ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী এক ঐতিহ্যের নাম

সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: ২১:১১, ২১ জুন ২০২৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী এক ঐতিহ্যের নাম

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পূর্ব বাংলার হৃদয় থেকে উঠে আসা একটি জেলাশহর। ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি এই অঞ্চল পরিচিত তার মুখরোচক খাবারের জন্যও। কিন্তু এসব কিছুর মাঝেও একটি নাম ঐতিহ্যের সঙ্গে উচ্চারিত হয়—ছানামুখী। এটি শুধুই একটি মিষ্টি নয়, এটি এক ঐতিহ্যের নাম, এক অনুভবের নাম।

লোককথা অনুযায়ী, প্রায় শতবর্ষ আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক ক্ষুদ্র মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী হাতুড়ে পদ্ধতিতে ছানা ও গুড় একসাথে জ্বাল দিয়ে তৈরি করেন এক অভিনব মিশ্রণ। স্বাদে ছিল যেন খেজুর গুড় আর ছানার কোমলতা। প্রথম দিকে এর কোনো নাম ছিল না, স্থানীয় মানুষ বলতো "গুড়ছানা" বলে। ধীরে ধীরে এই মিষ্টান্নটি জনপ্রিয় হতে থাকে। পরবর্তীতে একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এর নাম দেন “ছানামুখী”। নামটি মিষ্টির মতোই স্থায়ী হয়।

দুধ, ছানা আর চিনির মিশেলে তৈরি ছানামুখীর খ্যাতি এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসে ছানামুখীর স্বাদ না নেন বা সঙ্গে করে নিয়ে যান না এমন ভ্রমণকারী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। 

ছানামুখীর জন্মকথা থেকে আসে এক বিস্মৃত নাম — মহাদেব পাঁড়ে। তার বাড়ি ছিল ভারতের কাশীধামে। সেখান থেকে প্রায় শতবর্ষ আগে বড় ভাই দুর্গাপ্রসাদ পাঁড়ের হাত ধরে কলকাতায় পাড়ি জমান তিনি। দুর্গাপ্রসাদের ছিল একটি মিষ্টির দোকান, সেখানে মহাদেব শুরু করেন তাঁর কর্মজীবন। ভাগ্যের নির্মমতায় দুর্গাপ্রসাদের মৃত্যুর পর মহাদেব হয়ে পড়েন আশ্রয়হীন। জীবনের বাঁকে বাঁকে ঘুরতে ঘুরতে একসময় তিনি এসে পৌঁছান ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের মেড্ডা এলাকায় শিবরাম মোদক নামে একজনের মিষ্টির দোকান ছিল, যিনি মহাদেবকে আশ্রয় দেন নিজের দোকানে।

মহাদেবের আগমনের পর থেকেই শিবরামের দোকানের মিষ্টির স্বাদে আসে বৈচিত্র্য, জনপ্রিয়তা বাড়ে ব্যাপকভাবে। সময় গড়ায়, শিবরাম মোদক মৃত্যুর আগে তাঁর প্রিয় কর্মী মহাদেবের হাতে তুলে দেন দোকানের দায়িত্ব। তখন থেকেই মহাদেব এই শহরের মিষ্টির ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় শুরু করেন। তাঁর হাতে তৈরি হয় দুইটি বিশেষ মিষ্টান্ন—একটি লেডি ক্যানিং (বা লেডি ক্যানি) এবং অপরটি, শহরের আজকের সবচেয়ে পরিচিত জনপ্রিয় নাম ছানামুখী।

গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখীকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ডিপিডিটিতে ছানামুখীর জিআই নম্বর ৪১।

Jahan

×