
ছবিঃ জনকণ্ঠ
কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পটুয়াখালীর 'শ্রীরামপুর জমিদার বাড়ি' যা স্থানীয়দের মাঝে মিয়াবাড়ি নামেও পরিচিত।
মুঘল স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য বহনকারী স্থাপনার মধ্যে এ জমিদার বাড়িটি অন্যতম। এর নির্মানশৈলী ও অবকাঠামো এখনও নজর কাঁড়ে ইতিহাসপ্রেমীদের।
জমিদার বাড়ির সামনেই রয়েছে রাজকীয় তোরণ (প্রবেশপথের গেট), ভেতরে ঢুকতেই দেখা মিলবে মুঘল কারুকার্যখচিত প্রাসাদের। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশী কৌতুহলের জন্ম দেয় আন্দার কুপ বা অন্ধকার কূপ নামে এখানকার একটি ছোট কক্ষ। কথিত রয়েছে তৎকালীন সময়ে অপরাধীদের শাস্তি দিতে এ কূপে ফেলে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করা হত। মুলত এটিকে জমিদারি শাসনব্যবস্থার একটি কঠোর অংশ হিসেবে অভিহিত করা যায়।
প্রাসাদের পাশেই রয়েছে জমিদার শিবল খাঁ ও তার স্ত্রী জুলেখার সমাধিস্থল। এর পাশে রয়েছে অতি প্রাচীন একটি মসজিদ। এর সামনে দেখা মেলে একটি ব্রীজের, কিন্তু ব্রীজটির নিচে এখন আর কোনো নদীর অস্তিত্ব নেই। এসকল মনোমূগ্ধকর দৃশ্য যেন আজও জানান দেয় মোঘল সম্রাজ্যের সৌন্দর্য্যের, বহন করে ইতিহাসের এক আলোকিত অধ্যায়কে।
জানা যায়, ১৮০০ শতকের কাছাকাছি সময়ে এ প্রাসাদটি নির্মান করেন জমিদার শিবল খাঁ । শিবল খাঁ ছিলেন নবাব মুর্শিদ কুলী খাঁ এর অধীনস্থ এক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা।
শিবল খাঁ একসময় ছিলেন সনাতন ধর্মের অনুসারী। তার প্রকৃত নাম ছিল শিব প্রসাদ মূখোপাধ্যায়। পরবর্তীতে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে মুর্শিদ কুলি খাঁ এর কাছ থেকে জমিদারি পেয়েছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা রাকিব হোসেন বলেন, "কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিয়াবাড়ি, আমাদের বাবা-দাদাদের মুখে শুনেছি এর গল্প। তবে প্রাসাদের কিছু অংশ বর্তমানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে!"
পটুয়াখালী সদর উপজেলা থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে দুমকি উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামে অবস্থান ইতিহাসের ধারক এ জমিদারী স্থাপনার। পটুয়াখালীর লাউকাঠী খেয়া পাড় হয়ে মোটরসাইকেল কিংবা অটোবাইকযোগে খুব সহজেই আসা যায় এখানে। মুঘল স্থাপত্যের নিদর্শণ স্বচক্ষে অবলোকন করতে গ্রীষ্ম কিংবা শীত মৌসুমে আপনিও আসতে পারেন শ্রীরামপুর জমিদার বাড়ি।
কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শ্রীরামপুর জমিদার বাড়ি দক্ষিণাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন। যার ইট সিমেন্ট ও রড দিয়ে নির্মিত কারুকার্যখচিত নির্মানশৈলী আজও বহন করে জমিদারী প্রথার নিদর্শন,জানান দেয় মুঘল স্থাপত্য ও জমিদারি সংস্কৃতির। এটি পটুয়াখালীর ইতিহাসের এক অনন্য সম্পদ। বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে চলেছে প্রাসাদটি, রক্ষণাবেক্ষণ এর মাধ্যমে এর সংরক্ষণ করলে পর্যটন শিল্পে ভূমিকা রাখতে পারে এ জমিদার বাড়িটি, ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে পারে যুগ-যুগান্তর।
আলীম