ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

প্রশাসনের নাকের ডগায় কুটির শিল্প মেলার নামে অশ্লীল নৃত্য ও লটারির ফাঁদ

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ২১ জুন ২০২৫

প্রশাসনের নাকের ডগায় কুটির শিল্প মেলার নামে অশ্লীল নৃত্য ও লটারির ফাঁদ

ছবি: জনকণ্ঠ

বরিশাল সেনানিবাসের সন্নিকটে পায়রা সেতুর উত্তর প্রান্তে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের পাশে গত মে মাসের ১৫ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে গ্রামীণ ও কুটির শিল্প মেলা। আর এই মেলার শুরু থেকেই মেলার নামে চলছে র‌্যাফেল ড্র’র রমরমা জুয়া বাণিজ্য। উঠতি বয়সের ছেলেরা এবং সাধারণ মানুষ লোভে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে লটারি নামক জুয়ার খপ্পরে। দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে গ্রামে গ্রামে মাইকিং করে চিত্রজগতের নায়িকাদের দিয়ে মঞ্চে চলছে অশ্লীল নৃত্য। 

অথচ গ্রামীণ ও কুটির শিল্প মেলায় নেই কোনো স্থানীয় শিল্পের সমাহার। গৎবাঁধা জুতা, স্যান্ডেল, কাপড়, আচার, খেলনা, চটপটি আর পকেট কাটার নানা কৌশল। লটারি সহ মেলার ভিতরে টিকিট কাটার (যাদু, সার্কাসসহ ১২টি ইভেন্ট) নানা আইটেম থাকলেও সরকারি কোষাগারে এক টাকাও রাজস্ব জমা হয়নি। অথচ মেলা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় প্রায় চার শতাধিক অটোরিকশায় মাইকিং করে লটারি বিক্রি করে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা লুটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রশাসনের নাকের ডগায় দেড় মাসব্যাপী কুটির শিল্প মেলার নামে অপকর্ম চললেও যেন দেখার কেউ নেই। করোনা-কালীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে মেলার মাঠে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হচ্ছে। আর প্রতিদিন বিকেল থেকে গভীর রাত অবধি চলছে উচ্চ স্বরে মাইক বাজিয়ে মেলার কার্যক্রম। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না থাকায় মেলার সামনের ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে যানবাহনের জটলা লেগেই থাকে।

এমনকি মেলার মাঠে কেউ প্রবেশ করতে হলে তাকে প্রথমেই একটি র‌্যাফেল ড্র’র ২০ টাকায় লটারি টিকিট কিনতে হয়। হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায়, গ্রামে-গ্রামে ঘুরে ঘুরে মাইকিং করে আকর্ষণীয় পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে এভাবেই হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে গ্রামে গ্রামে মাইকিং করে চিত্রজগতের নায়িকাদের দিয়ে মঞ্চে অশ্লীল নৃত্য ও মোহনীয় পুরস্কারের লোভ দেখিয়ে বেশি টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। সেই লটারির পুরস্কারের তালিকায় রয়েছে মোটরসাইকেলসহ তিন ভরি ওজনের স্বর্ণ অলংকারসহ নানা সামগ্রী।

বাকেরগঞ্জ উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, কুটির শিল্পের নামে লটারি বাণিজ্যের এই মাঠ বাকেরগঞ্জ উপজেলাতে হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষ। মেলায় উচ্চস্বরে গান-বাজনার কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে এবং লটারি প্রলোভনে ছেলে-মেয়েরা বারবার টাকা চায়। অনেক দিনমজুর রয়েছে যারা বাজার না করেও সেই টাকা দিয়ে লটারি কিনে এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।

বরিশাল জেলা প্রশাসক মোঃ দেলোয়ার হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, বরিশালের গ্রামীণ ও কুটির শিল্প মেলায় লটারি বিক্রির কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। যদি কেউ বেআইনিভাবে এই লটারি টিকিট বিক্রি করে থাকে, খুব শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা আফরোজ জনকণ্ঠকে বলেন, মেলার নামে যদি কেউ লটারি বিক্রয় করে থাকে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে তাদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মুমু ২

×