
ছবিঃ সংগৃহীত
ঝিনাইদহ, রাজবাড়ী ও মাগুরা—এই তিন জেলার সীমান্তবর্তী জনবহুল অঞ্চল লাঙ্গলবাঁধ। শৈলকুপা উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এই বাজার ও আশপাশের গ্রামীণ জনপদে এখনো পর্যন্ত স্থাপন হয়নি কোনো ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন। ফলে অগ্নিকাণ্ড কিংবা জরুরি পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের পড়তে হচ্ছে ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে।
লাঙ্গলবাঁধ বাজারটি শৈলকুপা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার, মাগুরার শ্রীপুর থেকে ১০ কিলোমিটার এবং রাজবাড়ীর পাংশা থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ভৌগোলিক দিক থেকে এটি তিন জেলার সংযোগস্থলে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র। আশপাশে রয়েছে উলুবাড়িয়া, মালিথিয়া, ধলদহরাচন্দ্র, বদনপুর, চাকদহ, ইছাপুর, নাদুরিয়া কলাবাড়িয়া ও নবগ্রাম—যেখানে কয়েক হাজার পরিবার বসবাস করে।
স্থানীয়দের মতে, প্রতিদিন শত শত মানুষের সমাগম ঘটে এই বাজারে। এখানে রয়েছে একাধিক শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, আবাসিক ভবন, গুদাম এবং দোকানপাট। প্রায় ১৪শ’র মতো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে বাজারটিতে। অপরিকল্পিত বৈদ্যুতিক লাইন, গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার এবং অপ্রতুল অগ্নিনিরাপত্তার কারণে দিন দিন বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লাঙ্গলবাঁধ বাজারে একাধিকবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কাছাকাছি কোনো ফায়ার সার্ভিস ইউনিট না থাকায় স্থানীয় জনগণ নিজেরাই ঝুঁকি নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে বাধ্য হন। ফায়ার সার্ভিসের সাহায্য চাইলেও শৈলকুপা কিংবা শ্রীপুর থেকে ইউনিট পৌঁছাতে সময় লেগে যায়, যার ফলে বাড়ে ক্ষয়ক্ষতি।
বাজারের ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান বলেন, “ফায়ার সার্ভিস ডাকলেও তারা সময় মতো পৌঁছাতে পারেন না। আমরা নিজেরাই বালু-পানি দিয়ে চেষ্টা করি আগুন নেভাতে। এখানে ফায়ার স্টেশনটি হলে, আমাদের জনমনে একটু স্বস্তি আসবে।”
লাঙ্গলবাঁধ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিতু সরকার জানান, “আমাদের স্কুলের পাশে আগুন লেগেছিল, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। কাছাকাছি যদি একটি ফায়ার ইউনিট থাকত তাহলে ভয়-ভীতি অনেকটাই কম হতো।”
দৈনিক নয়াদিগন্ত ও লোক সমাজ পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি মফিজুল ইসলাম বলেন, “এই বাজারে অনেকগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গুদাম রয়েছে, কিছুদিন আগে একটা পাটের গুদামে আগুন লেগেছিল। শৈলকুপা বা শ্রীপুরের ফায়ার সার্ভিস অনেক দূরে হওয়ায় দ্রুত সাড়া না পাওয়ার কারণে পাশাপাশি কয়েকটা গুদামে আগুন ছড়িয়ে পড়ে, এতে অনেক টাকার ক্ষতি হয়।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহল মনে করছেন, এই জনপদে অন্তত একটি ফায়ার সার্ভিস সাব-স্টেশন স্থাপন এখন সময়ের অনিবার্য দাবি। এতে কেবল লাঙ্গলবাঁধ নয়, আশপাশের শৈলকুপা, শ্রীপুর এবং পাংশার লক্ষাধিক মানুষ উপকৃত হবেন।
জননিরাপত্তা ও সম্পদের সুরক্ষায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
ইমরান