
ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণে ঔষধ খেলেই হলো—এমনটা ভাবলে ভুল করবেন। কারণ, কেবল কোন ঔষধ খাচ্ছেন তাই নয়, কখন খাচ্ছেন সেটিও হতে পারে জীবন বাঁচানোর মূল চাবিকাঠি। দীর্ঘদিন ধরে সকালে ঔষধ খাওয়াকেই রুটিন হিসেবে মানা হলেও সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা বলছে, রাতে ঔষধ খেলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যেতে পারে।
প্রচলিত ধারণা: সকালে খাওয়া নিরাপদ
সাধারণত, ব্লাডপ্রেশারে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের সকাল ৬টা থেকে ১০টার মধ্যে ঔষধ খেতে বলা হয়। এর পেছনে যুক্তি হলো, সকালের দিকে দেহের স্বাভাবিক ঘড়ি (সার্কাডিয়ান রিদম) ব্লাডপ্রেশার বাড়িয়ে তোলে। কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিনের মতো হরমোন সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে সকালের ঔষধ এই বৃদ্ধি সামলাতে সাহায্য করে।
একটি ২০২২ সালের গবেষণায় (The Lancet) ২১,০০০ রোগীকে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সকালের ও রাতের ঔষধ গ্রহণকারীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা হৃদরোগজনিত মৃত্যুর ঝুঁকিতে খুব বেশি পার্থক্য ছিল না (সকাল ৩.৭% বনাম রাত ৩.৪%)।
নতুন গবেষণা: রাতেই সঠিক সময়?
তবে ২০১৯ সালে স্পেনে হওয়া আরেকটি গবেষণা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সেখানে প্রায় ১৯,০০০ ব্লাডপ্রেশারের রোগীকে ছয় বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়। দেখা যায়, যারা রাতে ঔষধ খেয়েছিলেন তাদের হৃদরোগজনিত জটিলতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
রাতের ঔষধ গ্রহণকারীদের মধ্যে—
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমেছে ৪০%
স্ট্রোকের ঝুঁকি কমেছে ৩৪%
হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি কমেছে ৬৬%
গবেষকরা বলেন, রক্তচাপ স্বাভাবিকভাবে রাতে কমে যায়। কিন্তু উচ্চ ব্লাডপ্রেশার রোগীদের (বিশেষত ডায়াবেটিস বা বয়স্কদের মধ্যে) এই ‘নন-ডিপিং’ সমস্যা দেখা দেয়। অর্থাৎ, রাতে ব্লাডপ্রেশার কমে না। রাতে ঔষধ খেলে এই স্বাভাবিক ডিপিং প্যাটার্ন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়, যা হৃদযন্ত্রকে বিশ্রাম নিতে সাহায্য করে।
তাহলে এখনই কি সময় বদলাবেন?
একদম নয়। সবার জন্য একটাই সময় কাজ করে না। নিচের বিষয়গুলো আগে বিবেচনা করতে হবে—
১. আপনি কোন ধরনের ঔষধ খাচ্ছেন?
ডায়ুরেটিক জাতীয় ঔষধ (যা প্রস্রাব বাড়ায়) রাতে খেলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তবে ACE ইনহিবিটার, বিটা-ব্লকার বা ARB ধরনের ঔষধ রাতে নেওয়া উপযোগী হতে পারে।
২. আপনার ‘নন-ডিপিং’ প্যাটার্ন আছে কি?
অনেক সময় ২৪ ঘণ্টার অ্যাম্বুলেটরি মনিটরিং করে চিকিৎসকরা বোঝেন আপনার ব্লাডপ্রেশার রাতে কমে কিনা। না কমলে, রাতের ঔষধ বেশি কার্যকর হতে পারে।
৩. আপনার রুটিন কেমন?
রাতে ঔষধ খেলে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা থাকলে, বরং সকালে খাওয়াই ভালো। কারণ ঔষধ ঠিকভাবে খাওয়া না হলে তার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়।
৪. আপনি একাধিক ওষুধ খাচ্ছেন কি?
অনেক রোগীর ক্ষেত্রে একটি ঔষধ সকালে, আরেকটি রাতে খাওয়া হয়। এটি ব্লাডপ্রেশার সারাদিন সুষমভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
করণীয় কী?
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে সময় পরিবর্তন করবেন না। অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে তবেই ওষুধের সময়সূচিতে পরিবর্তন আনুন।
ব্লাডপ্রেশার কেবল একটি সংখ্যা নয়, এটি আপনার দেহের অভ্যন্তরীণ ছন্দের (internal clock) সঙ্গে জড়িত। কারও জন্য সকালের সময়টি আদর্শ, আবার কারও জন্য রাতে খাওয়া নিরাপদ।
যদি আপনার ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণে না থাকে, বা আপনি ডায়াবেটিস, কিডনি রোগে আক্রান্ত হন—তাহলে রাতের ঔষধ আপনার জন্য উপকারী হতে পারে। তবে ডায়ুরেটিক ঔষধ রাতে না খাওয়াই ভালো।
রিফাত