ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

চুল পেকে যাওয়া, চর্মঘা আর কিডনি সমস্যা—সব থামিয়ে দিচ্ছে একটি উপাদান?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:২২, ২২ জুন ২০২৫

চুল পেকে যাওয়া, চর্মঘা আর কিডনি সমস্যা—সব থামিয়ে দিচ্ছে একটি উপাদান?

ছবি: সংগৃহীত

আপনি যদি বার্ধক্য, চর্মঘা বা কিডনি সমস্যা নিয়ে ভুগে থাকেন, তবে ভবিষ্যতে এই চিকিৎসা হতে পারে এক নতুন বিকল্প। এই গবেষণা এখনো বড় পরিসরে পুনরায় যাচাইয়ের অপেক্ষায় থাকলেও, এটি নিশ্চিতভাবেই চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

বার্ধক্যের আগেই বৃদ্ধ হওয়া—এ যেন এক ভয়াবহ বাস্তবতা। শরীরে দ্রুত বার্ধক্য ডেকে আনা ‘ওয়ের্নার সিনড্রোম’ রোগে ভুগে থাকেন এমন মানুষদের জন্য আশার আলো নিয়ে এলো জাপানের এক গবেষণা। ভিটামিন B3-এর একটি রূপ—নিকোটিনামাইড রিবোসাইড (NR)—এই ভয়াবহ জিনগত রোগের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কার্যকারিতা দেখিয়েছে।

চিবা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, NR গ্রহণে রোগীদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমেছে, ধমনীর কড়াকড়ি হ্রাস পেয়েছে, দীর্ঘস্থায়ী চর্মঘা সেরে উঠেছে এবং কিডনির কার্যকারিতাও কিছুটা রক্ষা পেয়েছে—তাও কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই।

ওয়ের্নার সিনড্রোম: বার্ধক্যের আগাম অভিশাপ

ওয়ের্নার সিনড্রোম এমন একটি বিরল জেনেটিক রোগ, যেখানে রোগীরা বিশের কোঠায় পৌঁছেই বৃদ্ধ বয়সের লক্ষণ বহন করতে শুরু করেন। চুল পেকে যাওয়া, টাক পড়ে যাওয়া, ছানি, ডায়াবেটিস, এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। চিকিৎসা প্রায় নেই বললেই চলে, আর জাপানে প্রতি ১০ লাখে ৯ জন আক্রান্ত হন এই রোগে।

গবেষণার পেছনে কী আছে?

মূল চাবিকাঠি এক অণু: NAD+। এটি শরীরের শক্তি উৎপাদন, কোষ মেরামতসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। ওয়ের্নার রোগীদের শরীরে এই NAD+-এর ঘাটতি দেখা যায়। NR নামের প্রাকৃতিক উপাদানটি শরীরে প্রবেশ করে সহজেই NAD+-এ পরিণত হয় এবং তা শরীরের ভেতরকার জৈব প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক করতে সহায়তা করে।

চিবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাসায়া কোশিজাকা এবং তাঁর সহকর্মীরা ২৬ সপ্তাহের একটি দ্বি-পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এই NR প্রয়োগ করেন। রোগীদের NAD+ রক্ত মাত্রা, ধমনীর অবস্থা, কিডনি কার্যকারিতা এবং চর্মঘা নিরীক্ষা করা হয়।

ফলাফল যা বলছে

NR গ্রহণের ফলে রক্তে NAD+ বৃদ্ধি পেয়েছে, চর্মঘার আয়তন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, এবং ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা বেড়েছে। একইসঙ্গে দেখা গেছে কিডনি থেকে ক্ষতিকর পদার্থের নিঃসরণ কমেছে, যা কিডনি রক্ষায় আশাজাগানিয়া ইঙ্গিত।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া?

গবেষকরা জানাচ্ছেন—গুরুতর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। ফলে এটিকে নিরাপদ বলাই চলে।

 

ভবিষ্যতের দিগন্ত

গবেষণার সহ-প্রতিবেদনকারী অধ্যাপক কৌতারো ইয়োকোতে আশা প্রকাশ করেন, “এটি শুধু ওয়ের্নার সিনড্রোম নয়, বরং অন্যান্য বার্ধক্যজনিত রোগের চিকিৎসাতেও নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।”

Niagen Bioscience-এর গবেষণা পরিচালক ড. ইয়াসমিন এনক্রুমা-এলি বলেন, “এই গবেষণা প্রমাণ করেছে যে NAD+ পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে বহু অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে কার্যকরভাবে রক্ষা করা সম্ভব। এটি দুর্লভ ও অবহেলিত রোগের চিকিৎসায় বড় পদক্ষেপ।”

যেখানে ওয়ের্নার সিনড্রোমের মতো রোগে এতদিন চিকিৎসা ছিল প্রায় অনুপস্থিত, সেখানে এই গবেষণা রোগীদের জন্য নয় শুধু, পুরো longevity বা দীর্ঘায়ু বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেই এক যুগান্তকারী সাফল্য হয়ে উঠতে পারে।

Mily

×