
কর্ণফুলী নদী
আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের হৃৎপি- কর্ণফুলী নদীতে দখলমুক্ত করতে ব্যর্থ সকলেই। উচ্চ আদালতের আদেশ থাকা সত্ত্বেও এ নদীর দু’পাড় থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়ায় জনমনে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ক্ষমতাধর আসলে কে বা কারা?
কেননা, বিগত সরকারের সময়ে কয়েক দলীয় নেতা ও প্রভাবশালী মিলে কর্ণফুলী দখল করলেও, এখনো থেমে নেই নদী দখল। বরং দ্বিগুণ গতিতে কর্ণফুলীর দু’পাড়ে সকলে মিলেমিশে স্থাপনা নির্মাণ করে দখলদারিত্ব বজায় রাখছে। মূলত উচ্ছেদ না হওয়ায় দখলদার ও ভূমিদস্যুরা কর্ণফুলীর উভয় তীরে ছোটখাটো অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলছে। ফলে কর্ণফুলী যেমন সঙ্কুচিত, তেমনিভাবে নাব্য ও দিন দিন আরও হ্রাস পাচ্ছে।
সরকারি তথ্যমতে, কর্ণফুলীতে ২ হাজার ৪৯২ অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। তবে এ সংখ্যা বর্তমানে অনেক বেড়েছে। কারণ ২০১৫ সালেই ২ হাজার ১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করেছিল জেলা প্রশাসন। এরপর ২০২৩ সালে ২ হাজার ৪৯২টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। কর্ণফুলী রক্ষায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সকল সরকারি সংস্থা একযোগে অভিযানে না নামলে গুরুত্বপূর্ণ এ নদী দখল ঠেকানো যাবে না বলছেন পরিবেশবাদীরা।
চট্টগ্রামে নদী রক্ষা ও পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বলছেন, কর্ণফুলী নদীর আশপাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, নদী দখল করে বিভিন্ন ইজারা বাতিল, দু’পাড়ে ভূমিদস্যুদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা এবং স্থানীয় প্রশাসনকে কার্যকর করতে পারলে কর্ণফুলী রক্ষা সম্ভব। জেলা প্রশাসন ও নদী রক্ষা কমিশনের ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী কর্ণফুলী নদী সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও দখল করেছেন। বিভিন্ন ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, বস্তি, কলোনী, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে কর্ণফুলী দখল করা হয়েছে।
কর্ণফুলীর দু’পাড়ে দোকানপাট, ঘরবাড়ি, বড় বড় দুই ডজন বস্তি গড়ে উঠেছে। সহ¯্রাধিক অবৈধ স্থাপনা কর্ণফুলীকে গিলে খাচ্ছে। আইনত নদীর তীর কোনভাবে ইজারা দেওয়া যায়নি। কিন্তু বিভিন্ন সংস্থা বারবার কর্ণফুলী নদীর দু’পাড়সহ বিভিন্ন স্পট ইজারা দিয়েছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে। ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে মহামান্য হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ কর্ণফুলীর পাড়ে অবৈধ স্থাপনা অপরসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে উচ্ছেদ কয়েক দফা হলেও বড় ধরনের কোন উচ্ছেদ চোখে পড়েনি।
বিগত কয়েক বছর যাবত কর্ণফুলীর দু’পাড় রক্ষায় কোন সংস্থা এগিয়ে আসেনি। কর্ণফুলীর পাড় ঘুুরে দেখা গেছে, নগরীর চাক্তাই থেকে ভেড়া মার্কেট পর্যন্ত এখন হাজার হাজার মানুষের বসতি। নতুন ফিশারিঘাট থেকে চাক্তাই পর্যন্ত গড়ে উঠেছে প্রায় ১২টি বস্তি। এ ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবেও কর্ণফুলীর পাড়ে চাক্তাই আশপাশের চরে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার নাম ভাঙিয়ে সাইনবোর্ড লাগিয়ে কয়েকজন ভূমিদস্যু একের পর এক গড়ে তুলছে স্থাপনা ও বস্তি। সেখানে রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ ও পানির ব্যবস্থাও। নদী দখল করে গড়ে তোলা দোকানগুলোতে রয়েছে বৈদ্যুতিক সংযোগ।
কর্ণফুলীকে চিড়েচ্যাপ্টা বানানো হলেও এসব বিষয়ে কেউ দেখছেন না ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে না। ফলে চাক্তাই, শাহ আমানত ব্রিজ সংলগ্ন নদীর পাড় গিলে খাচ্ছে চিহ্নিত দখলকারীরা। গড়ে তুলেছে তারা মাদক ও সন্ত্রাসের সা¤্রাজ্য। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর নতুন দখলবাজ ও ভূমিদস্যুরা কর্ণফুলীর উভয় পাড় গিলে খাচ্ছে।
কর্ণফুলী নদীর তীর দখল করে বালুমহাল, ট্রাক স্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন রকম স্থাপনা আগের মতোই বহাল রয়েছে। শুু পাল্টেছে ভূমিদস্যুদের চেহারা। পরিবেশবাদীরা বলছেন, এনতিতেই কর্ণফুলীর নদীর পাড়ের শতাধিক শিল্প কারখানার বর্জ্য পরিশোধন ছাড়া সরাসরি নদীতে পড়ে দূষণ হচ্ছে।
এর পাশাপাশি কর্ণফুলী দখল হয়ে সরু হচ্ছে নদীটি। ফলে কর্ণফুলীকে পরিকল্পিতভাবে মেরে ফেলা হচ্ছে। অথচ কর্ণফুলী বাঁচলে দেশ বাঁচবে।