
বর্তমান সময় অটোরিক্সা হয়ে দাঁড়িয়েছে এক মুখ্য আলোচনার বিষয়। অদৌ কি এটি এক মানবিক বিবেচনা নাকি অজুহাত? মানবিক বিবেচনা কেন বলা হচ্ছে তা নিয়ে প্রথমে আসি। অটোরিক্সা শুনলে অটোমেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরিকৃত কোনো প্রযুক্তি যা পায়ে টানা রিক্সার বিকল্প হিসেবে দারুণ হবে বলে মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা কি তাই বলে? না। অটোরিক্সা কোনো সরকারি বা বেসরকারি বৈধ কোনো চ্যানেলের মধ্য দিয়ে আসেনি। অনেকে আবার মনে করেন সরকার নাকি অটোরিক্সার পার্ট আমদানি করে থাকে, যা সত্য নয়। অটোরিক্সা মূলত চিন্তাশীল বিচক্ষণ ও ছিন্নমূল ব্যক্তিদের হাত ধরে এসেছে। যার পরিণতিস্বরুপ দেখা যাচ্ছে অব্যবস্থাপনা এবং পরিকল্পনার অভাব। অটোরিক্সার নেই কোনো নির্দিষ্ট আকার। নেই কোনো স্পিড লিমিট। না তারা মানে কোনো ট্রাফিকের নিয়ম-কানুন, না রয়েছে কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা। গ্রাম অঞ্চলে দেখা যায় টমটম নামের এক বাইক যা অনেকটাই একই রকম। আর প্রায়ই সময় শোনা যায় দুর্ঘটনার কথা। কিন্তু কেন? ঠিক যে কারণে অটোরিকশার এতো দুর্নাম ঠিক একই কারণে টমটম নামের বাহনও সেই কারণে কুখ্যাত।
গণঅভ্যুত্থান পূর্ববর্তী সময় বিগত সরকারের ভয়ে কেউই অটোরিক্সা নিয়ে ঢাকার সড়কে উঠা তো দূরে থাক, ঢাকায় আসতেও বেশ বেগ পোহাতে হতো। কিন্তু পটপরিবর্তনের পর ঢাকার রাস্তা যেন এক অটোরিক্সার দখলে। ঢাকা ধীরে ধীরে অটোরিক্সার নগরীতে পরিণত হচ্ছে। এতে কি ঢাকার সড়কে শৃঙ্খলা রয়েছে? না ঢাকা যেন আস্তে আস্তে মৃত্যুপরীতে পরিণত হচ্ছে। কত তাজা প্রাণ যে শুধু রিক্সার কারণে ঝরেছে শুধু এই এক বছরে তা কল্পনাতীত।
এখন প্রশ্ন আসতেই পারে সড়ক দুর্ঘটনা তো নতুন কিছু নয়। সেক্ষেত্রে এ আবার নতুন কি? অবশ্যই নতুন। কারণ যদি পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লক্ষ্য করলে দেখা যায় কত তাজা তাজা স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে এই বেপরোয়া অটোরিক্সা। এখন মানবিক বিবেচনায় অনেকেই বলবেন সেক্ষেত্রে কি এই যুগে এসেও মধ্যযুগীয় পন্থায় রিক্সা চালানোকে সমর্থন করবেন? না তা সমর্থনযোগ্য না। তাই বলে অপরিকল্পিত এবং অব্যবস্থাপনায় তৈরিকৃত অটোরিক্সাও সমর্থনযোগ্য নয়। আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় রিক্সা চালানোকে কি সমর্থন করেন? তাহলে আমি এক বাক্য না বলব। কারণ রিক্সা চালানো যতই কষ্টসাধ্য এবং পরিশ্রমের হোক না কেনো এর তেমন অর্থনৈতিক মূল্য নেই। যারা রিকশার ব্যবসা করেন তারা যদি অধিক আয়সম্পন্ন কোনো বৈধ্য ব্যবসা করেন তাহলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন হবে। দেশের নাগরিকরাও স্বাবলম্বী হবেন। এখন বলতে পারেন রিক্সা না থাকলে যাতায়াত করব কীভাবে? তার জন্য একটি ব্যবস্থার প্রস্তাব করা যেতে পারে। এলাকাভিত্তিক গোল্ফ ক্রোর্স বা বড় বড় রিসোর্টে ব্যবহার করা হয় এমন ছোট ছোট গাড়ি ব্যবহার করা যেতে পারে সাময়িকভাবে। উন্নত বিশ্বের আদলে রাস্তার সংস্কার করতে পারলেও অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আশা রাখা যায় সরকার ভবিষ্যতে সেই আদলে সঠিক সংস্কার করবে।
লেখক : সাংবাদিক
প্যানেল