ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

দুইদিনে মিলল ১৮০ কোটি ডলার

বাংলাদেশের জন্য বিশ্বব্যাংকের  ৫০ কোটি ডলার অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ২১ জুন ২০২৫

বাংলাদেশের জন্য বিশ্বব্যাংকের  ৫০ কোটি ডলার অনুমোদন

বিশ্বব্যাংকের  ৫০ কোটি ডলার অনুমোদন

বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের জন্য নতুন করে ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে। স্বচ্ছতা, সরকারি খাতের জবাবদিহিতা এবং আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বাড়াতে এই অর্থ ব্যয় করা হবে। প্রতি ডলার ১২২ টাকা ৩৭ পয়সা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এ ঋণের পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার ১১৮ কোটি টাকা।
শনিবার বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানায়। এতে বলা হয়, সরকারের সুশাসন ব্যবস্থা শক্তিশালী করা, প্রাতিষ্ঠানিক স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি এবং আর্থিক খাত ও রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কারে এই অর্থায়ন সহায়ক হবে। এসব উদ্যোগ বাংলাদেশের দরিদ্র ও ঝুঁঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নত সেবা নিশ্চিত করবে। চলতি মাসে উন্নয়ন সহযোগীরা বাংলাদেশে বৈদেশিক অর্থছাড় ও অনুমোদন বাড়িয়ে দিয়েছে। গত শুক্র ও শনি এই দুইদিনে দুই উন্নয়ন সহযোগী বাংলাদেশকে মোট ১৮০ কোটি মার্কিন ডলার বৈদেশিক সহায়তা দিয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। 
শুক্রবার চার প্রকল্পে বাংলাদেশকে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। প্রতি ডলার সমান ১২২ টাকা ২২ পয়সা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় ঋণের পরিমাণ ১৫ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। পরদিন বাংলাদেশের জন্য নতুন করে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। প্রতি ডলার সমান ১২২ টাকা ৩৭ পয়সা ধরে শনিবার বাংলাদেশি মুদ্রায় নতুন অনুমোদিত এই ঋণের পরিমাণ ৬ হাজার ১১৮ কোটি টাকা।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, সরকারের অর্থায়ন কাঠামো উন্নত করা টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য জরুরি। প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও উন্মুক্ত ও জবাবদিহিমূলক করতে সরকার উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ নিয়েছে। এই অর্থায়ন সেই প্রচেষ্টায় সহায়তা করবে এবং একটি শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি গঠনে ভূমিকা রাখবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, রাজস্ব-জিডিপি অনুপাতের দিক থেকে বাংলাদেশ এখনো মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে সর্বনি¤œ অবস্থানে রয়েছে। ফলে সরকার জনগণের কাছে মানসম্পন্ন সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কর প্রশাসন ও নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়াতে সংস্কার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। করছাড় ব্যবস্থায় কৌশলগত ও নিয়মতান্ত্রিক পরিবর্তন আনা হবে এবং সংসদীয় অনুমোদন ছাড়া কোনো ছাড় না দেওয়ার নীতিতে যাওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
অর্থায়নের একটি বড় অংশ ব্যয় হবে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে। আন্তর্জাতিক মান অনুসারে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি, ব্যাংকিং খাতে দুর্বলতা চিহ্নিত ও সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়ানো এবং কর্পোরেট গভর্ন্যান্স ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে এই ঋণ ব্যবহার করা হবে।
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, সংস্কারের তৃতীয় ধাপে সরকারি খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দক্ষতা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ২০২৭ সালের মধ্যে সব সরকারি প্রকল্পের মূল্যায়ন নথি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। সরকারি ক্রয় ব্যবস্থায় ই-জিপি বাধ্যতামূলক করা, মালিকানা তথ্য প্রকাশ এবং ক্রয়মূল্যের সীমা তুলে দেওয়ার বিষয়েও সংস্কার আনা হবে।
নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ক্ষমতা বাড়ানো হবে, যাতে সরকারি খাতে আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর স্বাধীনতা ও তথ্য প্রকাশে স্বচ্ছতা বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে। পাশাপাশি একটি শক্তিশালী সামাজিক রেজিস্ট্রির মাধ্যমে দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য নগদ সহায়তা আরও কার্যকরভাবে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, এই ঋণ অনুমোদনের মধ্য দিয়ে চলতি অর্থবছরে সংস্থাটির বাংলাদেশে নতুন অর্থায়নের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলারে। স্বাধীনতার পর থেকে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ৪৬ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অনুদান, সুদমুক্ত এবং ছাড়সুলভ ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

×