
ছবি: জনকণ্ঠ
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়ায় হারিয়ে যাওয়া বাঁশ শিল্পকে আঁকড়ে ধরে এখনো জীবনধারণ করছে ১০ থেকে ২০টি পরিবার। বাঁশ থেকে তৈরি ডালা, কুলা, চালন, খৈইচালা, জালি, ঝাঁপনি, চাঙারি, বাচ্চাদের ছোট কুলাসহ হরেক রকমের পণ্য বিক্রি করে তারা যেমন নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করছেন, তেমনি দেশীয় ঐতিহ্যকেও টিকিয়ে রেখেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রুহিয়ার রামনাথ হাট প্রগতি ক্লাবের সামনে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন সরঞ্জাম বিক্রি করছেন বিকাশ নামের এক ব্যক্তি। তিনি জানান, অতীতে গ্রামগঞ্জে বাঁশের তৈরি পণ্যের কদর ছিল বেশ। এসব পণ্য প্রতিটি বাড়িতেই শোভা পেত। বাঁশের তৈজসপত্রই ছিল সংসারের প্রধান ভরসা। কিন্তু সময়ের সাথে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এবং প্রযুক্তির ব্যবহারে প্লাস্টিকের পণ্যের প্রসারে বাঁশ শিল্প প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।
তবে পূর্বপুরুষের এই পেশাকে এখনো ধরে রেখেছেন রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের মন্ডলাদাম গ্রামের মানিক রায়, সেনিহাড়ি গ্রামের দুলাল দাস, নব দাস হালদারসহ আরও অনেকে।
বাঁশ শিল্পের কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামের পুরুষরা বিভিন্ন বাগান থেকে ভালো ও লম্বা বাঁশ সংগ্রহ করেন। পরে সেই বাঁশ ছেঁচে পণ্যের আকার অনুযায়ী কেটে নেয়া হয়। কাটা অংশ থেকে পাতলা ও চিকন চাঁচ তৈরি করে তাতে ডালা, কুলা, চালনসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করা হয়। একজন কারিগর দিনে প্রায় ৭–৯টি কুলা তৈরি করতে পারেন। এসব কুলা পাইকারি বাজারে বিক্রি হয় ১৫০–১৬০ টাকায় এবং খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ১৭০–১৮০ টাকায়।
স্থানীয় বাঁশ বিক্রেতা আব্দুল আলী জানান, “আমাদের বাঁশ বিক্রি নেই বললেই চলে। এখন মানুষ বিল্ডিংয়ের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে, তাই বাঁশ ব্যবহারে ভাটা পড়েছে। সবুজ রঙের বাঁশ শুকিয়ে সাদা হয়ে নষ্ট হচ্ছে। এখন দিনে হাজার টাকাও বিক্রি করা কঠিন হয়ে গেছে। অথচ আগে দিনে ১০–২০ হাজার টাকার বিক্রি হতো।”
স্থানীয় বাসিন্দা বাদল ইসলাম বলেন, “বাঙালির ঐতিহ্য এসব পণ্য এখনো ঘরে ঘরে ব্যবহার হচ্ছে। বাঁশের তৈরি বাহারি পণ্যের এখনো চাহিদা আছে।”
বাঁশ শিল্পের ব্যবসায়ী লক্ষণ রায় জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। প্রতি হাটে ২–৪ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেন। এছাড়াও বিভিন্ন গ্রামের হাটে এসব পণ্য বিক্রি করে ভালো আয় হয় তার।
আরেক ব্যবসায়ী অতুল রায় জানান, তিনি গত ১০ বছর ধরে বিভিন্ন হাটে বাঁশের তৈরি পণ্যের ব্যবসা করছেন। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতিটি ডালা বিক্রি হয় ১০০ টাকা, কুলা ১৫০ টাকা, চালন ১০০ টাকা, ডালি ১৩০ টাকা, ঢাকি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা।
প্রতিদিন তাদের তৈরি কিছু পণ্য রামনাথ বাজারের সাপ্তাহিক দুই হাটসহ গ্রামেগঞ্জে ফেরি করে বিক্রি করেন তারা। কিছু সৌখিন মানুষ এখনো এসব পণ্য কিনে থাকেন। বেলা শেষে যা বিক্রি হয়, তা দিয়ে তারা তরি-তরকারি কিনে বাড়ি ফেরেন। এভাবেই চলে তাদের জীবন-জীবিকা।
তবে বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে স্বল্প আয়ের এই পেশায় টিকে থাকা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। আগে কোল সম্প্রদায়ের প্রতিটি পরিবার এই পেশায় যুক্ত থাকলেও এখন চাহিদা কমে যাওয়ায় কেবল নারীরাই পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।
এম.কে.