
বিশ্ব শিশু শ্রম ও প্রতিরোধ দিবস-২০২৫ উদযাপন হিসেবে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ছায়া সংসদ বিতর্ক শনিবার (২১ জুন) সকালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (এফডিসি) প্রাঙ্গণে ‘‘স্বপ্নের ডানায় ভর করি, শিশুশ্রমের শৃঙ্খল ছিঁড়ি- এগিয়ে চলি দৃপ্ত পায়ে, আশার আগুন বুকে জ্বালি” স্লোগানে এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এ প্রতিযোগিতায় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা ‘‘শিশুশ্রমের প্রধান দায় রাষ্ট্রের নয়, সমাজের" শীর্ষক ছায়া সংসদে শিশুশ্রম প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে বিতর্কে অংশ নেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, দেশের যে প্রান্তে তাকাই সেখানেই দেখতে পাই হাজার হাজার শিশু শ্রম দিচ্ছে গার্মেন্টস, কলকারখানা, হোটেল, গ্যারেজ আবার অনেকেই বাস, টেম্পো এসবের হেলপারি করে যাচ্ছে। যে বয়সে শিশুর হাতে থাকার কথা বই-খাতা-কলম সেই বয়সে জীবন-সংগ্রামের জন্য হাতে তুলে নিচ্ছে শ্রমের হাতিয়ার। নিজে কিংবা তার পরিবারের জন্য দু’মুঠো খাবার জোগাতে তারা এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু পারিপার্শ্বিক সমস্যার কারণে স্কুলে যেতে পারে না। অনেকে বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও অর্থের অভাবে তার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে না, এরপর তারা জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন কাজে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২০ লাখ গৃহ শ্রমিকের মধ্যে ৯৩% শিশু গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। এসব গৃহ শ্রমিকরা প্রতিনিয়তই শিকার হচ্ছে মানসিক অত্যাচার, শারীরিক নির্যাতন ও আর্থিক শোষণের। বাংলাদেশের প্রায় ৩০০ ধরনের কাজ শিশুরা করে থাকে। এসব কাজের মধ্যে ৪৫টি কাজ হচ্ছে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। শিশু শ্রমিকের বৃহৎ একটি সংখ্যা হচ্ছে পথশিশুরা এবং তারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত। এক তথ্য মতে, শহরে প্রায় ১৮ লাখ শিশু কাজ করে থাকে এবং গ্রামে কাজ করে থাকে প্রায় ৬৭ লাখ শিশু। এসব শিশুর মধ্যে প্রায় ৪৭ লাখ শিশু নিজেদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মধ্যে নিয়োজিত রেখেছে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, সরকার শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। আমরা শিশুশ্রম বন্ধে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি।শিশুশ্রম প্রতিরোধে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মাধ্যমে নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শুধু সরকারি প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয়। শিশুশ্রম বন্ধে বেসরকারি সংস্থা, শিল্প উদ্যোক্তা, সুশীল সমাজসহ সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা আশা করি, সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে সবাই এই মহৎ কাজে সহায়তা করবেন।
বাংলাদেশস্থ আইএলও অফিসের শ্রম প্রশাসন বিভাগের প্রধান নীরান রামজুঠান বক্তৃতায় বলেন বাংলাদেশ শিশুশ্রম হ্রাসে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। তবে এখনও প্রায় ১০ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এক্ষেত্রে শিশুশ্রম প্রতিরোধে আইএলও এর সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
অনুষ্ঠানে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বিতার্কিক দল বিজয়ী হয় এবং উপদেষ্টা তাদের হাতে ৫০ হাজার টাকার চেক ও রানারআপ দলকে ৩০ হাজার টাকার চেকসহ ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এনডিসি, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীন। এছাড়াও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
রিফাত