শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনের সঙ্গে আপত্তিকর ভিডিওতে দেখা যাওয়া নারী অভিযোগ করেছেন যে, তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী ওই নারী মোবাইল ফোনে বলেন, “আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে, আমার স্বামীকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য করে, আমাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিনের পর দিন ব্যবহার করেছে ও শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করেছে। এখন সে আর আমাকে বিয়ে করবে না। আমাকে ঘর-সংসার থেকে বিতাড়িত করে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে। বিভিন্নজনকে দিয়ে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে, মামলার ভয় দেখাচ্ছে।”
ভাইরাল হওয়া ছবিগুলো জেলা প্রশাসক নিজেই তোলেন এবং তার লোক দিয়ে তা সংগৃহীত বলে অভিযোগ করেন লিজা নামের ওই নারী।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জেলা প্রশাসকের আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশের পর তার একটি আবেগঘন ভিডিওও ভাইরাল হয়েছে, যার দৈর্ঘ্য ৭ মিনিট ১১ সেকেন্ড। সেখানে ডিসি আশরাফ উদ্দিন বলেন, “লিজা, অনেক প্রত্যাশা ছিল আজ তোমার সঙ্গে দেখা হবে। অনেক স্বপ্ন ছিল। আমি কথা গুছিয়ে বলতে পারি না। কিন্তু অন্তর্যামী জানে, আমি তোমাকে ভালোবেসেছি। সেটা কি ভণ্ডামি ছিল? ছলনা ছিল? লোভ ছিল? তোমার শরীরের প্রতি লোভ ছিল? আমি জানি না তোমার কত টাকা আছে, আমি কি টাকার লোভে গিয়েছি? একমাত্র আল্লাহ জানেন।”
তিনি আরও বলেন, “এগুলোর প্রতিবাদ করে কী লাভ? যেখানে বিশ্বাস নেই, প্রেমিক সম্পর্কে প্রেমিকার এমন ধারণা— সেখানে প্রতিবাদ করলে হয়তো আরও অপমানিত হতে হবে।”
ভুক্তভোগী নারীর নাম সেলিনা ইসলাম লিজা, তিনি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সাবালিয়া এলাকার আব্দুস সালাম খানের মেয়ে।
জেলা প্রশাসকের আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে আরও দুর্নীতি ও অপকর্মের অভিযোগ উঠে এসেছে। ফেসবুকে তার আরও বিকৃতরুচির ছবি ছড়িয়েছে। এসব নিয়ে জেলাজুড়ে চলছে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (২০ জুন) সকালে প্রবাসী সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝর তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে জেলা প্রশাসকের আপত্তিকর ছবি ও একটি ভিডিও পোস্ট করেন। ভিডিওটি পোস্ট করে তিনি লিখেন, “শরীয়তপুরের ডিসি মো. আশরাফ উদ্দিন— একজন জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি ব্যক্তি। উনি এই ছবি ও ভিডিও নিজেই খুশিমনে তুলেছেন। বিয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে এখন বিয়ে না করে হুমকি দিচ্ছেন।”
টেলিগ্রামে পোস্ট করা ৫৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন শার্টের বোতাম খোলা অবস্থায় এক লাল-হলুদ পোশাকধারী নারীকে কোলে নিয়ে চুম্বন করছেন। ভিডিও কলের মাধ্যমে ওই নারীকে নিজের বিশেষ অঙ্গও দেখাতে দেখা যায় তাকে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন ২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর শরীয়তপুরে জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ২৭তম বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং এর আগে নিউরো ডেভেলপমেন্ট প্রতিবন্ধী ট্রাস্টে পরিচালক ছিলেন।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, শরীয়তপুর’-এর আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির বলেন, “ডিসি তার সৎ চরিত্র ধরে রাখতে পারেননি। প্রবাসী সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝরের আপলোড করা ভিডিও থেকেই আমরা বিষয়টি জানতে পেরেছি। ডিসির কাছ থেকে এমন আচরণ কেউ প্রত্যাশা করে না।”
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনকে বারবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাসুদুল আলম বলেন, “জেলা প্রশাসক স্যার ছুটিতে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার অফিস শেষে ঢাকায় গেছেন। কারো কাছে লিখিতভাবে দায়িত্ব দিয়ে যাননি। তিনি কবে ফিরবেন, তাও নিশ্চিত নই।”
সানজানা
