ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আদ্যোপান্ত জানালো বিবিসি

প্রকাশিত: ১৪:৪৯, ২২ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৪:৪৯, ২২ জুন ২০২৫

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আদ্যোপান্ত জানালো বিবিসি

ছ‌বি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি একে "সফল হামলা" বলে উল্লেখ করেন এবং দাবি করেন, এসব স্থাপনা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।

ইসরায়েল জানায়, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পুরোপুরি সমন্বয়ের ভিত্তিতে এই হামলার পরিকল্পনা করেছে। অন্যদিকে, ইরান স্বীকার করেছে যে তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা হয়েছে, তবে তারা বড় ধরনের কোনো ক্ষতির কথা অস্বীকার করেছে।

এই হামলার মাধ্যমে ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাত নতুন এক মাত্রায় পৌঁছেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

যুক্তরাষ্ট্র কী কী স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, কী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে?

তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় এই হামলা চালানো হয়েছে— ফোরদো, নাটাঞ্জ এবং ইসফাহান। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ফোরদো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, যা একটি পাহাড়ের নিচে গোপনে নির্মিত। এই ফোরদো স্থাপনাটি এত গভীরে অবস্থিত যে সাধারণ বোমায় ধ্বংস করা সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্র এখানে GBU-57 ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনেট্রেটর’ নামের বিশেষ বাঙ্কার-বুস্টার বোমা ব্যবহার করেছে বলে জানা যায়। এই বোমার ওজন প্রায় ১৩ হাজার কেজি এবং এটি ১৮ মিটার কংক্রিট বা ৬১ মিটার মাটি ভেদ করে বিস্ফোরিত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া এমন বোমা আর কারও নেই।

এই হামলার পর কী ক্ষতি হয়েছে? 

এখনও পুরোপুরি নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না হামলার ফলে স্থাপনাগুলোতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বা কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কি না। ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা একে "আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন" হিসেবে উল্লেখ করেছে। তবে সৌদি আরব ও জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থা IAEA জানায়, হামলার পর কোনো ধরনের তেজস্ক্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার প্রমাণ মেলেনি। সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রোসি সোমবার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, এই তিনটি স্থাপনাই আগেই খালি করে ফেলা হয়েছিল। ফলে তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে ট্রাম্প এক বক্তব্যে বলেন, “স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।” সাবেক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক কিমিট বলেন, “চূড়ান্তভাবে ধ্বংস হয়েছে, এমন দাবি করা খুবই কঠিন।”

ইরান কীভাবে জবাব দিতে পারে? 

১৩ জুন ইসরায়েলের আকস্মিক হামলার পর থেকে ইরান অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে, তবে তাদের পাল্টা জবাব দেয়ার সক্ষমতা এখনো রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান তিনটি পথ বেছে নিতে পারে:

১. কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখানো – এতে ভবিষ্যতের মার্কিন হামলা এড়ানো সম্ভব হতে পারে এবং আলোচনায় ফেরার পথ খুলে যেতে পারে। কিন্তু চুপ থাকলে জনগণের কাছে সরকারের ভাবমূর্তি দুর্বল হতে পারে।

২. তাৎক্ষণিকভাবে পাল্টা আক্রমণ – ইরানের হাতে এখনো অনেক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আছে। তারা মধ্যপ্রাচ্যের ২০টির বেশি মার্কিন ঘাঁটি টার্গেট করতে পারে। এছাড়াও ড্রোন ও ক্ষুদ্র নৌযানের মাধ্যমে মার্কিন নৌবাহিনীর উপর 'ঝাঁকবদ্ধ' হামলা চালাতে পারে।

৩. পরে সুযোগ বুঝে হামলা – এখনই কিছু না করে যখন মার্কিন ঘাঁটিগুলো সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকবে না, তখন হঠাৎ আক্রমণের পথ বেছে নিতে পারে।

ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার সম্ভাব্য লক্ষ্য হতে পারে বাহরাইনের মিনা সালমানে অবস্থিত মার্কিন ৫ম নৌবহরের সদর দপ্তর, কিংবা হরমুজ প্রণালীসহ গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথ, যার ওপর বিশ্বের ৩০% তেল সরবরাহ নির্ভরশীল।

ইতোমধ্যে ইরান কী করেছে? 

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার কয়েক ঘণ্টা পরেই ইরান নতুন করে ইসরায়েলের দিকে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। হাইফা, তেল আবিব ও জেরুজালেমে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

ট্রাম্প ও মার্কিন রাজনীতিকরা কী বলছেন? 

এক ভাষণে ট্রাম্প বলেন, “আমরা চাই কূটনৈতিক সমাধান। তবে মনে রাখবেন, এখনো অনেক টার্গেট বাকি আছে।” তার পাশে ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছেন। তবে ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফরিজ বলেন, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে "ধ্বংসাত্মক এক যুদ্ধের" দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। স্বতন্ত্র সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স এই হামলাকে “গণতন্ত্রবিরোধী” আখ্যা দিয়ে বলেন, “সংবিধান অনুসারে যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা কেবল কংগ্রেসের।”

এই যুদ্ধের সূচনা কীভাবে হলো? 

১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের বহু পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় আকস্মিক হামলা চালায়। তারা দাবি করে, ইরান পরমাণু বোমা বানানোর পথে রয়েছে। ইরান অবশ্য বারবার বলছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। এই হামলার পাল্টা হিসেবে ইরানও ইসরায়েলের দিকে শত শত রকেট ও ড্রোন নিক্ষেপ করে। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে চলছে একটানা বিমান হামলার যুদ্ধ।

ট্রাম্প সবসময় বলেছেন, তিনি চান না ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করুক। যদিও ইসরায়েলের পরমাণু অস্ত্র থাকার ব্যাপারে তারা কখনো প্রকাশ্যে স্বীকার করেনি। ইসরায়েলের হামলার সময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু আলোচনা চলছিল। মাত্র দুই দিন আগেও ট্রাম্প বলেছিলেন, ইরান যদি দুই সপ্তাহের মধ্যে আলোচনায় না আসে, তবে তিনি হামলার সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু সেই সময়সীমা আর ধরা হলো না।

সূত্র: বিবিসি

এম.কে.

আরো পড়ুন  

×