ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য: হাঙর বাঁচে গাণিতিক নিয়মে, সূত্র মেনে চলে তাদের দৈহিক কার্যক্রম

প্রকাশিত: ১৬:৫৮, ২১ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৬:৫৯, ২১ জুন ২০২৫

গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য: হাঙর বাঁচে গাণিতিক নিয়মে, সূত্র মেনে চলে তাদের দৈহিক কার্যক্রম

ছবি: সংগৃহীত

বিশালাকৃতির ভয়ংকর হাঙরের শরীরজুড়ে অক্সিজেন, তাপ ও পুষ্টি পৌঁছে দেওয়া সহজ কোনো কাজ নয়। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই জটিল প্রক্রিয়াকে সহজ করতে হাঙর নাকি মেনে চলে একটি প্রাচীন গাণিতিক সূত্র! সম্প্রতি ‘রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

অস্ট্রেলিয়ার জেমস কুক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, হাঙরদের দেহ গঠনের পেছনে রয়েছে ‘টু-থার্ডস স্কেলিং ল’ বা দুই-তৃতীয়াংশ স্কেলিং আইন। এই গাণিতিক সূত্র অনুসারে, যখন প্রাণীর দৈর্ঘ্য বাড়ে, তখন তাদের শরীরের পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল বাড়ে দৈর্ঘ্যের বর্গের হারে আর আয়তন বাড়ে ঘনক হারে। এর ফলে আয়তনের তুলনায় পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফলের বৃদ্ধি ধীরগতির হয়—যা সরাসরি প্রভাব ফেলে দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, শ্বাসপ্রশ্বাস ও পুষ্টি সরবরাহে।

বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যায়, হাঙরের ফুসফুস বা ফুলকার মাধ্যমে যেভাবে অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বন ডাই–অক্সাইড নির্গমন ঘটে, তা নির্ভর করে দেহের পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফলের ওপর। আবার শরীরে অক্সিজেন পরিবহনের কাজটি নির্ভর করে দেহের আয়তনের ওপর। তাই পৃষ্ঠ ও আয়তনের এই অনুপাত হাঙরের মতো প্রাণীদের টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গবেষণার অন্যতম সদস্য বিজ্ঞানী জোডি এল রামার জানান, তারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ৫৪ প্রজাতির হাঙরের পৃষ্ঠ ও আয়তন পরিমাপের জন্য উন্নত থ্রি–ডি মডেল ব্যবহার করেছেন। এতে ব্যবহার করা হয়েছে ওপেন সোর্স সিটি স্ক্যান, ফটোগ্রামেট্রি ও ভিডিও গেম ডিজাইনারদের জনপ্রিয় সফটওয়্যার ‘ব্লেন্ডার’। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিটি হাঙরের শরীর ডিজিটালভাবে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সব হাঙরই অবিশ্বাস্যভাবে দুই-তৃতীয়াংশ স্কেলিং নিয়ম অনুসরণ করে।

প্রাথমিকভাবে গবেষকরা ক্ষুদ্র আকৃতির বামন ল্যান্টার্ন হাঙর (দৈর্ঘ্য মাত্র ২০ সেন্টিমিটার) নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। পরবর্তীতে তাঁরা বিশাল আকৃতির তিমি হাঙর (দৈর্ঘ্য ২০ মিটারেরও বেশি) পর্যন্ত বিশ্লেষণ করেন। সব আকারের হাঙরেই একই গাণিতিক অনুপাত অনুসরণ করার প্রবণতা লক্ষ্য করেন তারা।

গবেষকেরা বলছেন, পূর্বে এই সূত্রটি শুধুমাত্র কোষ, টিস্যু বা ছোট পোকামাকড়ের ক্ষেত্রে পরীক্ষা করা হতো। এবারই প্রথম বড় আকারের সামুদ্রিক প্রাণীর ওপর এই সূত্র প্রমাণিত হলো।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হাঙরদের এ অভিযোজন প্রক্রিয়া আমাদের জীববিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে। শরীরের বৃদ্ধির প্রতিটি ধাপে তারা গাণিতিক এক সীমাবদ্ধতা মেনে চলে, যা তাদের বেঁচে থাকার কৌশলের অন্যতম মূল ভিত্তি। পরিবেশ বদলে গেলেও বা আয়তনে হাঙর ভিন্ন হলেও, গাণিতিক এই জৈব সূত্র তাদের জন্য অটুট থেকে যায়।

এই গবেষণাটি শুধু হাঙরের আচরণ বুঝতেই নয়, বরং বড় আকৃতির প্রাণীদের জৈবিক কার্যকারিতা ও অভিযোজন কৌশল বিশ্লেষণেও নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

 

সূত্র: এনডিটিভি।

রাকিব

×