ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও ঢাকার পাশে পাকা হয়নি রাস্তা: ২০ হাজার মানুষের নিত্য দুর্ভোগ

সালাহউদ্দিন সালমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, সিরাজদিখান, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ০০:০৫, ২১ জুন ২০২৫; আপডেট: ০০:০৮, ২১ জুন ২০২৫

স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও ঢাকার পাশে পাকা হয়নি রাস্তা: ২০ হাজার মানুষের নিত্য দুর্ভোগ

ঢাকার মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে, আর ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে ও কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরত্বে সিরাজদিখান উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের চান্দের চর, খাসকান্দি, মদিনা পাড়া, মার্কেট পাড়া, পূর্ব ও পশ্চিম চান্দের চরসহ আশপাশের এলাকার মানুষ এখনও কাঁচা ও বেহাল সড়ক দিয়ে চলাচল করছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হলেও এই অঞ্চলে পাকা রাস্তার আলো পৌঁছায়নি।

প্রতিদিন হাজারো মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করছেন এই অপ্রশস্ত, গর্তে ভরা, কর্দমাক্ত রাস্তায়। বিশেষ করে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে—রাস্তার গর্তগুলোতে পানি জমে ছোট ছোট পুকুরের রূপ নেয়, যেখানে সিএনজি অটোরিকশা বা ভ্যানচালকরা চলাচল করতে চান না। এমনকি জরুরি রোগী পরিবহনেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই সড়ক।স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সিএনজির ভাড়া যেখানে স্বাভাবিক সময়ে ৩০ টাকা, সেখানে এই ভাঙা রাস্তায় তা বেড়ে গিয়ে ১০০ টাকাও ছুঁয়ে যায়—তবুও অনেকে আসতে চান না। অভিযোগ আছে, নিয়মিত চলাচলকারী মাহেন্দ্রা গাড়ির অতিরিক্ত চাপও রাস্তাটি দ্রুত নষ্ট করে দিচ্ছে, যা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে নিয়মিত মেরামত করা সম্ভব নয়।

এই এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসবাস। রয়েছে ১৫টি মসজিদ, ২টি মাদ্রাসা, ২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ৩টি বাজার, ৩টি নৌকা ঘাট, ৩টি পাকা সেতু এবং ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মাঠ। কিন্তু এসব জনবহুল, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সঙ্গে সংযুক্ত প্রধান সড়কটি উন্নয়নের ছোঁয়া পায়নি কখনও।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শাহজাহান মাষ্টার জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা শুধু ভোটের সময় আসেন, এরপর এলাকা ভুলে যান। বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আওলাদ হোসেন বলেন, “এই রাস্তা পাকাকরণ আমার অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। আমি ইতোমধ্যে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। অতি শিগগিরই এর একটি টেকসই সমাধান আসবে বলে আশাবাদী।”

তবে ইউনিয়ন পরিষদের স্বল্প বাজেটের সীমাবদ্ধতা এবং উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নজরদারির অভাবে রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পটি বারবার থেমে যাচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবি, এই অবহেলিত অঞ্চলের দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার দায় শুধু একজন চেয়ারম্যানের নয়, বরং উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের দায়িত্বশীলতাও এখানে অনুপস্থিত ছিল।

স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও রাজধানীর কোলঘেঁষা এমন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় একটি পাকা রাস্তা পৌঁছাবে কবে? উন্নয়ন কি শুধুই পোস্টারে থাকবে, না কি একদিন বাস্তবেও নামবে এই বালুচরের পথে? এমন প্রশ্ন এখন এ অঞ্চলে বসবাসরতদের মুখে।

রাজু

আরো পড়ুন  

×