
ছবি: জনকণ্ঠ
বর্ষার ছোঁয়ায় নাটোরের হালতি বিল রূপ নেয় এক স্বপ্নময় জলভূমিতে। দিগন্তবিস্তৃত পানির পর্দায় খেলে যায় ঢেউয়ের রঙ, আর সেই ঢেউয়ের বুকে নৌকার ছন্দময় চলাচল যেন প্রকৃতির সঙ্গে এক অপূর্ব সখ্যের প্রতিচ্ছবি। বিল পাড়ি দিয়ে চলা নৌকাগুলো ছুটে বেড়ায় এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে। স্বচ্ছ জলে নৌকাভ্রমণ দর্শনার্থীদের জন্য এক ভিন্নতর অভিজ্ঞতা এনে দেয়। এ কারণেই অনেকে একে ‘মিনি কক্সবাজার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
হালতি বিলের অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো, এখানকার জল আকাশের রঙ ধারণ করে। মেঘলা দিনে পানি ঘোলা দেখায়, আর নীল আকাশে তা হয়ে ওঠে স্বচ্ছ নীলাভ। ফলে আকাশের আবহেই বদলে যায় বিলের চেহারা। উজ্জ্বল দিনে দেখা মেলে নীলজলের, যা আরও আকর্ষণীয় করে তোলে পরিবেশকে।
নলডাঙ্গা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বর্ষায় জেগে ওঠে হালতি বিল। তখন এখানে চলে অসংখ্য শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকা। বিলের মাঝখানে ছড়িয়ে থাকা ছোট ছোট দ্বীপগ্রামগুলো সবুজ গাছপালায় ঘেরা, যা জলমগ্ন সাগরে ভেসে থাকা দ্বীপসমূহের মতো মনে হয়। অনেক গ্রামে রয়েছে দোতলা ইটের বাড়ি, যা হালতি বিলের সৌন্দর্যে যোগ করে নতুন মাত্রা।
প্রায় সাড়ে আট হাজার হেক্টরজুড়ে বিস্তৃত বিলের মাঝখানে রয়েছে এক ডুবন্ত সড়ক। শুষ্ক মৌসুমে যানবাহন চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হলেও বর্ষায় এটি তলিয়ে গিয়ে নৌকাই হয়ে ওঠে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। অনেকে এই ডুবে যাওয়া সড়কে দাঁড়িয়ে বা বাইকে চড়ে সমুদ্রতটের মতো অনুভূতি উপভোগ করেন।
রঙিন নৌকায় ঘুরে বেড়ান পর্যটকেরা। কেউ কেউ ঝাঁপ দিয়ে গা ভিজিয়ে স্নান করেন। বিশেষ করে ছুটির দিনে, শুক্রবারে পাটুলঘাট ও মাধনগর রেললাইন এলাকায় উপচে পড়ে মানুষের ভিড়। বর্ষায় বিলে আসে বারনই ও আত্রাই নদীর পানি, যা এলাকাটিকে রূপ দেয় এক বিশাল জলরাশিতে।
বিলের মাঝে থাকা ভূষণগাছা, খোলাবাড়িয়া, খাজুরা, নুরিয়া, বিলজোয়ানি, পাটুলসহ সাতটি গ্রাম বর্ষায় নৌকার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। বর্ষার পানি ভরা এই বিলে জন্ম নেয় দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ। শীতের শুরুতে পানি সরে গেলে পুটি, বোয়াল, বাইন, ভেদা, চিংড়ি, টাকি প্রভৃতি মাছ ধরা হয়, যা উত্তরাঞ্চলের মোকামে পাঠানো হয়।
পাটচাষিরা বর্ষায় বিলে সোনালি আঁশ জাক দেন। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে এখানে বিরল প্রজাতির ‘হালতি’ পাখি থাকত, সেই পাখি শিকারে ব্রিটিশরা আসত বলেই বিলের নাম হয় হালতি বিল।
স্থানীয় যুবক মৃদুল রনি জানান, নাটোর শহরের মাদরাসা মোড় থেকে ৩৫-৪০ টাকায় সহজেই হালতি বিলে যাওয়া যায়। পাটুলঘাটে হোটেল না থাকলেও খাবারের ব্যবস্থা আছে।
ভ্রমণপিপাসু সাইফুল ইসলাম বলেন, বিলের সৌন্দর্য তাকে মুগ্ধ করেছে। বিশেষ করে পানির মাঝে থাকা গ্রামগুলোর চারপাশে ইটের বাঁধ তিনি খুবই পরিকল্পিত মনে করেছেন।
খোলাবাড়িয়া গ্রামের মাঝি জেহের আলী জানান, বর্ষায় নৌকা চালিয়েই চলে জীবিকা। প্রতিদিন আয় হয় এক হাজার থেকে বারোশো টাকা। শুক্রবারে বেড়ে যায় যাত্রী আর আয়। একটি নৌকায় দু’জন মাঝি মিলে ৭০-৮০ জন যাত্রী ঘুরিয়ে আনেন। জনপ্রতি ৪০-৫০ টাকা ভাড়া নেন তারা।
শহীদ