ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

নোয়াখালী চৌমুহনীর ফলমন্ডিতে আমের সরবরাহ এবার প্রচুর, দামও সহনীয়

গিয়াসউদ্দিন ফরহাদ, নোয়াখালী

প্রকাশিত: ১৮:০৩, ২১ জুন ২০২৫

নোয়াখালী চৌমুহনীর ফলমন্ডিতে আমের সরবরাহ এবার প্রচুর, দামও সহনীয়

বৃহত্তর নোয়াখালী প্রধান বানিজ্যিক কেন্দ্র চৌমুহনী রেলগেইটস্থ ফলমন্ডি এখন আমের ঘ্রাণে ম-ম করছে। গেল বছরের তুলনায় এবার আম্রপালি, হিমসাগর, ল্যাংড়া, হাঁড়িভাঙাসহ রকমারি আমে ভরপুর। মৌসুমী ফলের আড়ৎ পট্টিখ্যাত এই চির চেনা বাজারে ক্রয়-বিক্রয় ব্যস্ত সময় পার করছেন আড়তদারেরা।

শনিবার ফলমন্ডিতে গিয়ে শ্রমিকদের ব্যস্ততা চোখে পড়ল। তাঁদের কেউ ট্রাক থেকে আমের ঝুড়ি নামাচ্ছিলেন। আবার কেউ খুচরা বিক্রেতার সঙ্গে আমের দর-কষাকষি করছিলেন। কেউ আবার আম তুলে দিচ্ছিলেন ট্রাক-পিকআপ ও টেম্পুতে।

গেল বছরের তুলনায় বাজারে এবার আমের দাম কিছুটা কম। প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে একেক জাতের আম। বাজারে এখন সবচেয়ে বেশি চলছে হিমসাগর, আম্রপালি, হাঁড়িভাঙা। 

খোকন মিয়া নামের এক আড়তদার জানালেন, বৃহত্তর নোয়াখালীর লক্ষ্মীপুরসহ অনেক বাজারে এ আড়ৎ থেকে আম বিক্রি হয়ে থাকে। প্রতিবছর আমের মৌসুমটা আম ব্যবসায়ীদের ভালো কাটে। অবসর সময়ে সুস্বাদু আম খেয়ে দেখেন তাঁরা। তরতাজা মিষ্টি একটুকরা আম মনটা ভালো করে দেয়।

বিশাল এ ফলমন্ডির ব্যবসায়ীদের এখন কেবল বসার জায়গাটুকুই আছে। সেখানে সুধু একটি ক্যাশবাক্স আর একটি চেয়ার। অবশিষ্ট পুরো জায়গা দখল করে আছে ছোট-বড় আমের শত শত ঝুড়ি। 

দোকানে গিয়ে কথা হয় মালিক হানিফের সঙ্গে। তিনি আমের বেচাকেনার চিত্র তুলে ধরলেন। জানালেন, রাজশাহী, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর আম আসে এ ফলমন্ডিতে। বর্তমানে বাজারে সবচেয়ে ভালো আম হলো ব্যানানা ম্যাঙ্গো। এটি দেখতে কলার মতো লম্বা। সামান্য বাঁকানো। পার্বত্য চট্টগ্রাম, নওগাঁ, রাজশাহীর কয়েকটি জায়গায় এই আমের চাষ হয়। এটি পাইকারিতে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা দরে।

জাহাঙ্গীর নামের এক খুচরা ব্যবসায়ী আম কিনছিলেন ফলমন্ডিতে। তিনি ৪০ টাকা কেজি দরে ৭৫ কেজি হিমসাগর ও ৩৫ কেজি আম্রপালি কিনে নেন এই বিক্রেতা। তিনি ট্রলিতে ঘুরে ঘুরে বৃহৎ এ বানিজ্যিক কেন্দ্র চৌমুহনীর বিভিন্ন সড়কে আম বিক্রি করেন। অন্য সময় মৌসুমী ফল বিক্রি করলেও এখন আর কোনো ফল রাখছেন না। কেবলমাত্র আমই বিক্রি করছেন। আম্রপালি বিক্রি করছেন ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা। হিমসাগর ৬৫ টাকা।

চৌমুহনী ফল ব্যবসায়ী সমিতির হিসাবে ফলমন্ডি ও এর আশপাশের এলাকা মিলিয়ে অন্তত চার শতাধিক ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা মৌসুমভিত্তিক ফলের ব্যবসা করেন। ফলমন্ডি থেকে পাইকারি ও খুচরা দরে ফল বিক্রি হয়। বৃহৎ এ চৌমুহনী বাজারে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা, রাজশাহী, ভোলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আমসহ মৌসুমী ফল আসে।

বড় বড় ফলের আড়ৎদারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহী কিংবা নওগাঁয় আম এবার আগেভাগেই গাছ থেকে নামানো হয়েছে। যেমন নওগাঁর আম্রপালি বাজারে আসার কথা ছিল জুনের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়ের প্রায় ১৫ দিন আগে থেকেই বাজারে উঠতে শুরু করে আম্রপালি। শুধু আম্রপালি নয়, প্রায় সব জাতের আম এবার নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পেকে গেছে।

বৃহত্তর নোয়াখালীর বড় বড় বাজার সমূহের অলিগলিতে হাঁটলেই এখন নানা জাতের আম চোখে পড়বে। ভ্যানে করে এসব আম বিক্রি হচ্ছে। দামও হাতের নাগালেই। 

শনিবার করিমপুর এলাকায় ভ্যানে আম বিক্রি করছিলেন মৌসুমি বিক্রেতা জামাল হোসেন। তাঁর কাছে হিমসাগর ও আম্রপালি ছিল। জামাল জানান, ফলমন্ডি থেকে আম কিনে বিক্রি করছেন। প্রতি কেজি হিমসাগর বিক্রি করছেন ৬৫ টাকায়। আর আম্রপালি ৫৫ থেকে ৭৫ টাকা। বিক্রি ভালোই হচ্ছে।

কলেজ রোডে পাওয়া গেল ক্ষুদে ব্যবসায়ী সোহেলকে। তাঁর কাছে ছিল হিমসাগর, ল্যাংড়া ও হাঁড়িভাঙা। পাঁচ কেজি হাঁড়িভাঙা ব্যাগে ঢোকাতে ঢোকাতে সোহেল বলেন, বেশি লাভ করছিনা। কেনা পড়েছে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা। বিক্রি করছি ৫৫ টাকা দরে।

Jahan

×