
মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো লিভার। এটি শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ দূর করে, হজমে সহায়তা করে, পুষ্টি সংরক্ষণ করে এবং বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু এতসব দায়িত্ব পালন করেও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, বিশেষত কিছু ভুল অভ্যাসে।
লিভার রোগের সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো—প্রথমদিকে এর লক্ষণ খুবই অস্পষ্ট থাকে। হালকা ক্লান্তি, বমিভাব বা অমনোযোগিতা দেখা দিলেও অনেকেই গুরুত্ব দেন না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা বাড়তে থাকে, এবং একসময় দেখা দিতে পারে জন্ডিস, লিভার সিরোসিস এমনকি লিভার ফেইলিওর।
লিভার নষ্টের ৫টি সাধারণ কারণ এবং প্রতিরোধের উপায়:
১. অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন
অ্যালকোহল লিভার ক্ষতির সবচেয়ে পরিচিত কারণ। অল্প পরিমাণে শুরু হলেও দীর্ঘমেয়াদে অতিরিক্ত সেবনে রক্তচাপের ঔষধ কখন খাবেন—সকালে, না রাতে? নতুন গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্য!
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ঔষধ খেলেই হলো—এমনটা ভাবলে ভুল করবেন। কারণ, কেবল কোন ঔষধ খাচ্ছেন তাই নয়, কখন খাচ্ছেন সেটিও হতে পারে জীবন বাঁচানোর মূল চাবিকাঠি। দীর্ঘদিন ধরে সকালে ঔষধ খাওয়াকেই রুটিন হিসেবে মানা হলেও সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা বলছে, রাতে ওষুধ খেলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যেতে পারে।
প্রচলিত ধারণা: সকালে খাওয়া নিরাপদ
সাধারণত, উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের সকাল ৬টা থেকে ১০টার মধ্যে ঔষধ খেতে বলা হয়। এর পেছনে যুক্তি হলো, সকালের দিকে দেহের স্বাভাবিক ঘড়ি (সার্কাডিয়ান রিদম) রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে। কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিনের মতো হরমোন সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে সকালের ঔষধ এই বৃদ্ধি সামলাতে সাহায্য করে।
একটি ২০২২ সালের গবেষণায় (The Lancet) ২১,০০০ রোগীকে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সকালের ও রাতের ঔষধ গ্রহণকারীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা হৃদরোগজনিত মৃত্যুর ঝুঁকিতে খুব বেশি পার্থক্য ছিল না (সকাল ৩.৭% বনাম রাত ৩.৪%)।
নতুন গবেষণা: রাতেই সঠিক সময়?
তবে ২০১৯ সালে স্পেনে হওয়া আরেকটি গবেষণা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সেখানে প্রায় ১৯,০০০ রক্তচাপের রোগীকে ছয় বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়। দেখা যায়, যারা রাতে ওষুধ খেয়েছিলেন তাদের হৃদরোগজনিত জটিলতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
রাতের ওষুধ গ্রহণকারীদের মধ্যে—
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমেছে ৪০%
স্ট্রোকের ঝুঁকি কমেছে ৩৪%
হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি কমেছে ৬৬%
গবেষকরা বলেন, রক্তচাপ স্বাভাবিকভাবে রাতে কমে যায়। কিন্তু উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের (বিশেষত ডায়াবেটিস বা বয়স্কদের মধ্যে) এই ‘নন-ডিপিং’ সমস্যা দেখা দেয়। অর্থাৎ, রাতে রক্তচাপ কমে না। রাতে ঔষধ খেলে এই স্বাভাবিক ডিপিং প্যাটার্ন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়, যা হৃদযন্ত্রকে বিশ্রাম নিতে সাহায্য করে।
তাহলে এখনই কি সময় বদলাবেন?
একদম নয়। সবার জন্য একটাই সময় কাজ করে না। নিচের বিষয়গুলো আগে বিবেচনা করতে হবে—
১. আপনি কোন ধরনের ওষুধ খাচ্ছেন?
ডায়ুরেটিক জাতীয় ঔষধ (যা প্রস্রাব বাড়ায়) রাতে খেলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তবে ACE ইনহিবিটার, বিটা-ব্লকার বা ARB ধরনের ঔষধ রাতে নেওয়া উপযোগী হতে পারে।
২. আপনার ‘নন-ডিপিং’ প্যাটার্ন আছে কি?
অনেক সময় ২৪ ঘণ্টার অ্যাম্বুলেটরি মনিটরিং করে চিকিৎসকরা বোঝেন আপনার রক্তচাপ রাতে কমে কিনা। না কমলে, রাতের ঔষধ বেশি কার্যকর হতে পারে।
৩. আপনার রুটিন কেমন?
রাতে ওষুধ খেলে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা থাকলে, বরং সকালে খাওয়াই ভালো। কারণ ঔষধ ঠিকভাবে খাওয়া না হলে তার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়।
৪. আপনি একাধিক ওষুধ খাচ্ছেন কি?
অনেক রোগীর ক্ষেত্রে একটি ওষুধ সকালে, আরেকটি রাতে খাওয়া হয়। এটি রক্তচাপকে সারাদিন সুষমভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
করণীয় কী?
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে সময় পরিবর্তন করবেন না। অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে তবেই ওষুধের সময়সূচিতে পরিবর্তন আনুন।
রক্তচাপ কেবল একটি সংখ্যা নয়, এটি আপনার দেহের অভ্যন্তরীণ ছন্দের (internal clock) সঙ্গে জড়িত। কারও জন্য সকালের সময়টি আদর্শ, আবার কারও জন্য রাতে খাওয়া নিরাপদ।
যদি আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকে, বা আপনি ডায়াবেটিস, কিডনি রোগে আক্রান্ত হন—তাহলে রাতের ঔষধ আপনার জন্য উপকারী হতে পারে। তবে ডায়ুরেটিক ঔষধ রাতে না খাওয়াই ভালো।
রিফাত