ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

চোখ নেই, তবুও শব্দে বোঝেন গাড়ির রোগ—হোসেন আলীর বিস্ময়কর গল্প

মোঃ তানভীর হাসান,কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার,মঠবাড়িয়া,পিরোজপুর

প্রকাশিত: ০১:১৯, ২৩ জুন ২০২৫

চোখ নেই, তবুও শব্দে বোঝেন গাড়ির রোগ—হোসেন আলীর বিস্ময়কর গল্প

ছবি: জনকন্ঠ

পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া পৌর শহরের কে এম লতিফ সুপার মার্কেটের একটি ছোট্ট গ্যারেজে দেখা মেলে এক বিস্ময়কর মানুষের নাম হোসেন আলী। তিনি পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তিহীন, কিন্তু শব্দ শুনেই বুঝে ফেলেন মোটরসাইকেলের সমস্যাটা কোথায়। তারপর নিখুঁতভাবে সারিয়ে তোলেন যানবাহন। চোখ নেই, কিন্তু আছে অভিজ্ঞতা, স্পর্শ আর যন্ত্রপাতির আওয়াজ বিশ্লেষণের অভাবনীয় দক্ষতা।

৩০-৩৫ বছর আগে ঢাকা থেকে মঠবাড়িয়ায় এসে মোটরসাইকেল ও জেনারেটর মেরামতের কাজ শুরু করেন হোসেন আলী। ৯ বছর বয়সে ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে হাতেখড়ি হয়েছিল তার। তখন থেকেই শব্দ শুনে যন্ত্রপাতির সমস্যা চিহ্নিত করতে পারতেন। দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় হয়ে ওঠেন একজন পারদর্শী মেকানিক, যার হাতে গড়ে ওঠে মঠবাড়িয়ার প্রায় সব মেকানিক।

কিন্তু ২০১৫ সালের শেষ দিকে একটি মর্মান্তিক ঘটনা তার জীবনকে পাল্টে দেয়। ব্রেন স্ট্রোকের কারণে চোখে গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসার অভাবে ধীরে ধীরে হারান দৃষ্টিশক্তি। এরপরেও থেমে থাকেননি তিনি। ছোট্ট একটি দোকান ভাড়া নিয়ে আবারও শুরু করেন মেরামতের কাজ।

হোসেন আলী বলেন,"দৃষ্টি না থাকলেও আমি শব্দ শুনেই বুঝে যাই কোথায় সমস্যা। অনেকে অবাক হয়ে যায়, কিন্তু আমি কাজটা ভালোবাসি। এখন আগের মতো রোজগার নেই, সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। সরকার যদি সাহায্য করতেন,পরিবার চালাতে আমার অনেক সাহায্য হতো। 

তার প্রতিদিনের আয় ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে থাকলেও, অনেক দিনই খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়। তার চিকিৎসার জন্য বছরে দুইবার ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের ইনজেকশন দরকার, কিন্তু টাকার অভাবে এখন আর চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে না।

তাঁর স্ত্রী সালমা বেগমের একটি কিডনিও নষ্ট, যার চিকিৎসা ব্যয়বহুল। দুই সন্তান নিয়ে চলছে সংগ্রামী জীবন। প্রতি তিন মাসে সরকার থেকে ২,৫০০ টাকার প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও তা দিয়ে চলা সম্ভব নয়।

হোসেন আলীর ছেলে মো. তুহিন বলেন, "বাবা এখনো আমাদের শেখান। শব্দ শুনে বলেন কোন যন্ত্রাংশে সমস্যা, আমরাও সেই অনুযায়ী কাজ করি। সরকার যদি বাবার চিকিৎসার জন্য একটু সহযোগিতা করতো, তাহলে হয়তো তিনি আবার কিছুটা দেখতে পেতেন।"

তার গুণমুগ্ধ এক গ্রাহক ইমন শেখ বলেন,"অনেক দিন ধরে আমি তার কাছে মোটরসাইকেল সারাতে আসি। তিনি অন্ধ তা বোঝাই যায় না তার কাজ দেখে। নিখুঁতভাবে কাজ করেন।"

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শফিকুল আলম বলেন, "হোসেন আলী মঠবাড়িয়ার একজন স্বনামধন্য মেকানিক। তিনি এখন প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আছেন। ভবিষ্যতে যদি তাকে অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনা যায়, সমাজসেবা অফিস থেকে আমরা প্রচেষ্টা চালাবো।"

Mily

×