ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

প্রযুক্তির বিস্ময়: এআইয়ের সাহায্যে বোবা মানুষ ফিরে পেলেন মুখের ভাষা

প্রকাশিত: ১৭:২১, ২২ জুন ২০২৫

প্রযুক্তির বিস্ময়: এআইয়ের সাহায্যে বোবা মানুষ ফিরে পেলেন মুখের ভাষা

ছবি: সংগৃহীত

কথা বলার ক্ষমতা হারানো একজন মানুষ এখন রিয়েল টাইমে কথা বলছেন—এমনকি গাইছেন গানও। এ কৃতিত্ব মস্তিষ্ক-নিয়ন্ত্রিত কৃত্রিম কণ্ঠস্বর প্রযুক্তির।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (বিসিআই) নামের একটি প্রযুক্তি মস্তিষ্কে স্থাপিত ইলেকট্রোডের মাধ্যমে মানুষের স্নায়বিক সংকেত পড়ে নেয়। সেই সংকেতকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশ্লেষণ করে তাৎক্ষণিকভাবে রূপ দেয় কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে কথায়।

গবেষক সের্গেই স্ট্যাভিস্কি বলেন, ‘এটি প্রথম প্রযুক্তি যা মাত্র ২৫ মিলিসেকেন্ডের মধ্যে কথোপকথনের প্রতিক্রিয়া দিতে সক্ষম।’

এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে যিনি এখন কথা বলতে পারছেন, তিনি ‘অ্যামায়োট্রফিক ল্যাটেরাল স্ক্লেরোসিস’ নামক এক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারিয়েছিলেন। তার নাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে তিনি জানিয়েছেন, ‘এটা আমার নিজের কণ্ঠ বলেই মনে হয়, আমি আনন্দিত।’

বিসিআই প্রযুক্তি এর আগেও ছিল, তবে তখন প্রতিক্রিয়া আসতে কয়েক সেকেন্ড লেগে যেত। ফলে স্বাভাবিক কথোপকথন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ত।

নতুন এই প্রযুক্তি সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠেছে। এখন কথা বলার ফ্লো বা ধারাবাহিকতা ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে। আগের মতো প্রশ্ন-উত্তরের মাঝে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে না।

এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে জটিল ও অত্যাধুনিক গবেষণা। ব্যক্তির মস্তিষ্কের সেই অংশে, যেখান থেকে মুখের পেশি নিয়ন্ত্রিত হয়, বসানো হয়েছে ২৫৬টি ইলেকট্রোড।

গবেষকেরা তাকে স্ক্রিনে হাজারো বাক্য দেখিয়ে সেগুলো জোরে বলতে বলেন। সেসময় মস্তিষ্কের স্নায়বিক গতিবিধি রেকর্ড করা হয়।

এই রেকর্ডিং ব্যবহার করে একটি এআই মডেল তৈরি করা হয়। সেই মডেল শিখে নেয় কোন স্নায়বিক প্যাটার্ন কোন শব্দের সঙ্গে মেলে। তারপর সে অনুযায়ী কণ্ঠস্বর তৈরি করে।

এখানেই শেষ নয়। গবেষকেরা ওই ব্যক্তির পুরনো কণ্ঠস্বরের রেকর্ডিং দিয়েই তৈরি করেছেন কৃত্রিম কণ্ঠস্বর। ফলে তাঁর নিজের কণ্ঠেই শোনা যাচ্ছে কথা।

গানের ক্ষেত্রেও প্রযুক্তিটি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এআই সুর অনুযায়ী গান গাওয়ার কণ্ঠস্বর তৈরি করতে পেরেছে।

গবেষক ডেভিড ব্র্যান্ডম্যান জানান, ‘তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান একজন মানুষ। পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার পরও তিনি এখন পূর্ণ সময় কাজ করছেন ও স্বাভাবিকভাবে কথা বলছেন।’

এই প্রযুক্তি বাকপ্রতিবন্ধীদের জন্য নতুন আশার আলো হয়ে এসেছে। যদিও এখনো গবেষণা চলছে, তবে ভবিষ্যতে এটি আরও উন্নত হলে মানুষ চিন্তা করেই কথা বলে ফেলতে পারবে।

উল্লেখ্য, একই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান নিউরালিংক। সেখানে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিরা কেবল চিন্তা করেই কম্পিউটারে মাউস নাড়াতে পারছেন। গবেষকেরা বলছেন, এই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সীমাহীন।

 

সূত্র: নিউ সায়েন্টিস্ট।

রাকিব

×