
“এই যুদ্ধ যদি শুরু হয়, তা কেবল একটি দেশের সঙ্গে আরেকটি দেশের নয়, বরং এটি মানবতা, বিশ্বাস এবং মুসলিম উম্মাহর আত্মপরিচয়ের বিরুদ্ধে এক নিঃশব্দ ঘোষণা।” — আবু তহা মোহাম্মদ আদনান।
ইসলামি চিন্তাবিদ, বক্তা এবং বিশ্লেষক আবু তহা আদনান ইসরায়েল-ইরান সম্পর্ককে এক গভীরতর দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করেছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম যখন সামরিক প্রস্তুতি, ড্রোন হামলা বা পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে কথা বলছে, তখন তিনি প্রশ্ন রাখছেন—এই যুদ্ধের পেছনের মূল শক্তিগুলো কে? আর মুসলিম বিশ্বের ভূমিকা কোথায়?
ইসরায়েল ও ইরানের বিবাদকে অনেকে ধর্মীয় শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব মনে করলেও, আবু তহা বলেন, “এটি শিয়া-সুন্নি নয়, এটি ‘প্রতিরোধ বনাম আগ্রাসন’-এর একটি চূড়ান্ত সংঘর্ষ।”
ইরান দাবি করে, তারা ফিলিস্তিনের একমাত্র প্রকৃত পৃষ্ঠপোষক। কিন্তু বাস্তবতা হলো তাদের কৌশলগত আগ্রহ রয়েছে সিরিয়া, লেবানন ও ইয়েমেন পর্যন্ত একটি "ইরান-অ্যাক্সিস" তৈরি করা। অন্যদিকে, ইসরায়েল এসব প্রতিরোধশক্তিকে ধ্বংস করে নিজেদের নিরাপত্তা বলয়ে রাখতে চায়।
আবু তহা ইঙ্গিত দিয়েছেন আরও গভীর ষড়যন্ত্রের দিকে। তিনি বলেন, “ইসরায়েলের বোমা ছোঁড়ার আগেই পশ্চিমা মিডিয়ায় যেভাবে ইরানকে ‘আগ্রাসী’ প্রমাণের প্রচারণা চালানো হয়, সেটাই প্রমাণ করে এই যুদ্ধের পেছনে একটি সুসংগঠিত মিডিয়া ও গোয়েন্দা কাঠামো রয়েছে।”
তিনি সতর্ক করেন যে, এই সংঘাতকে ঘিরে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোও চুপচাপ অবস্থান নিচ্ছে কেউ কেউ প্রকাশ্যে ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক করছে, কেউ আবার নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডার প্রস্তুত রাখছে।
আদনানের ভাষায়, “যে যুদ্ধ ইরানের নামে ঘোষণা হয়, তার ক্ষত সবচেয়ে বেশি পড়ে গাজার শিশুদের মুখে।”
ইসরায়েল একদিকে হামাসকে ইরানের পা-চাটা বাহিনী বলছে, অন্যদিকে গাজার ওপর নির্বিচার বোমাবর্ষণ চালিয়ে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করছে। প্রশ্ন ওঠে এই যুদ্ধে আসলে ফিলিস্তিনিরা কি কেবল একটি দাবার গুটি?
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি তুলে ধরেছেন আবু তহা উম্মাহর চরম নীরবতা।“তারা প্রতিবাদ করে না, সাহায্য করে না, বরং দোয়ার পরিবর্তেও রাজনীতির ভাষায় নীরব থাকে। যে উম্মাহর আদর্শ নবীজি (সা.) বলেন ‘এক দেহের মতো’, সেই দেহ এখন পক্ষাঘাতগ্রস্ত।”
তাঁর মতে, ওআইসি (OIC) থেকে শুরু করে মুসলিম নেতৃত্বরা আজ বিভক্ত, ভীত এবং পরনির্ভরশীল। এই অবস্থায় মুসলিম জনতার জেগে উঠা ছাড়া মুক্তির উপায় নেই।
আবু তহা আদনান এ সংকট থেকে উত্তরণের পথ হিসেবে চারটি মূলনীতি তুলে ধরেন:
১.ঈমানভিত্তিক নেতৃত্বের চর্চা
কেবল রাজনৈতিক নয়, আধ্যাত্মিক নেতৃত্ব দরকার, যারা সাহসের সঙ্গে সত্য বলবে।
২.তথ্য-যুদ্ধের মোকাবিলা
মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া ও শিক্ষা ব্যবস্থায় মুসলিম যুবকদের সজাগ করা।
৩.ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা
শিয়া-সুন্নি নয়, সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য বোঝার মানসিকতা গড়ে তোলা।
৪.দোয়া ও কর্মের সমন্বয়
শুধু দোয়া নয়, কাফেলার প্রয়োজন—যারা সত্যের পক্ষে কাজ করবে।
এই যুদ্ধ কেবল বোমা ও গুলি নয়, এটি এক বিশ্বাসের লড়াই
ইসরায়েল ও ইরান যদি মুখোমুখি হয়, সেটি হয়তো ইতিহাসে রক্তাক্ত অধ্যায় হিসেবে লেখা হবে। কিন্তু আবু তহা আদনান বলেন, “এই রক্ত নয়, আমাদের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে আমরা আর চিন্তাই করবো না, অনুভবই করবো না। তখন মুসলিম জাতি শুধুই সংখ্যা, জাতি নয়।”
আফরোজা