
বিশ্বজুড়ে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা যখন তুঙ্গে, তখন শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে গর্জে উঠেছে মুসলিম বিশ্বের প্রতিনিধিরা। শনিবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)–র সম্মেলনে মুখোমুখি হন ৪৩টি মুসলিম দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তাদের মাঝে সবচেয়ে উচ্চকণ্ঠে বক্তব্য রাখেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, যিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে সরাসরি ‘শান্তির পথে সবচেয়ে বড় বাধা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
শনিবার ইস্তাম্বুলে শুরু হওয়া এই দু’দিনব্যাপী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান। অংশগ্রহণ করেন ৪৩ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ৫ জন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিভিন্ন দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রায় ১০০০ প্রতিনিধি এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
তুরস্কের আহ্বান: মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে
সম্মেলনে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেন, “আমি বিশ্বাস করি ওআইসির সব সদস্যকে ইসরাইলের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে হবে। সত্যিকার অর্থেই সবাইকে ইরানের সাথে সংহতি প্রকাশ করা উচিত।”
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধে বিশ্ব মুসলিম জাতিকে একসাথে সুরে কথা বলতে হবে। ইরানের বিরুদ্ধে যেভাবে সন্ত্রাসী আচরণ করা হচ্ছে, তা কেবল মধ্যপ্রাচ্যের নয়, গোটা মুসলিম বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
ওআইসি সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের কড়া বক্তব্য। তিনি বলেন, “একের পর এক দেশে হামলা চালিয়ে নেতানিয়াহু প্রমাণ করেছেন যে আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় তিনিই সবচেয়ে বড় বাধা। আমি ইসরায়েলের এসব হামলার জন্য তাদের তীব্রভাবে অভিশাপ দিচ্ছি। নেতানিয়াহু সরকার কূটনৈতিকভাবে কোন সমস্যার সমাধান চান না। এরই মধ্যে সেটি স্পষ্ট হয়েছে।”
সম্মেলনে অংশ নিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি স্পষ্ট করে বলেন, ইসরায়েলি আগ্রাসন চলাকালীন সময়ে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনও আলোচনায় বসবে না।
তিনি বলেন, “আমরা শুনতে পাচ্ছি যুক্তরাষ্ট্র এই আগ্রাসনে সরাসরি অংশ নিতে পারে। এমনটা হলে সেটি দুর্ভাগ্যজনক এবং তা সবার জন্যই হবে অত্যন্ত বিপদজনক। হামলা বন্ধ না হলে কোন কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেবো না আমরা। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে আমাদের জনগণের উপর বোমা হামলা চলাকালীন আমরা তাদের সাথে আলোচনায় বসতে পারি না।”
তুরস্কের আহ্বান এবং ইরানের হুশিয়ারির পর মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। ওআইসি সম্মেলনটি এই সংকট নিরসনে মুসলিম বিশ্বের একটি কৌশলগত অবস্থান নিতে পারে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। তবে নেতানিয়াহুর ভূমিকা ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে কূটনৈতিক মেরুকরণ এখন আরও স্পষ্ট।
আফরোজা