রতিরোধ জোটে” রয়েছে হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা, ইরাকের শিয়া মিলিশিয়া ও গাজায় হামাস। তবে ইরানকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলের সরাসরি হামলার পরও এসব গোষ্ঠী তুলনামূলকভাবে নিষ্ক্রিয় রয়ে গেছে।

বিশেষত হিজবুল্লাহ, যাকে ইরানের সবচেয়ে দক্ষ অ-রাষ্ট্রীয় মিত্র মনে করা হয়, ইসরায়েলি অভিযানের শুরু থেকেই কার্যক্রম অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে। সংগঠনটির নেতৃত্বে বড় ধরনের ধাক্কা এসেছে। নাসরাল্লাহর মৃত্যুর পাশাপাশি, সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পতনের ফলে অস্ত্র সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ রুট বিচ্ছিন্ন হয়েছে। একইসঙ্গে, ইরানের আর্থিক সংকট ও সীমিত সহযোগিতা হিজবুল্লাহর অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতাও দুর্বল করে দিয়েছে।
 

মুমু

×