
ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাট সড়কে ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৭ জন। বেপরোয়া গতিই দুর্ঘটনার কারণ বলছেন জেলা পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম। তবে, এসব সড়কে লোকাল বাস সার্ভিস না থাকায় দিন দিন সড়কে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে বলে দাবি অনেকের। এদিকে, মহাসড়কে সিএনজি-মাহিন্দ্রা চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও মানছেন না চালকরা।
শুক্রবার (২০ জুন) বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে জেলার ফুলপুর ও তারাকান্দা উপজেলায় পৃথক দুর্ঘটনা ঘটে।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে হালুয়াঘাট-ময়মনসিংহ সড়কের ফুলপুর উপজেলার কাজিয়াকান্দা ইন্দিরারপার এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও মাহিন্দ্রার সংঘর্ষে ৮ জন নিহত হন।
এর আগে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে একই সড়কের তারাকান্দা উপজেলার কোদালধর বাজারের হিমালয় ফিলিং স্টেশনের সামনে যাত্রীবাহী সিএনজি চালিত অটোরিকশার সঙ্গে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হন।
ফুলপুরে নিহতরা হলেন, লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলার মালেক শাহ'র ছেলে কাজিম উদ্দিন (২৮), নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার সিরাজুল ইসলামের ছেলে লাল মিয়া (৩৬), ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার আফাজ উদ্দিনের ছেলে রুবেল (৩০), আ. কুদ্দুস আলীর স্ত্রী হাছিনা খাতুন (৫০), জবান আলীর ছেলে শামসুদ্দিন (৬৫), আলাল উদ্দিনের ছেলে নয়ন মিয়া (৪০), ফুলপুর উপজেলার জসিম উদ্দিনের ছেলে ফরিদ মিয়া (৩৮), মৃত মইজ উদ্দিনের ছেলে জাহের আলী (৭০)।
তারাকান্দায় নিহতরা হলেন, ময়মনসিংহ জেলার সদর উপজেলার কোরবান আলীর ছেলে আলম (৪০), ধোবাউড়ার মৃত আব্দুল বারেকের স্ত্রী জবেদা খাতুন (৮৫), ফুলপুর উপজেলার জামাল উদ্দিনের ছেলে রাকিবুল হাসান (১৫)।
ময়মনসিংহ জেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সহকারী পরিচালক মো. মাসুদ সরদার বলেন, ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা শ্যামলী বাংলা পরিবহনের একটি বাস হালুয়াঘাটের দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে কাজিয়াকান্দা এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি যাত্রীবাহী মাহিন্দ্রার সঙ্গে বাসটির সংঘর্ষ হয়।
তিনি আরও বলেন, এতে ঘটনাস্থলেই এক নারীসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়। আহতদের উদ্ধার করে ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে একজন এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও দুই জন মারা যান।
এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এতে হালুয়াঘাট-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে ব্যাপক ভোগান্তির সৃষ্টি হয়।
এদিকে, তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. টিপু সুলতান বলেন, একটি অ্যাম্বুলেন্স হালুয়াঘাটের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় ময়মনসিংহগামী একটি যাত্রীবাহী সিএনজি অটোরিকশার সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) শফিক উদ্দিন বলেন, ফুলপুরের বাস-মাহিন্দ্রা দুর্ঘটনায় হাসপাতালে ৬ জন আহত ভর্তি হয়েছিল। তাদের মধ্যে দুইজন মারা গেছে।
তিনি আরও বলেন, তারাকান্দার অটোরিকশা-অ্যাম্বুলেন্স সংঘর্ষের ঘটনায় ঘটনাস্থলেই ২ জন এবং পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে আলম (৪০) নামে আরও একজন মারা যান।
ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল হামিদ বলেন, মাহিন্দ্রার চালকসহ ৮ জন মারা গেছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে ৩ জন। দুর্ঘটনার শিকার বাস ও মাহিন্দ্রা জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। চালককে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
এদিকে, পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহতের বিষয়টি সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, যানবাহনের বেপরোয়া গতি ও লোকাল বাস সার্ভিস না থাকায় যাত্রীরা সিএনজি-মাহিন্দ্রা গাড়িতে চলাফেরা করে। যে কারণে সড়কে মৃত্যুর মিছিল দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে।
পরিবহন সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ থেকে নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জে স্বল্প সংখ্যক লোকাল বাস সার্ভিস চলাচল করে। ময়মনসিংহ-শেরপুর, হালুয়াঘাট সড়কে কোন লোকাল বাস সার্ভিস চলাচল করে না। তবে, ময়মনসিংহ-ধোবাউড়া সড়কে স্বল্প সংখ্যক লোকাল বাস চলাচল করে।
লোকাল বাস সার্ভিসের বিষয়ে পরিবহন মালিক সমিতি বলছে, সিএনজি এবং মাহিন্দ্রা গাড়ির চালকদের কারণে এসব রুটে বাস চালানো যাচ্ছে না। বিভিন্ন সময় সিএনজি ও মাহিন্দ্রা চালকরা আন্দোলন করে এসব সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রাখার দাবি করেন। এদিকে, সিএনজি ও মাহিন্দ্রার কারণে বাসে কাঙ্ক্ষিত যাত্রী না হওয়ায় চালকরাও বাস চালানো বন্ধ রাখেন।
জেলা মটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রতন আকন্দ বলেন, ময়মনসিংহ থেকে নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ধোবাউড়ায় স্বল্প সংখ্যক বাস চলাচল করে। তবে, ময়মনসিংহ থেকে শেরপুর, হালুয়াঘাট, নেত্রকোনা বিরিশিরি বা দুর্গাপুরে সড়কে কোন লোকাল বাস চলাচল করে না। এসব সড়কে সিএনজি ও মাহিন্দ্রা গাড়িই যাত্রীদের ভরসা।
তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে সিএনজি ও মাহিন্দ্রার চালকদের আন্দোলনের কারণে বেশ কয়েকটি সড়কে লোকাল বাস সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। তবে, কয়েকটি সড়কে লোকাল বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। সমিতির অন্যান্য নেতাদের নিয়ে যেসব সড়কে লোকাল বাস সার্ভিস বন্ধ রয়েছে, সেই সড়কগুলোতে লোকাল বাস সার্ভিস চালু করা যায় কিনা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।
জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আবু নাছের মো. জহির বলেন, মহাসড়কে সিএনজি, মাহিন্দ্রা, অটোরিকশা চলাচলের বিষয়ে এসপি স্যার জিরো টলারেন্স। উনার নির্দেশে নিয়মিত সিএনজি, মাহিন্দ্রা চালকদের জরিমানা করছি। গত মাসে প্রায় ১ হাজার ৮০০ মামলা করে ৪২ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। আজকেও সকাল থেকে সিএনজি, মাহিন্দ্রা চালকদের ২০টা মামলা দেওয়া হয়েছে। তবে, মানুষের চাহিদা ও সিএনজি, মাহিন্দ্রা অতিরিক্ত হওয়ায় বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আখতার উল আলম রাতেই পৃথক দুটি দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার শিকার সিএনজি অটোরিকশা, বাস এবং অন্যান্য যানবাহনের চূর্ণ-বিচূর্ণ অবস্থার কারণে ধারণা করা হচ্ছে, বেপরোয়া গতিই এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আফরোজা