
এক সময় গ্রামীণ জীবনের নিত্যচিত্র ছিল হাঁপ ধরা এক ধ্বনি, কাবাডি কাবাডি কাবাডি... কৃষিজীবী বাংলার শরীরী অভিব্যক্তি, বিনোদন আর সামাজিক বন্ধনের এক অনন্য মাধ্যম ছিল এই খেলা। ১৯৭২ সালে স্বাধীনতার পরপরই সরকার কাবাডিকে জাতীয় খেলার মর্যাদা দেয়, কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এই খেলাটি আজ অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে।
১৯৭৩ সালে সরকারিভাবে কাবাডিকে জাতীয় খেলার মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে সময়ের বিবর্তনে, প্রযুক্তির দৌড়ে আর শহরমুখী বিনোদনের দাপটে এই খেলাটি আজ অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে।তবু আশার কথা, এখনো দেশের নানা প্রান্তে কিছু তরুণ এই লোকজ খেলাকে ফিরিয়ে আনার প্রয়াস নিচ্ছেন। সম্প্রতি জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার বগারচর ইউনিয়নের টালিয়াপাড়ায় স্থানীয় তরুণদের স্বেচ্ছা উদ্যোগে আয়োজন করা হয় এক জমজমাট কাবাডি খেলা।
মাঠে প্রাণ, মাটিতে ঐতিহ্য, টালিয়াপাড়ার খোলা মাঠে গড়ে ওঠে জীবন্ত কাবাডির দৃশ্যপট। দুই দলে ভাগ হয়ে খেলোয়াড়রা ঝাঁপিয়ে পড়েন লড়াইয়ে। প্রতিপক্ষকে ছুঁয়ে, শ্বাস আটকে রেখে নিজের এলাকায় ফিরে আসার যে কৌশলী প্রয়াস, তা যেন শুধুই খেলা নয় একটি নিখুঁত মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ। দর্শকদের করতালি, চিৎকার আর উল্লাসে মাঠ মুহূর্তেই হয়ে ওঠে এক আনন্দমেলা। বয়স্করা স্মৃতিচারণে ভেসে যান, আর তরুণরা শিখে নেন হারানো ঐতিহ্যের স্পন্দন।হারিয়ে যায়নি, ফিরে আসছে, শহরের মাঠে হয়তো এখন কাবাডির জায়গা কমে এসেছে, তবে গ্রামের হৃদয়ে এই খেলা আজও বেঁচে আছে, সেই আগের মতোই মাটি ছুঁয়ে, ঘাম ঝরিয়ে, উল্লাসে ভাসিয়ে।
শুধু খেলাই নয়, এটা সংস্কৃতির দলিল, এই আয়োজনের মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হয়েছে৷ কাবাডি শুধু একটি খেলা নয়, বরং এটি বাংলার সামাজিক ইতিহাসের অংশ। মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য, ঐক্য ও সাহসিকতার মূর্ত প্রতীক এই খেলা আজও মানুষকে একত্র করে, হাসায়, আর শেখায় জয়ের স্বপ্ন।
রাজু