ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

দোহারের জয়পাড়া খাল যেন মশার নিরাপদ প্রজননক্ষেত্র

বিপ্লব ঘোষ, দোহার-নবাবগঞ্জ, ঢাকা

প্রকাশিত: ১১:০৫, ২১ জুন ২০২৫

দোহারের জয়পাড়া খাল যেন মশার নিরাপদ প্রজননক্ষেত্র

ঢাকার দোহারের মৈনট ঘাটে পদ্মার সাথে সংযোগ সরু ইছামতি নদীর। কেউ কেউ খালও বলেন। সেই খাল দিয়ে প্রতি বছর প্রচন্ডবেগে পানি প্রবাহিত হয়ে নবাবগঞ্জের সাদাপুরে মূল ইছামতি নদীর প্রাণ সঞ্চার করে। কিন্তু এ বছর দোহারের জয়পাড়া বাজার সংলগ্ন খালে কচুরিপানার স্তুপে পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করছে। আর এতেই জয়পাড়া খালের পানি পঁচে মশার নিরাপদ প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

 

স্থানীয়রা বলেছেন, এই কচুরিপানা শুধু পানি প্রবাহেই বাধা সৃষ্টি করছে না, মশা প্রজননের নিরাপদ স্থান হিসেবেও পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাসা বাড়িতে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে যায় এলাকাবাসী। ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিবাসীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক। এলাকাবাসীর দাবি কচুরিপানার এই স্তুপ অপসারণ করা গেলে সুফল পাবে এলাকাবাসী। বিশেষজ্ঞদের দাবি, মশার প্রকোপও অনেকাংশে কমে যাবে।


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক কীটতত্ববিদ প্রফেসর ড. কবিরুল বাশার ‘জনকণ্ঠকে’ বলেন, মশা উৎপাদনের নিরাপদ প্রজননক্ষেত্র হচ্ছে কচুরিপানা। এখানে জন্ম নেয়া মশার কামড়ে গোদ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ রোগে পা অস্বাভাবিক ফুলে যায়। এ থেকে রেহাই পেতে দ্রুত কচুরিপানা অপসারণের উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান তিনি।

 

সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা ‘জনকণ্ঠকে’ বলেন, গত বুধবার আমরা জয়পাড়া খালটি পরিদর্শন করেছি। অল্প একটু জায়গা জুড়ে আটকে আছে কচুরিপানা। কিন্তু এগুলো অপসারণে উপজেলা প্রশাসনের কোনো উদ্যোগই নেই। এলাকাবাসী কিংবা কোনো রাজনৈতিক দলেরও কোনো ভূমিকা নেই। অথচ ঢাকার বাইরে বেশ কিছু স্থানে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের ছাত্র সংগঠন এলাকার নানা সমস্যা সমাধানে প্রশংসনীয় নানা উদ্যোগ গ্রহন করছেন।

 

তিনি উল্লেখ করে জানান, বগুড়ার শিবগঞ্জে বিএনপির স্বেচ্ছাশ্রমে বেহাল রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। সংগঠনটি সামাজিক দায়িত্ববোধ গড়ে তুলতেই এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে এলাকার মানুষ খুবই খুশি। একইভাবে ময়লা-আবর্জনায় পূর্ণ চট্টগ্রাম নগরীর একটি খালের প্রাণ ফেরাতে পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উদ্যোগ নিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াত ইসলামী। জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীর বাকলিয়ায় বির্জা খাল পরিচ্ছন্ন করার জন্য জামায়াতের এ উদ্যোগ এলাকাজুড়ে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। তবে জনবান্ধব এমন কর্মসূচি পালনে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে দোহার নবাবগঞ্জ বিএনপি-জামায়াতের।  


দুই উপজেলার কয়েকজন বিশিষ্টজন জানান, ঢাকার নবাবগঞ্জ ও দোহারে অবস্থিত ইছামতি নদী। একসময় এই নদীই ছিল এই অঞ্চলের মানুষের জন্য আশির্বাদ। যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌযান। ঢাকার সদরঘাট থেকে নবাবগঞ্জ উপজেলার বান্দুরা ও হাসনাবাদ পর্যন্ত বড় বড় স্ট্রিমার ও লঞ্চ চলতো। জয়পাড়া খাল দিয়েও চলত বিভিন্ন নৌযান। কিন্তু পানি না থাকায় এখন নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

 

জানা যায়, ২০০০ সালের দিকে ইছামতি নদীর উৎপত্তিস্থল নবাবগঞ্জ-দোহার ও হরিরামপুরের পদ্মাপাড়ে  অপরিকল্পিত একটি বাঁধ দেয়া হয়। মূল অংশে স্লুইস গেট না দেয়ায় ইছামতি নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে কচুরিপানা দুর্ভোগ। প্রতিবছর দুই উপজেলাবাসীকে নানা দুর্ভোগ ভোগ করতে হচ্ছে। গ্রীষ্ম মৌসুমে কচুরিপানা পচে যাওয়ায় কৃষিকাজেও ব্যবহার করা যাচ্ছে না নদীর পানি। নষ্ট পানির দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ নদীপাড়ের মানুষ। এতে দোহার ও নবাবগঞ্জবাসীকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। সংস্কারের অভাবে পদ্মা নদীর সঙ্গে সংযোগ জয়পাড়া খালও এখন মৃতপ্রায়। এখন বর্ষা মৌসুমেও আর আগের মতো পদ্মার পানি এই খাল দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে না। শুধু তা-ই নয়, কচুরিপানার কারণে ইছামতিতে বর্ষা মৌসুমেও নৌযান চলাচল করতে পারছে না। সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দেয় যখন কচুরিপানা পচে পানি নষ্ট হয়ে যায়। তখন মাছগুলোও মারা যায়। পচা কচুরিপানার দুর্গন্ধে নদীপাড়েরর মানুষের বসবাস মুশকিল হয়ে যায়। উপজেলার বাগমারা থেকে কাশিয়াখালী এবং বান্দুরা থেকে কার্তিকপুর পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার অংশজুড়ে জন্মেছে ঘন কচুরিপানা। কচুরিপানার কারণে কোথাও পানি দেখারও উপায় নেই।

আঁখি

×