
ছবি: জনকণ্ঠ
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ অফিসার ডা: শামীম আক্তারের উদাসীনতাসহ ও নানা অনিয়মের কারণে ভেঙ্গে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা। সরকারি হাসপাতালে দরিদ্র ও অসহায় রোগীরা সেবা নিতে এসে বঞ্চিত হয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চুরি হয়ে গেছে ফ্রিজ, মোটরসহ অন্য মালামাল। অবস্থার দৃষ্টে বোঝা যায় ৫০ শয্যার হাসপাতালটি নিজেই দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত। সরকারি বিধান না থাকলেও প্রতি শনিবার ডা: শামীম আক্তার ছুটি কাটান। তিনি প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার অফিস করে ঢাকায় নিজ বাসায় চলে যান, আর রবিবার এসে অফিস করেন। প্রয়োজন হলে শনিবার এসে অফিস করেন বলে স্বীকার করেন তিনি। অথচ তার অলিখিত ছুটি কাটানোর বিষয়টি জানেন না, জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সিভিল সার্জন। চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী ডা: শামীম আক্তারের আচরণে ক্ষুব্ধ। ফলে যথাযথ সেবা না পাওয়ায় কমে যাচ্ছে রোগী ভর্তির সংখ্যা।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান কর্মকর্তা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ অফিসার ডা: শামীম আক্তার প্রতি সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার কর্মস্থলে থাকেন না। এই দুইদিন তিনি ঢাকায় পরিবারের সাথে সময় কাটান। শুধু শুক্র-শনিবারই নয়, মাঝে মাঝে তিনি নানা অজুহাতে কর্মস্থলে থাকেন না। অথচ, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মৌখিক বা লিখিত কোনো ছুটি নেয়ার প্রয়োজন মনে করেন না তিনি। প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমার বাসা ঢাকায়, আমার একটা পরিবার আছে, তাদেরকে সময় দিতে হয়।” সরকারি বিধান রয়েছে, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলকভাবে কর্মস্থলে অবস্থান করতে হবে এবং উপজেলার ভৌগোলিক অধিক্ষেত্রের বাইরে যেতে হলে সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জনের অনুমতি গ্রহণ করতে হবে।’ কিন্তু তিনি এই নিয়মের কোন তোয়াক্কাই করেন না। তিনিসহ চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতির বায়োমেট্রিক মেশিনের প্রিন্ট কপি চাওয়া হলে তা দিতে অস্বীকার করেন। এদিকে হাসপাতাল থেকে ফ্রিজ, মোটর ও চেয়ার চুরি হয়ে গেছে বলে তিনি স্বীকার করেছেন। অন্যদিকে এ্যানেস্থেসিয়া না থাকায় গত ৫ মাসে হাসপাতালে সিজার হয়েছে মাত্র ৩টি। অথচ, দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে আশপাশের ক্লিনিকগুলোতে অসংখ্য রোগীর সিরাজ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবা বঞ্চিতরাই প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোর শরণাপন্ন হতে বাধ্য হচ্ছেন।
এছাড়াও রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট তো আছেই। চিকিৎসক, অফিস সহকারী, অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা প্রহরী, আয়া-পিয়ন, সুইপার, বাবুর্চিসহ চাহিদার বিপরীতে অর্ধেকেরও কম জনবল রয়েছে। স্বল্পসংখ্যক জনবল দিয়ে বিপুলসংখ্যক রোগীর সেবা দেওয়া কঠিন বলে তিনি সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন। অথচ জনবল পূরণে তার তেমন কোন জোড়ালো ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নিকট চাহিদাপত্র দিয়েই দায় মুক্তি হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি জরুরি রোগীরা হাসপাতালে জরুরি ওষুধ না পেয়ে বাইরের ফার্মেসি থেকে ওষুধ, গজ, তুলাসহ অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয় করে আনেন।
হাসপাতালে ভর্তি রাজৈর উপজেলার সত্যবতী গ্রামের শাহিন মিয়া, পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের শহীদ জানান, “এখানকার কতিপয় কর্মচারী ও নার্সদের সেবার মান ভাল।” তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক‘জন কর্মচারী জানান, “হাসপাতালের দোতলা থেকে মূল্যবান ভারী মালামাল চুরি হওয়ার পর থেকে স্যার নানাভাবে আমাদের হয়রানি করছেন। তার এহেন আচরণে আমরা ক্ষুব্ধ। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধারের দাবী জানাচ্ছি।”
রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা: শামীম আক্তার মোবাইলে বলেন, “শুক্রবার ও শনিবার আমি ঢাকায় থাকি, আমার বাসা ঢাকায়, পরিবারকে সময় দিতে হয়। বেশি প্রয়োজন হলে কোন কোন শনিবার ডিউটি করি। তবে সরাসরি প্রশ্ন করা হলে তিনি মোবাইলে বলা কথাগুলো অস্বীকার করে বলেন, “শনিবার আমি স্টেশনে থেকেই অফিস করি। তবে নিরাপত্তাহীনতা, ভারী মালামাল চুরি, জনবল সংকট, সিজারিয়ান, ওষুধপত্র সংকট ও চিকিৎসা সামগ্রী সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, “এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নিকট চাহিদাপত্র দিয়েছি। আশা করি অচিরেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।” তবে ছুটি না নিয়ে শনিবার অনুপস্থিতির কথাটি কৌশলে এড়িয়ে যান তিনি।
মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা: শরিফুল আবেদীন কমল বলেন, “যে সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাথে হাসপাতাল রয়েছে, সেখানকার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তারা শনিবার অনুপস্থিত থাকতে পারবেন না। আর তা ছাড়া রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা: শামীম আক্তার আমাকে মৌখিকভাবে বলেনি এবং লিখিত ছুটিও নেয়নি।”
সাব্বির