ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

সুফিয়া কামালকে নিবেদিত ছায়ানটের বর্ষাবন্দনা

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:১৫, ২১ জুন ২০২৫

সুফিয়া কামালকে নিবেদিত ছায়ানটের বর্ষাবন্দনা

.

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে চলছে এখন বর্ষাকাল। সেই সুবাদে প্রায়শই আকাশ গড়িয়ে ঝরছে জলধারা। কখনোবা অঝোর ধারায় আবার কখনো রিমঝিম বৃষ্টি ঝরছে। শুক্রবারও ঝিরিঝিরি বারিধারায় সিক্ত হয়েছে শহর ঢাকা। আর এমন দিনে রূপময় ঋতু বর্ষার বন্দনায় মেতে উঠল ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তন।
আষাঢ়ের সন্ধ্যায় সেথায় বয়ে গেল সুরের স্রোতধারা। বাণীময় সুরেলা শব্দধ্বনিতে উচাটন হলো শহরে সুররসিকদের অন্তর । ভালোলাগার অনুভবে  ঝরলো করতালি। ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জননী সাহসিকা কবি সুফিয়া কামালের জন্মদিন উদ্যাপনে তাকে নিবেদিত এই বর্ষার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গান ও রাগালাপে সজ্জিত ছিল পরিবেশনা পর্ব। খ্যাতিমান থেকে উদীয়মান কণ্ঠশিল্পীরা শুনিয়েছেন গান।
ইফ্্ফাত আরা দেওয়ানের পরিবেশনায় অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এসময় শিল্পী জানিয়ে দেন তার গলায় সুফিয়া কামাল শুনতে পছন্দ করতেন ‘আমারে তুমি অশেষ করেছ’ গানটি। এরপর প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ার আকুলতার প্রকাশে গেয়ে শোনান- আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার/পরানসখা বন্ধু হে আমার/আকাশ কাঁদে হতাশ-সম ...। গানের আগে স্মৃতিচারণে শিল্পী বলেন,  বর্ষার দিনে আসত সুফিয়া কামালের জন্মদিন। এ সময়টায় ছায়ানট থেকে দলবেঁধে সবাই তার বাড়িতে যেতাম। সন্্জীদা খাতুন, ওয়াহিদুল হক ছাড়াও এ দলে থাকতেন সেলিনা আপা, সারওয়ার ভাই, মফিদুল ভাই। আমরা তো একটা পরিবার ছিলাম। ওনার ওই বারান্দাটায় ফুলে ভরা থাকত। দোলনচাঁপা, বেলি ফুলের মালা আর রজনীগন্ধা। এর ভেতর বারান্দায় খালাম্মা চেয়ারে বসে থাকতেন। আমরা মেঝেতে বসে একে একে গান শোনাতাম। প্রত্যেক বছরেরই এটা একটা রীতি ছিল। সেসব কথা কখনো ভুলি না। এরকম কত কত ঘটনা ও স্মৃতি রয়েছে সুফিয়া কামালকে ঘিরে। যখন থেকে ছায়ানট হয়েছে তখন থেকেই এর সঙ্গে রয়েছেন সুফিয়া কামাল। না থেকেও তিনি আছেন। তাই তাকে বাদ দিয়ে কিছুই ভাবা যায় না।
সুর-তাল ও লয়ের খেলায় শুদ্ধসারং রাগাশ্রিত পরিবেশনা উপস্থাপন করেন উষসী নাগ। বাদল দিনে ভাব-ভালোবাসার প্রকাশে জাতীয় কবি নজরুলের সুরবাণী নিয়ে মঞ্চে আসেন শ্রাবন্তী ধর। দরদী কণ্ঠে গেয়ে শোনান- ঝর ঝর বারি ঝরে অম্বর ব্যাপিয়া/এসো এসো মেঘমালা প্রিয়া প্রিয়া ...। দেশ রাগের আশ্রয়ে আপন পরিবেশনা উপস্থাপন করেন সুদীপ্ত শেখর দে। সত্যম কুমার দেবনাথ শুনিয়েছেন- এসো শ্যামল সুন্দর/আনো তব তাপহরা তৃষাহরা সঙ্গসুধা ...। ছায়ানট রাগকে সঙ্গী করে পরিবেশনা উপস্থাপন করেন স্বপ্না সাহা। মেঘলা আবহে ভালোবাসার ভাব প্রকাশে সেঁজুতি বড়–য়া গেয়ে শোনান-  গোধূলিগগনে মেঘে ঢেকেছিল তারা/আমার যা কথা ছিল হয়ে গেল সারা ...।  কেদার রাগে সুরের পথরেখায় পরিভ্রমণ করেন সিরাজুম মুনিরা। নুসরাত জাহান রুনা গেয়েছেন- বহু যুগের ওপার হতে আষাঢ় এল আমার মনে/ কোন্ সে কবির ছন্দ বাজে ঝরো ঝরো বরিষণে ...।  প্রিয়ন্তু দেব পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল  ‘মেঘমেদুর বরষায়’। জয়জয়ন্তী রাগ পরিবেশন করেন সমুদ্র শুভম। তাহমিদ ওয়াসীফ ঋভু গেয়ে শোনান ‘আমার দিন ফুরালো’ শীর্ষক সংগীত। দেশমলার রাগাশ্রিত পরিবেশনা উপস্থাপন করেন রিফাত আহমেদ। এছাড়াও বর্ষানির্ভর রাগালাপসহ গান  শুনিয়েছেন মিনহাজুল হাসান ইমন, মনীষ সরকার, ফারজানা আক্তার পপি, আফরোজা রুপা, সুস্মিতা দেবনাথ শুচি, অনন্যা আচার্য্য ও শারমিন সাথী ইসলাম ময়না। সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশিত জাতীয় সংগীতের সুরে শেষ হয় এ সংগীতাসর।

প্যানেল

×