
যশোর জেলার শার্শা উপজেলার মাটিপুকুরিয়া গ্রামের প্রধান সড়কটি যেন স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া পায়নি। লাউতাড়া স্কুল থেকে শুরু হয়ে কিছুটা মাঠঘেরা প্রান্ত ধরে মাটিপুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এই রাস্তাটিতে কোথাও হাঁটুসমান কাদা, কোথাও অগভীর পুকুরের মতো জমে থাকা পানি। যেন ধান চাষের জন্য তৈরি করা হয়েছে জমি রাস্তা নয়।
বর্ষা মৌসুম এলেই সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তার অস্তিত্ব হারিয়ে যায় পুরু কাদার নিচে। তারপরও এই পথ দিয়েই প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে চলেন ৪-৫ গ্রামের শত শত মানুষ শিশু, শিক্ষার্থী, কৃষক, গর্ভবতী নারী কিংবা রোগী। পা পিছলে পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে।
স্থানীয় নারী খাদিজা খাতুন বলেন, “বর্ষা এলে আমরা ভয় পাই। গর্ভবতী নারী বা অসুস্থ রোগীকে নিতে চাইলে ভ্যান চলে না, অ্যাম্বুলেন্স তো দূরের কথা। কাঁধে করে নিয়ে যেতে হয়। আমাদের যেন কেউ দেখেও না, জানেও না।”
লাউতাড়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মারিয়া জানায়,“জুতা পরে হাঁটলে কাদায় আটকে যায়। বাধ্য হয়ে জুতা খুলে হাতে নিয়ে যাই মাদ্রাসায়। জামা-কাপড়ও সব ভিজে যায়। একটু বৃষ্টি হলেই চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে।"
স্থানীয় যুবক ইব্রাহিম খলিলের কণ্ঠে ক্ষোভ, "হাতে জুতা নিয়ে হাঁটি। বাবারা সন্তানদের কোলে করে স্কুলে নিয়ে যাই কাদার ভেতর দিয়ে। সরকার বদলেছে, নেতা বদলেছে, কিন্তু মাটিপুকুরিয়া গ্রামের রাস্তার কোনো পরিবর্তন হয়নি। যুগের পর যুগ ধরে তাদের এই প্রধান সড়কটি অবহেলিত। নির্বাচন আসলে প্রার্থীরা কথা দেন, কাজ হয় না কিছুই। নির্বাচনের পরে এই রাস্তার খবরও রাখেন না কেউ।"
গ্রামবাসীদের প্রশ্ন স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও একটি রাস্তা পাকা হয়নি কেন? প্রতি বছর বরাদ্দ হয় কোটি কোটি টাকা। তবে কেন সেই টাকা ছুঁয়ে না যায় মাটিপুকুরিয়ার মতো গ্রামের জীবন?
একটি রাস্তা কেবল পথ নয়, এটি একটি এলাকার স্বপ্ন, সম্ভাবনা ও উন্নয়নের চাবিকাঠি। মাটিপুকুরিয়া গ্রামের মানুষ সেই চাবির খোঁজে যুগ যুগ ধরে অপেক্ষা করছেন। তারা চায় না বিলাসিতা, চায় না অগ্রাধিকার—তারা চায় শুধু একটি চলাচলের উপযোগী রাস্তায় হাঁটতে। এই ন্যূনতম চাহিদাটুকু পূরণ না হলে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন কেবল কাগজে-কলমেই থেকে যাবে।
আফরোজা