
ছবিঃ সংগৃহীত
আমি অ্যাডভোকেট মো. আমিনুল ইসলাম চৌধুরী সোহাগ। জমি কেনাবেচা কিংবা বিনিয়োগে আগ্রহী সম্মানিত নাগরিকদের জন্য আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শভিত্তিক আলোচনা।
জমিতে বিনিয়োগ একটি নিরাপদ ও লাভজনক সিদ্ধান্ত হলেও কিছু ধরনের জমি রয়েছে যেগুলো কিনলে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। নিচে এমন ১৬ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ জমির বিষয় উল্লেখ করা হলো যেগুলো কেনার আগে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে—
✅ ১. মামলা চলমান জমি
যে জমিতে মামলা চলছে, সেই জমি কিনলে আপনি আসলে জমি নয়, মামলা কিনছেন। মামলায় হেরে গেলে জমির মালিকানাও হারাতে পারেন।
✅ ২. দখলবিহীন জমি
যে বিক্রেতার দখলে জমি নেই, তার কাছ থেকে জমি কিনবেন না। বায়নার সময় সাইনবোর্ড দিয়ে ও স্থানীয়দের জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হোন।
✅ ৩. হিস্যার অতিরিক্ত জমি
যদি বিক্রেতার আসল দখলের চেয়ে বেশি জমির প্রস্তাব দেওয়া হয়, তাহলে তা ভবিষ্যতে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
✅ ৪. করণিক ভুল থাকা জমি
কাগজে নাম বা খতিয়ানে ছোট ভুল (যেমন মুক্তার হোসেনের পরিবর্তে সুক্তার হোসেন) থাকলে তা সংশোধন ছাড়া কিনবেন না।
✅ ৫. প্রতারণামূলক দলিলের জমি
দলিল প্রস্তুতের সময় অতিরঞ্জিত বা মিথ্যা তথ্য থাকলে জমি কিনবেন না। যাচাই না করলে পরবর্তীতে মামলা-মোকদ্দমায় জড়াতে পারেন।
✅ ৬. যথার্থ ভুলের জমি
যেসব ভুল কেবল আদালতের মাধ্যমে সংশোধন সম্ভব, সেগুলো সংশোধন না করে জমি কিনবেন না।
✅ ৭. অর্পিত সম্পত্তি
খ তফসিলে থাকলে যাচাই সাপেক্ষে ক্রয়যোগ্য, তবে ক তফসিলভুক্ত জমি সরকারি এবং বিক্রয়যোগ্য নয়।
✅ ৮. খাস জমি
খাস জমি সাধারণত বিক্রয়ের উপযোগী নয়, ক্রয় করলে পরবর্তীতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
✅ ৯. সরকারি বা আধা-সরকারি জমি
রেল, রাজউক, গণপূর্ত বা অন্য সংস্থার জমি কেনার আগে অবশ্যই কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।
✅ ১০. রেকর্ডবিহীন জমি
যার নামে জমি রেকর্ড নেই, সে আইনি দিক থেকে মালিক নয়। রেকর্ড ছাড়া জমি কেনা বিপজ্জনক।
✅ ১১. বিরোধপূর্ণ জমি
যেসব জমি নিয়ে বণ্টন বিরোধ বা পারিবারিক বিবাদ রয়েছে, তা ক্রয় করা থেকে বিরত থাকুন।
✅ ১২. প্যান্টাগ্রাফবিহীন জমি
দাগ বিভাজনের পরিষ্কার ম্যাপ না থাকলে জমির অবস্থান নিয়ে ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে।
✅ ১৩. দলিল ও রেকর্ডের ধারাবাহিকতা না থাকা জমি
আগের মালিকানার সুনির্দিষ্ট সূত্র বা দলিল না থাকলে জমি ক্রয় থেকে বিরত থাকাই নিরাপদ।
✅ ১৪. ভুল দাগে দখলকৃত জমি
যদি কাগজে এক দাগে লেখা থাকে কিন্তু সরেজমিনে জমি অন্য দাগে থাকে, তবে তা ঝুঁকিপূর্ণ।
✅ ১৫. নামজারি থাকলেও মালিকানা প্রমাণ না হলে
অনেক সময় নামজারি করা থাকলেও প্রকৃত মালিকানার প্রমাণ থাকে না। যাচাই ছাড়া বিশ্বাস করা উচিত নয়।
✅ ১৬. দলিল অনুযায়ী জমির পরিমাণ বেশি দেখানো
বিক্রেতা যদি বেশি জমির কথা বলে, অথচ কাগজে ও রেকর্ডে তা না থাকে—তাহলে সেই জমি ঝুঁকিপূর্ণ।
উপসংহার:
জমি কেনার আগে অবশ্যই কাগজপত্র, দখল, রেকর্ড, মামলা ও দলিল যাচাই করে নিন। ভুল সিদ্ধান্ত আপনাকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। আইনজীবীর পরামর্শ ছাড়া জমি ক্রয় না করাই শ্রেয়। ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।
ইমরান