
ছবি: সংগৃহীত
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০১৮ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও এখনও ৩১ শয্যার জনবল নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন চিকিৎসাসেবায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
জনবল সংকট, চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবহারে অদক্ষতা এবং অব্যবস্থাপনা সবমিলিয়ে উপজেলার প্রায় ৪ লাখ মানুষের একমাত্র সরকারি হাসপাতালটি কার্যত নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত। ৭ বছর আগে এ হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও প্রয়োজন অনুযায়ী জনবল নিয়োগ হয়নি।
হাসপাতালের ৪টি কনসালটেন্ট পদের ১টি ছাড়া বাকি ৩টিই শূন্য। জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), (সার্জারি), এবং (এনেসথেসিয়া) পদে কেউ নেই। গাইনী কনসালটেন্ট ডা. খাদিজা রহমান শিল্পী কমলগঞ্জ থেকে বেতন-ভাতা নিলেও বর্তমানে প্রেষণে ঢাকায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে কর্মরত রয়েছেন।
মেডিকেল অফিসার পদে ২টি, সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে ৫টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (এসআই ও রেডিওগ্রাফি) পদে ২টি, কার্ডিওগ্রাফার, ওয়ার্ড বয় এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে ১টি করে শূন্য পদ রয়েছে। এছাড়া, প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা ডিজিটাল এক্স-রে, ইসিজি এবং আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন থাকলেও টেকনিশিয়ান না থাকায় সেগুলো চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে রোগীদেরকে বাইরে ব্যয়বহুল প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। দুইটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে চালকের অভাবে একটি অকেজো হয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।
কমলগঞ্জের পাশাপাশি কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের মানুষও সেবা নিতে আসেন এই হাসপাতালে। প্রতিদিন কয়েকশো রোগী বহির্বিভাগ ও অন্তঃবিভাগে চিকিৎসা নিতে এসে বঞ্চিত হন কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে।
চিকিৎসক সংকট থাকায় অনেক রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে স্থানান্তর করা হয় জেলা সদরের হাসপাতালে। গুরুতর রোগীদের স্থানান্তর নিয়ে বিপাকে পড়েন সেবা নিতে আসা দরিদ্র পরিবারগুলো। স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা না হওয়ায় মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েন অনেক রোগী।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে নিয়মিত ওষুধ থাকে না, টেস্ট করানো সম্ভব হয় না, ওয়ার্ডে বেড ও বাথরুম অপরিচ্ছন্ন, এবং পেছনের অংশে ময়লার স্তূপ জমে থাকায় রোগীরা নোংরা পরিবেশে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে আমাদের অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হয়। সব কর্মী আন্তরিকতার সহিত সেবা দিলেও জনবল বাড়ানো না হলে টেকসই সমাধান সম্ভব নয়। এ হাসপাতালটিতে উন্নত সেবা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদে দ্রুত জনবল নিয়োগ এবং পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ ও যন্ত্রপাতি সচল করার পদক্ষেপ গ্রহণের দীর্ঘদিনের দাবি এলাকাবাসীর।’
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া জনকণ্ঠকে জানান, ৫০ শয্যার অবকাঠামো থাকলেও কার্যক্রম চলছে ৩১ শয্যার জনবল দিয়ে। ইসিজি মেশিন চালু আছে, এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম চালুর জন্য টেকনিশিয়ান নিয়োগে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ রয়েছে, তবে চাহিদা বেশি থাকায় মাঝে মধ্যে ডায়াবেটিসের ওষুধ শেষ হয়ে যায়, দ্রুত সময়ের মধ্যে তা আবার সরবরাহ করা হয়।
আহমেদুজ্জামান (আলম)/রাকিব